হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

জীবনের শেষ সময়টুকু শহরবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চাই : মো. আনোয়ার আলী মেয়র, কুষ্টিয়া পৌরসভা

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : মো. আনোয়ার আলী, মেয়র কুষ্টিয়া সদর পৌরসভা। বয়স প্রায় আশি। এবার নিয়ে তিনি পঞ্চমবারের মতো কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে মাঝে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছর বাদে তিনি টানা ২৭ বছর কুষ্টিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ও বর্তমানে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। জেলার আওয়ামী রাজনীতিতিতেও তিনি সবার সিনিয়র। ১৯৭৫ সালের পর ভেঙে পড়া কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগকে তিনি শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন। আর তাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বয়োজ্যেষ্ঠ, দলীয় নেতা হিসেবেই তিনি বিশেষ পরিচিত।
পঞ্চমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, কতটুকু করতে পেরেছেন, আর কী করবেন- ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নে তিনি কিছুটা চুপ থেকে বললেন, জীবনের অনেকটা সময় পার করে এসেছি। রাজনীতি করতে যেয়ে জীবনের সব সাধ, আহ্লাদকে উপেক্ষা করেছি। কখনো ক্ষমতার লোভে নিজের আদর্শকে বিলিয়ে দেইনি। এজন্য আমাকে অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে। এখন বয়স হয়েছে। জীবনের শেষ সময়টুকু কুষ্টিয়া শহরবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চাই।
আনোয়ার আলী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মতো আমারও কিছু স্বপ্ন, কিছু আশা ছিল, আছে। তা পূরণে আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব। জনগণের বাইরে থেকে রাজনীতি করে সব কাজ করাও সম্ভব নয়। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, ভালো জানেন। তাই এ নিয়ে ৫ম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত করেছেন। ভবিষ্যতে আমার পরিকল্পনা রয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভাকে একটি আধুনিক

স্বনির্ভরশীল পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। এখানে মানুষ সেবা পাবে এক জায়গায়। একটি প্রত্যয়নপত্র, একটি সার্টিফিকেট নিতে এলে এক বসাতেই যাতে পায় সে পরিকল্পনা আমার রয়েছে। এখন করোনার কারণে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা, মহামারি ঠেকাতে সরকারকে এখন সময় দিতে হচ্ছে বেশি। এসব নিয়ে ভাববার, কথা শোনার সময় নেই। তবে করোনা সংকট কেটে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা থাকবে এ স্বপ্ন পূরণের। এ কথা বলতে পারি। আর ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতেই বলা ভালো।
গত পাঁচ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। এবার আরো ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। তারপরও আমরা অনেকে বলি আধুনিক, অনেকে বলে ডিজিটাল আবার আলোকিত, কিন্তু আমি বলি আধুনিক হোক আর ডিজিটাল হোক সব ধরনের নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন একটি স্বনির্ভরশীল পৌরসভা গড়তে চাই।
ভোরের কাগজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী। তিনি বলেন, আমরা তো কত কিছুই বলি, নির্বাচিত হলে এটা দেব, সেটা দেব, এই করব আরো কত কী, কিন্তু এলে এগুলো ঠিক নয়, নাগরিক সুবিধা বলতে যেটা দরকার সেটাই দিতে আমি চেষ্টা করব। তিনি বলেন, আমার মামা ম. আ. রহিম ছিলেন স্বাধীনতা-পরবর্তী কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার মামা, নানা মানুষের সেবা করতেন এবং কারো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। নানার কাছ থেকেই আমি মানুষের সেবা করা শিখেছি।
মেয়র বলেন, আমি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। একজন অন্যায়কারী, সন্ত্রাসী সমাজ এবং রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে। কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে মারলে কিংবা মাদক নিয়ে ধরা পড়লে আমি তাদের ব্যাপারে কখনো সুপারিশ করি নাই, পাশাপাশি নারীঘটিত বিষয়সহ চুরি-ডাকাতির বিষয়েও না। তিনি বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং নারীদের জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভা কাজ করে চলেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে কুষ্টিয়া পৌরসভা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে পানির বিল, ট্যাক্সসহ প্রায় সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। ভবিষ্যতে এগুলোর পুরো প্রক্রিয়াই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে। আগে আমাদের লোক গিয়ে টাকা নিয়ে আসত। আর এখন বিল গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে জমা দিয়ে আসেন। ভবিষ্যতে এগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে কুষ্টিয়া পৌরসভার কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
মেয়র বলেন, আগে মনে করতাম আগের জনপ্রতিনিধিরা এসে পৌরসভাকে উন্নত করেছেন। কিন্তু ’৯০-এর দশকে আমি মেয়র হওয়ার পর বুঝলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্বিক উন্নয়ন দরকার। রাস্তাঘাটের অবস্থা ছিল করুণ। গত দুই যুগ ধরে কুষ্টিয়া পৌরসভাকে আমি তিল তিল করে সাজিয়েছি, সাজাচ্ছি। তিনি বলেন, পৌরবাসীর জন্য পানির পাম্প চালু করা হয়, তাও আমার আমলে। তবে এখন যে পানি সরবরাহ করা হয় তা চাহিদা পূরণ করে না। তাই নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, পৌর শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। আর রাস্তাঘাটের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরো আধুনিকায়ন করা হবে। যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি সে কাজ যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি তাই পৌরসভাতেই বেশি সময় দিয়ে থাকি। সংস্কৃতি ও খেলাধুলা অঙ্গনে আমি সর্বদা ছিলাম আছি।
উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। ওয়ার্ড সংখ্যা ২১টি। ৪২ দশমিক ৭৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এর লোক সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার।
আপনাদের সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা পেলে আগামী দিনে ১৫২ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া পৌরসভাকে একটি অত্যাধুনিক, পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু সহনশীল ও বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নততর পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পৌরসভার সব ওয়ার্ডে প্রয়োজন অনুসারে রাস্তা, ড্রেন, সড়কবাতি ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করব।
পরিশেষে মেয়র আনোয়ার আলী ভোরের কাগজকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়