হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

প্রথাবিরোধী রাজনৈতিক নেতা ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ সাবেক মন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুবার্ষিকীতে এ রোটারি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অবিভক্ত জেলা গভর্নর মরহুম এল কে সিদ্দিকীর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। আবুল হাসনাত লুৎফুল কবির সিদ্দিকী ওরফে এল কে সিদ্দিকী একজন ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের নেতা ছিলেন। দল-মত-নির্বিশেষে সর্বমহলে তার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে সীতাকুণ্ডবাসী দুজন মন্ত্রী পেয়েছিল। এদের একজন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন-বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী মরহুম এম আর সিদ্দিকী। আরেকজন হলেন তারই আত্মীয় জিয়া সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী। তিনি সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে ৪ বার বিএনপির এমপি নির্বাচিত হন এবং দুবার মন্ত্রী ও একবার ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এম আর সিদ্দিকীর পর জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন এল কে সিদ্দিকী। কিন্তু তার মৃত্যুর পর জাতীয় পর্যায়ে এখনো সীতাকুণ্ডের আর কোনো রাজনৈতিক নেতা ওঠে আসেননি।
ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিকী ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী ভিন্ন প্রকৃতির রাজনৈতিক নেতা। সব প্রকার অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির বিপরীত শিবিরে ছিল তার শক্তিশালী অবস্থান। শুধু কথা নয়, তিনি কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ এ মানুষটি ছিলেন আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার মধ্যে কোনো ভণ্ডামী ও বহুরূপিতা ছিল না। কথা-বার্তা ও আচার-আচরণে আভিজাত্যের প্রভাব থাকলেও তিনি যা বলতেন; লুকোচুরি না করে স্পষ্ট ভাষায় বলতেন। ছলচাতুরি কিংবা মোসাহেবি তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কাউকে ঘোরানোর বদভ্যাস তার ছিল না। মন্ত্রী-এমপি থাকাকালীন তিনি কখনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দিতেন না। নিজ দলের সন্ত্রাসীরাও তার কাছে যাওয়ার সাহস পেত না। আশির দশকের গোড়ায় তিনি মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ডের বড়দারোগাহাট থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী ম্যারাথন র‌্যালির আয়োজন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। দলীয় হাইকমান্ডের অন্যায় প্রস্তাবে সম্মত হননি বলে তাকে বিএনপির সর্বশেষ সরকারের মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত হারাতে হয়- এমন জনশ্রæতিও রয়েছে। যে কোনো বিষয়ে নীতি-নৈতিকতার অবস্থান থেকে কখনো তিনি একচুলও নড়েননি। সবকিছু মিলিয়ে তিনি ব্যতিক্রমধর্মী ও অনুকরণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন
ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী ১৯৩৯ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ রহমতনগর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল মনসুর লুৎফে আহমেদ সিদ্দিকী। ১৯৫৪ সালে তিনি সীতাকুণ্ড আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। ঢাকার আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০-৬১ সালে তিনি একই কলেজের ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি প্রায় ৬ বছর গ্যামন্স ইস্ট পাকিস্তান লিমিটেডে কাজ করেন। অতপর তিনি ১৯৬৬-৭০ সাল পর্যন্ত ‘স্বল্পমূল্যে গৃহায়ন’ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে লিবিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বিদ্যুৎ,পানিসম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে তিনি সেচ, পানিসম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে প্রায় ৩ বছর তিনি অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২-৯৩ রোটাবর্ষে তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮০-এর গভর্নর ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদেরও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। ১৯৯২ সালে তিনি সমাজসেবায় শেরেবাংলা পদক, মওলানা ভাসানী জাতীয় পুরস্কার ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, ভাটিয়ারি বিজয় স্মরণী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সীতাকুণ্ড বালিকা মহাবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কোষাধ্যক্ষ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ
প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়