শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

বেলকুচিতে রইল না কোনো সিনেমা হল : নিউ রজনীগন্ধায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) থেকে : করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের যে শিল্পটি বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেটি আমাদের চলচ্চিত্র এমনটা বললে ভুল হবে না। বলা হয়ে থাকে একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের অন্যতম মাধ্যম চলচ্চিত্র। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সময়ের পরিবর্তনে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমরা হারিয়ে বসেছি।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে সিনেমা হলের গোড়াপত্তন হয়। নব্বই দশকে বাংলা সিনেমার স্বর্ণালি যুগ ধরা হয়। সেই সময়ে বেলকুচির সিনেমা হলগুলো প্রধান বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৯টি। বেলকুচি তাঁত প্রধান অঞ্চল হওয়ার সুবাদে এখানে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষরা শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনের কাজ করত। পুরো সপ্তাহ কাজ শেষে ছুটির দিনে তাদের ভালো লাগার উপলক্ষ ছিল দল বেঁধে সিনেমা দেখা। বাঙালির বিভিন্ন উৎসবে (ঈদ, পূজা, বৈশাখ) নতুন চলচ্চিত্র বরাবরই ভিন্ন মাত্রা যোগ করত। বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছবির প্রমোশনে বেলকুচির সিনেমা হলগুলোতে আসতেন। বেলকুচিতে জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলোর তালিকায় ছিল নিউ রজনীগন্ধা, সাগরিকা, রেহানা, জলসা ও সোহাগ। সর্বশেষ অবশিষ্ট ছিল সাগরিকা, নিউ রজনীগন্ধা সিনেমা হল। সাগরিকা সিনেমা হল গত বছরের শেষের দিকে কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে দেয়।
২০২১ সালে এসে সাগরিকা সিনেমার দেখানো পথে হেঁটেছে নিউ রজনীগন্ধা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। বেলকুচির সর্বশেষ সিনেমা হলটির অবকাঠামো ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে ঠিকাদারের কাছে। হলটি ভেঙে নির্মিত হবে বাণিজ্যিক ভবন।
এ ব্যাপারে সিনেমা হলটির কর্মচারী আল আমিন জানান, বর্তমানে করোনা মহামারিসহ সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় আমাদের মালিকের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকায় মালিক পক্ষ আমাদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারে না। আমাদের অনেকেই সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে অন্য পেশায় চলে গেছে। আবার কেউ কেউ বেকার জীবনযাপন করছে।
চলচ্চিত্রসহ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন নিউ রজনীগন্ধা সিনেমা হলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল। তিনি জানান, ২ যুগের বেশি সময় ধরে সিনেমা হলের সঙ্গে পথচলায় কত উত্থান-পতন দেখেছি। হল মালিক, কর্মচারীদের কাছে ‘হাউসফুল’ শব্দটা যে কত আনন্দের সেটা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সোনালি অতীত এখনো স্মৃতিতে দাগ কাটে। করোনাকালে তো সিনেমা হল বন্ধই। কিন্তু গত ৫ বছরে আমাদের সিনেমার মান বা বাজার নিম্নগামী। তাছাড়া অনলাইন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে পাওয়া যায়। যার ফলে সিনেমা হল একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শক হারায়। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে আমাদের চলচ্চিত্রের আজকের এ অবস্থান।
আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, কোনো সংগঠন পাশে দাঁড়ায়নি, প্রণোদনাও পাননি। বরং দেড় কোটি টাকা লোকসানের মুখে এই বয়সে ব্যবসা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়ে সিনেমা হল বন্ধ করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত!
এ চিত্র শুধু সিরাজগঞ্জেই নয়, দেশের অনেক এলাকার হলগুলোর পরিস্থিতি একই। কল্পনা বা স্বপ্নের মতো লাগলেও দেশে দুই যুগের ব্যবধানে বন্ধ গেছে ১ হাজার ২০০-এর ওপরে সিনেমা হল। হল মালিক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, দেশে নব্বই দশকে ১ হাজার ৪৩৫টি সিনেমা হল ছিল। সেখান থেকে বর্তমানে হলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭০টিতে।
বন্ধ হয়ে গেছে ১ হাজার ২৬৫টি সিনেমা হল। চালু থাকা ১৭০টির ভেতর নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শন হয় ১১০টি সিনেমা হলে। বাকি ৬০টিতে অনিয়মিতভাবে সিনেমা প্রদর্শিত হয়।
সম্পূর্ণ বাংলাদেশি একটা সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বিশ্ব দরবারে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দ্যুতি ছড়াল। সেখানে আমাদের চলচ্চিত্র হারিয়ে যাবে এটা বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আমাদের চলচ্চিত্র আবার সগৌরবে আলো ছড়াবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়