চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগীর চাপ। হাসপাতালে হাসপাতালে চলছে আর্তনাদ। সাধারণ শয্যা থেকে শুরু করে কেবিন, আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেনের সংকট চরমে। ‘সিট খালি’ পাওয়ার আশায় আইসিইউর সামনে বসে আছেন ভর্তির অপেক্ষায় থাকা রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আহাজারি। কুরবানি ঈদের পর থেকেই করোনার প্রকোপ বেড়ে একের পর এক হচ্ছে নতুন রেকর্ড। দিন দিন বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন রোগীর স্বজনরা। নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর সাইরেন বাজিয়ে আসছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ঢুকেই শয্যা খালি আছে কিনা জানতে চাইছেন। শয্যা খালি না পেয়ে ছুটছেন অন্য হাসপাতালে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালের সামনে প্রতিদিনই মুমূর্ষু রোগীর ভিড় বাড়ছে। করোনা আক্রান্তদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০০ শয্যার বিপরীতে ৩০৮ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫০ শয্যায় ৪৫ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৪০ শয্যায় ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ১৫২ শয্যায় ১৫২ জন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ৫৪ শয্যায় ৫৪ জন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০ শয্যায় ১০০ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৭৫ শয্যায় ৭৫ জন, পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে ৭০ শয্যায় ৭৭ জন, মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে ৫৭ শয্যায় ৫৭ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ৫০ শয্যায় ৫৩ জন এবং চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালে ৫০ শয্যায় ৫৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট দেখা দিলেও চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, কোনো রোগীকে ফেরত দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে ফ্লোরে বেড বিছিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে থেকে পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের দুই হাজার ১৩৪ নমুনা পরীক্ষায় ৭৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৬৪৯ জন নগরের এবং ৯৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। একই সময়ে মারা গেছেন চারজন করোনা রোগী। এরমধ্যে নগরের তিনজন ও উপজেলার একজন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৯৬২ জনের। এরমধ্যে ৫৭৭ জন নগরের, ৩৮৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ৮১ হাজার ৯৫৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে নগরে ৬১ হাজার ৫৫৬ জন। উপজেলায় ২০ হাজার ৪০৩ জন।
জুলাইয়ে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু ছাড়িয়েছে আড়াই’শ। কয়েক মাস আগে করোনায় সংক্রমণ হার ছিল ১০ থেকে ১৩ শতাংশ। জুন মাসের সংক্রমণের হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ থাকলেও জুলাইয়ে তা ৩৪ থেকে ৩৯ শতাংশের বেশি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।