হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

নোয়াখালী : অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের খানপুর দারুল ফালাহ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বিধিবহির্ভূত নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, দারুল ফালাহ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. বদরুদ্দোজা গভর্নিং বডির নিয়মিত সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া ২০২১ সালের ১ এপ্রিল পত্রিকায় গ্রন্থাগারিক পদে একজন ও অন্যান্য পদে কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে গ্রন্থাগারিক পদে মো. আবুল কালাম ও মো. শরিয়ত উল্লাহসহ কয়েকজন আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণের পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মো. শরিয়ত উল্লাহকে ২০১৪ সালের ৮ জুলাইয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
ভুক্তভোগী আবুল কালাম বলেন, ২০১৪ সালের ৮ জুলাই শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে গ্রন্থাগারিক পদে আবেদন আহ্বান করা হয়নি। ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নসংক্রান্ত অফিস আদেশে গ্রন্থাগারিক পদের বিপরীতে কোনো প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয়নি। গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী গোপন রেখে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর মো. শরিয়ত উল্লাহকে নিয়োগ দেখিয়ে সম্প্রতি তার নিয়োগপত্র ইস্যু এবং ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর তারিখ উল্লেখ করে মো. শরিয়ত উল্লাহর কাছ থেকে যোগদানপত্র গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ মো. বদরুদ্দোজা।
ভুক্তভোগী আবুল কালাম আরো বলেন, মো. শরিয়ত উল্লাহকে গ্রন্থাগারিক পদে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর নিয়োগ দেখালেও চলতি বছরের ৬ জুন জনতা ব্যাংক চৌমুহনী শাখায় তার নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, দুদক নোয়াখালী, বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
আমানত উল্লাহ, জিল্লুর রহমান, মো. আবদুল কাদের, আবদুস সোবহান ও জামাল উদ্দিনসহ মাদ্রাসার অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, খানপুর দারুল ফালাহ ফাজিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় অসাধু উপায়ে যোগদানের পর থেকে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে গভর্নিং বডি গঠন, প্যাটার্নবহির্ভূত পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনপূর্বক এপি স্কেল প্রদান, বিধিবহির্ভূত দণ্ডারোপ, মালিকানাবিহীন ব্যক্তির কাছ থেকে জাল দলিল সৃজনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্ত চলাকালীন মাদ্রাসার অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে সব অভিযোগের দায় স্বীকার করেন অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে সরকারি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৫ টাকা আত্মসাতের তদন্ত করছে দুদক।
অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানান, মাদ্রাসার গভর্নিং বডি নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলছে। যার কারণে নিয়োগসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ডে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তদন্ত শেষ হলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে মো. শরিয়ত উল্লাহকে গ্রন্থাগারিক পদে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বেগমগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গাউসুল আজম পাটোয়ারী জানান, খানপুর দারুল ফালাহ ফাজিল মাদ্রাসায় গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লকডাউন শেষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেয়ার এখন কোনো সুযোগ নেই। এমন হয়ে থাকলে তা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত।
এদিকে অধ্যক্ষ মো. বদরুদ্দোজার সীমাহীন দুর্নীতি ও বিধিবহির্ভূত নিয়োগ বাণিজ্য এবং জালিয়াতির নিরপেক্ষ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়