আপিল বিভাগের আদেশ : ল্যাবএইডের ডাক্তার হত্যায় আমিনুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল

আগের সংবাদ

ঝুঁকি নিয়েই উঠল লকডাউন

পরের সংবাদ

এত প্রাণহানির দায় কার?

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাকিস্তানের সেজান ব্র্যান্ডের জুস তৈরি হতো সজীব গ্রুপের হাসেম ফুড লিমিটেড নামের যে কারখানায় সেটির শ্রমিকদের প্রায় শতভাগ ছিল শিশু। ১০-১১ বছরের শিশুদের দিয়েও স্বল্প বেতনে কাজ করানো হতো ওই কারখানায়। ৮ জুলাইয়ের অগ্নিকাণ্ডে কারখানার শতাধিক শ্রমিক মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি তো কারখানাটিতে ছিলই না, তার ওপর আগুন লাগার পরও কারখানার গেট বন্ধ রাখা হয়। ইতোমধ্যে গণহত্যাসম এই শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে প্রশাসন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেমসহ আটজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
১০ জুলাই দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশ্বস্ত করেছেন, দোষীদের বিচার হবে, ইতোমধ্যে আটজনকে আটক করাও হয়েছে। আগুনের ঘটনায় গাফিলতি থাকলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত এজাহারের অভিযোগে বলা হয়েছে হাসেম গ্রুপের ওই ছয়তলা ভবনের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল না। মাত্র চারটি সিঁড়ি প্রায় তিন হাজার শ্রমিকের জন্য কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। এর বাইরে ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি রাখা হয়নি। কলকারখানার অভ্যন্তরে ছিল না পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আগুন লাগার পরও ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরের গেট বন্ধ রাখা হয়। এর ফলে আটকে পড়ে অসহায়ভাবে শ্রমিকদের নির্মম মৃত্যু হয়। রূপগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত কারখানা কর্তৃপক্ষের। তবে শিল্প কলকারখানা পরিদর্শনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায় কোনো অংশে কম নয়। শত শত শিশুশ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর অস্তিত্ব বজায় রাখলেও কোনো কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েনি এটি, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কর্মচারী নামের শ্বেতহস্তী পোষার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সাভারের রানা প্লাজা ধস আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে বড় এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল কারখানার কর্মপরিবেশ ও কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল কমপ্লায়েন্স। যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশানুসারে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে প্রদান ও কারখানার নিরাপত্তা বিধান এবং উৎপাদিত পণ্যের নিরাপত্তার জন্য সম্মতি প্রদান করাই হচ্ছে কমপ্লায়েন্স। রানা প্লাজা ধসের আগে তাজরীন ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানায় আগুনে শতাধিক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। একটি ফয়েল কারখানায় আগুন লেগে নিহত হয়েছে ২৪ জন। এমন প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই জানা যায়, ভবনে তালা দেয়া ছিল। বড় প্রাণহানি ঘটেছে এমন দুর্ঘটনা তদন্তে চরম গাফিলতির চিত্রও উঠে আসে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বৈশ্বিক অঙ্গনে আবারো আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এক বার্তায় বলেছেন, তাদের আশা তদন্তকারীরা এই ঘটনার কারণ খুঁজে বের করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরো তাদের টুইট বার্তায় প্রায় একই কথা বলেছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি কারখানায় আগুনের ঘটনা ভয়ংকর উল্লেখ করে তারা বলেছে, বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে কর্মীদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেয়ার দায়িত্ব তাদের নিয়োগকারীদের। তালাবদ্ধ দরজা ও গেটের ভেতর অনেক কর্মী আটকে ছিল বলেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কারখানাগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে কিনা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কিনা তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কারখানা মালিকদের খতিয়ে দেখা দরকার।
রূপগঞ্জে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর এটা এখন পরিষ্কার যে, কর্মপরিবেশ নিয়ে সেজান কারখানার মালিক শ্রমিকদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করেছেন। কিন্তু এর দায় তো ডাইফিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিতে হবে। কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতির পাশাপাশি তদারকি সংস্থাগুলো দায়িত্বে অবহেলা করেছে কিনা, সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হোক।
আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়