হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

শিল্পকারখানা খুলছে আজ : চাকরি হারাবেন না শ্রমিকরা

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আজ রবিবার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হচ্ছে। তবে বিধিনিষেধের কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। সব শ্রমিকের পক্ষে কাজে আসা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় চাকরি রক্ষার সংকটে শ্রমিকরা। তবে যেসব শ্রমিক আজকের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারবেন না, তাদের চাকরি যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ অনুপস্থিতির কারণে কোনো মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার ঘোষণায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পোশাক শ্রমিকরা যে যেভাবে পারছেন ঢাকায় আসছেন। রিকশায়, ভ্যানে, পায়ে হেঁটে, ট্রাকে বা ট্রলারে- বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে ফিরছেন তারা।
আশপাশে বসবাসকারী শ্রমিকদের দিয়েই রবিবার রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালুর অনুরোধ করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে কারখানার মালিকদের তিনি বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারবেন না, তাদের চাকরিচ্যুত করবেন না। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে কর্মরত সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য করোনা টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। রপ্তানি বাণিজ্যের গতি ধরে রাখতে শ্রমিকদের শতভাগ টিকার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় করোনার টিকার ব্যাপারে সহায়তা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানদের আমরা ইতোমধ্যে আহ্বান করেছি।
শিল্পকারখানাকে কঠোর বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, এখন কাজের প্রচুর চাপ, আমাদের উৎপাদন দরকার। এ সময় আশপাশে থাকা শ্রমিকদের দিয়েই মালিকদের কারখানা চালুর অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো শ্রমিক যদি ঢাকায় আসতে না পারে তার চাকরি যাবে না। যদি এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তবে সংশ্লিষ্ট মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমি আজ (গতকাল) শনিবার সকাল থেকে অনেক মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কেউ ঢাকার বাইরের শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বলেননি। আমার মতে, তিন কারণে শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছেন। আমরা ঈদের সময় শ্রমিকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করতে বলেছিলাম। কিন্তু অনেকেই তা করেছেন। তাই কারখানা খোলার ঘোষণায় তারা হয়তো ভয়ে চলে আসছে। দ্বিতীয়ত, বেতনের সময় চলে আসছে। তারা হয়তো ভাবছে এ সময় কারখানায় না থাকলে বেতন পাবে না। তৃতীয়ত, কারখানাগুলোর কিছু কিছু লাইন সুপারভাইজার তাদের ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে হয়তো স্বউদ্যোগী হয়ে শ্রমিকদের ফোন করছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে কারখানা মালিকদের নমনীয়তা দেখাতে বলেছি। কোনো শ্রমিককে যেন চাকরিচ্যুত করা না হয়।
গত শুক্রবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখা হলো। ফলে রবিবার থেকে গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। সরকারের এমন ঘোষণায় শুক্রবার থেকেই সড়কে শ্রমিকদের ঢল নামতে থাকে। গতকাল শনিবারও দেখা যায় সড়কে প্রচণ্ড চাপ। কাভার্ড ভ্যান, মিনি ট্রাক, রিকশা, ভ্যানে করে শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে ফিরছেন।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিবাদ : এদিকে একদিনের নোটিসে গণপরিবহন ও নিরাপত্তা ছাড়া কারখানা খুলে শ্রমিক হয়রানির প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। আকস্মিক ঘোষণায় কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যফ্রন্ট, গার্মেন্টস শ্রমিকফ্রন্ট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা কারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন, টিকা ও ঝুঁকিভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় উদ্যোগে সব শ্রমিক এলাকায় যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানান। দুপুর সাড়ে ১২টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে, আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শ্রমিকাঞ্চলে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
এক বিবৃতিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ দিয়ে আবার ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের সমস্যায় ফেলেছে।
একই অভিযোগ করে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, এর ফলে শ্রমিকরা সুদূর গ্রাম থেকে তড়িঘড়ি করে আসতে প্রচুর সমস্যায় পড়বেন। তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তারা শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ভাতা ও ঝুঁকিভাতা দেয়ার দাবি জানান। এক বিবৃতিতে বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও কঠোর লকডাউনে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত চরম অবিবেচনাপ্রসূত ও অমানবিক। তারা মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের একতরফা অবস্থানের নিন্দা জানিয়ে শিল্পকারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ও টিকা এবং ঝুঁকিভাতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়