হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

স্বেচ্ছাশ্রমে গেটকিপারের দায়িত্ব নিলেন দুই বন্ধু

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে নিজ অর্থায়নে রেলগেট নির্মাণ করে স্বেচ্ছাশ্রমে গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন কলেজপড়–য়া আনোয়ার হোসেন ও তার বন্ধু মামুন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও তারা দুর্ঘটনা থেকে পথচারীদের রক্ষা করতে স্বেচ্ছাশ্রমে পড়াশুনার পাশাপাশি এ কাজ বেছে নিয়েছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশ দিয়ে তৈরি নবনির্মিত ‘আঞ্চলিক
মহাসড়ক’ এখন বিনোদনপ্রেমীদের নতুন স্পটে পরিণত হয়েছে। এতে করে প্রতিদিন এ মহাসড়কে শত শত বিনোদনপ্রেমী ঘুরতে আসেন। আবার তারা অনেকেই রেললাইনের পূর্ব পাশে দর্শনীয় বেরাহোসন বড় মসজিদ দেখতে আসেন। সড়কের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেরাহোসন, শিমুলিয়া, পোতা, তেঘর, জামগ্রাম, তিলাবাদুরি, ভোঁপাড়া গ্রামের হাজার হাজার লোকের শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশন ও আত্রাই উপজেলা সদরসহ নওগাঁ-শান্তাহার শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এক মাত্র সংযোগ সড়ক এটি। এ সড়কটি দিয়েই রেললাইন পারাপারের একমাত্র পথ হওয়ায় এবং এখানে কোনো রেলগেট না থাকায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ অবস্থায় শিমুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও পার্শ্ববর্তী বেরাহোসন গ্রামের মামুন যাত্রীদের রেললাইন পারাপারে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দুই বন্ধু নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে রেললাইনের দুর্ঘটনা এড়াতে লাইনের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে গতিরোধক ব্যারিয়ার তৈরি করে রোদ বৃষ্টির মাঝে স্বেচ্ছাশ্রমে গেটকিপারের কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্রাম ও রোদবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে আশপাশে কোনো ছাউনি নেই।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় আনোয়ার ও মামুনকে বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয়। এরপরও থেমে নেই তাদের অদম্যতা। আনোয়ার রেলক্রসিংয়ের গেট কিপারের কাজের পাশাপাশি আত্রাই মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।
সরজমিনে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সঙ্গে শাহাগোলা ও আত্রাই গেটকিপারদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রেন আসার আগে গতিরোধক ব্যারিয়ার সিগন্যাল ফেলে শত শত পথচারীদের জানমাল রক্ষা করছেন।
তারা আরও জানান, পত্রপত্রিকাসহ গণমাধ্যমে দেখা যায়, রেললাইন পারাপারে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কথা মাথায় রেখেই তারা দুজন নিয়মিত গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল, দুপুর ও রাতে নির্দিষ্ট সময়ে এ রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। পড়াশুনার পাশাপাশি এ কাজটি বেছে নিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ছাইফুল ইসলাম জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার হাত থেকে সবাইকে বাঁচাতে দুই বন্ধুর এ উদ্যোগ সত্যিই প্রসংশনীয়। এখানে একটি স্থায়ী রেলগেট প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, আনোয়ার হোসেন ও মামুনের নিজ উদ্যোগে ব্যারিয়ার নির্মাণ করে স্বেচ্ছাশ্রমে গেটকিপারের দায়িত্বপালন করতে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে যাই! এখানে স্থায়ী একটি রেলগেট প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, দুই বন্ধুর পছন্দের এই চাকরি স্থায়ী হলে দরিদ্র পরিবার দুটির দুঃখ লাঘব হতো। এ ব্যাপারে আমি রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের শান্তাহার সিনিয়র সাব-এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আফজাল হোসেন বলেন, শাহাগোলা-মাধাইমুড়ি মাঝামাঝি স্থানে রেল লাইন পারাপারের জন্য জনগণের সুবিধার্থে একটি অস্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবর আবেদন করলে স্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করা সম্ভব বলেও তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়