বিষাক্ত কেমিক্যালে নামি ব্র্যান্ডের নকল পানীয় তৈরি : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ২

আগের সংবাদ

সংক্রমণ বাড়ার পথ খুলল!

পরের সংবাদ

ঝুঁকি নিয়েই উঠল লকডাউন

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নজরদারির পরামর্শ ** দায়িত্ব নিতে হবে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে **
আতিকুর রহমান : বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জীবন-জীবিকার স্বার্থে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। আজ থেকে গণপরিবহনসহ সব ধরনের পরিবহন চলবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে মানুষের যাতায়াত এবং ছোটখাটো সমাবেশও হবে। আর এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই উঠে গেল লকডাউন। আর লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আত্মরক্ষার জন্য নিজেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের সিদ্ধান্তের হতবাক হলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, আত্মরক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিক সচেতন না হলে কারো কিছু করার নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে বাধ্য করতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বিশেষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২২ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। ২৩ জুলাই থেকে ফের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। ওই সময় সরকারি-বেসিরকারি অফিসের পাশাপাশি সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর ঈদে সারাদেশে সামাজিক অনুষ্ঠানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ঈদের পশুর হাট এবং ঈদের নামাজের জামাতে লোকসমাগমের পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লকডাউন তুলে নেয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করে গতকাল এক বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেছেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকার কুরবানির ঈদের কারণে লকডাউন তুলে নেয়ায় পরিস্থিতি জটিল রূপ নিতে পারে। এই বিধিনিষেধ শিথিল করা সাপেক্ষে আমাদের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চলতি জুলাই মাসকে অত্যন্ত কঠিন বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জুনে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, আর জুলাইয়ের ১৪ দিনেই আমরা এত রোগী পেয়ে গেছি। এই মাসের আরো ১৬ দিন বাকি রয়েছে। যেহেতু সংক্রমণের মাত্রা এখন অনেক বাড়ছে, স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা যদি না নেয়া হয়, দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টানা এভাবে চলতে পারে। মৃত্যুও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এ রকম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন হলে দেশে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, লকডাউন এখন এভাবে উঠিয়ে দেয়ায় সবাই আবার রাস্তাঘাটে বেরুবে, অফিস-আদালতে যাবে, গণপরিবহনে চড়বে এবং বাজারে ভিড় বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে যত বেশি মানুষের মেলামেশা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে না, সংক্রমণ তত বেশি বেড়ে যাবে। সেজন্য ঝুঁকিটা তো থেকেই যাচ্ছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো কমেনি। এরই মধ্যে লকডাউন শিথিল করা হলো। যাদের সুরক্ষার জন্য লকডাউন দেয়া হলো তারা যদি এর গুরুত্ব না বুঝেন তাহলে বিপদ। লকডাউন শিথিলতার পেছনে

আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় কারণ আছে। কারণ যাই হোক নিজের সুরক্ষার বিষয়টি নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। পশুর হাট, ঈদের জামাত, পশু কুরবানি, গণপরিবহন এসবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জায়গা থেকে সংক্রমণ বাড়বে।? সরকারের ?পক্ষ থেকে এ বার্তাটি দেয়া উচিত যে, সংক্রমণ এখনো কমেনি। ঝুঁকি এখনো আছে। সাবধান না হলে সামনে বিপদ। মানুষের আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। তা না হলে করোনা ভাইরাসের মতো অতিমারি মোকাবিলা সম্ভব নয়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (?স্বাচিপ) সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান? বলেন, এ প্রজ্ঞাপনে আমরা বিস্মিত ও হতভম্ভ। সব খুলে দেয়া হলো ৯ দিনের জন্য। সরকার বলছে, শিথিল করা হলো। অথচ সব আগের অবস্থায় চলে যাবে। ঝুঁকি নিয়ে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা এলে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ্ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন সবাই সংক্রমিত হব। কিছু হয়তো বেঁচে যাবেন। যারা এ দফায় সারভাইব করতে পারবেন না, তাদের হারাতে হবে।
এদিকে করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। শিথিল লকডাউনে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রে গমন ও জনসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিহার করতে বলা হয়েছে।
কুরবানির হাটে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। জ্বর নিয়ে পশুর হাটে প্রবেশ করা যাবে না। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা হাটে ঢুকতে পারবে না, হাটে প্রবেশকারীকে গøাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ঢুকতে হবে। হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক সাবান রাখতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, জীবন ও জীবিকার কথা মাথায় রেখে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন প্রয়োজন, আবার শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা নির্বাহের কাজ একেবারে বন্ধ করতে পারি না। তাই জীবন-জীবিকার সমন্বয় করতে সরকার লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়