হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

বর্ষণে বিপর্যস্ত কক্সবাজার : ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সড়ক ভাঙল ৩০ কিলোমিটার

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে কক্সবাজার জেলার ১০ হাজার ১৫ হেক্টর কৃষিজমি ও মাছের ঘের। ভেঙেছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ভেঙেছে অসংখ্য বেড়িবাঁধ, ডুবেছে বাড়িঘর। ভেসে গেছে হাজার হাজার লোকের স্বপ্ন। ঝরে গেছে ২২টি তাজা প্রাণ। আর এই বিপর্যয় ঠেকাতে প্রশাসন পানিবন্দি ও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, জেলায় চলতি মাসে ৯৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ দিনেই ৩৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৮টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই সব ইউপির ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বানের পানিতে বিলীন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৬ হেক্টর মৎস্য ঘের ও পুকুর। পানিতে নিমজ্জিত আছে ৫ হাজার ৭৫৯ হেক্টর চাষের জমি।
সূত্রটি আরো জানায়, গত ২৭ জুলাই পাহাড়ধসে ও বানের পানিতে ৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। একই দিন মহেশখালি বাড়ির দেয়াল চাপায় এক নারী ও টেকনাফে পাহাড়ধসে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। পর দিন ২৮ জুলাই পাহাড়ধসে টেকনাফের হ্নীলায় একই পরিবারের ৫ জন ও মহেশখালিতে একজনের মৃত্যু হয়। একই দিন উখিয়ায় বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার এবং ঈদগাঁওতে বানের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২৯ জুলাই চকরিয়ায় এক শিশু উঠানে জমা পানিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। ৩০ জুলাই বানের পানিতে খেলতে গিয়ে পেকুয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, জেলার ৮টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নের ৪৮৯টি পুকুর যার আয়তন ২১৬ হেক্টর ও ৭৬২টি ঘের / খামার যার আয়তন ৪ হাজার ৫০ হেক্টর বানের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ হাজার ৭৬৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন বলেন, অনেক ফসলি জমিতে এখনো পানি রয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টিও থামেনি। তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় সম্ভব হয়নি। তবে টানা বর্ষণে এখনো পর্যন্ত জেলায় আউশ ধান ৪৯১ হেক্টর, আমনের বীজ তলা ৭৬২টি ও আমন ধান ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর এবং সবজির ৩১২ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ২৪ হেক্টর পান চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিআইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, বর্ষা গেলেই ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। তবে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৮ উপজেলার ৪০ টি রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংস্কারে ৬ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, টানা বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সেটি পানি পুরো নেমে যাওয়ার পর বলা যাবে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে চকরিয়ায়। সেখানে ৪টি পয়েন্টের ১৮০ মিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
তাই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র মিলেনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কক্সবাজারের ৫৭৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রই প্রস্তুত রয়েছে। তৎমধ্যে ৩৮ টিতে ৮ হাজার ৫৬৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া ৮ টি উপজেলায় ২০০ টন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ হাসান বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত কক্সবাজার। পাহাড় ধস, বাড়ির দেয়াল চাপা ও পানিতে ডুবে শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার ৫২ টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবেছে। পানিবন্দী আছে ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবার। তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০০ টন চাল ও ১৫ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে জমা থাকা ত্রাণও দেয়া হয়েছে কয়েকটি উপজেলায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়