মির্জা ফখরুল : করোনা নিয়ন্ত্রণে কারফিউ কোনো সমাধান নয়

আগের সংবাদ

করোনার দাপটে ডেঙ্গুর হানা : রাজধানীর হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

পরের সংবাদ

এখনই ঈদপরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাস্তব কর্মসূচি প্রণয়ন জরুরি

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সরকারের ভাষায় কঠোর বিধিনিষেধ, সাধারণভাবে কঠোর লকডাউন আগামীকাল ১৪ তারিখ শেষ হতে যাচ্ছে। যেহেতু ২১ জুলাই কুরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, ঈদের আগে গরু-ছাগল কেনাবেচার বিশাল কর্মযজ্ঞ দেশব্যাপী চলবেই- এটি কোনো সরকারের পক্ষেই রোধ করা সম্ভব নয়, মানুষের ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ কিংবা নানা অজুহাতে গ্রামে যাওয়া ঠেকানো যাবে না। তাই সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে খুব একটা সফল হবে না। এটি শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়। এমতাবস্থায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনেকটাই শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, দোকানপাটসহ প্রায় সবকিছুই চালুর অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কোরবানির হাটও চলবে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুয়ায়ী কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলা হতে পারে। এ বিষয়ে যেকোনো সময় সিদ্ধপ্রন্তর ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরানো, বিনা পয়সায় টিকাদান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধান কার্যকর করা অন্তর থেকে বাস্তবে রূপ দিতে সব শ্রেণি, পেশা ও বয়স নিঃশেষে মানুষের সমর্থন পাওয়া বা দেখার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। বাংলাদেশের বাস্তবতাটি এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়িত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের রাস্তায় দাঁড়িয়ে জেল, জরিমানা, সতর্ক করা, বাড়ি ফিরিয়ে দেয়াসহ নানা ধরনের কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত লকডাউনের ন্যূনতম পরিবেশও তৈরি করতে পারেনি। এত শ্রম, এত জনবল, এত আয়োজন- কী দিতে পেরেছে? নিশ্চয়ই কোনো লকডাউন উপহার দিতে পারেনি। লকডাউনের নামে শক্তি ক্ষয় হয়েছে। গার্মেন্টসসহ বেশ কিছু শিল্প-কলকারখানা তাদের কারখানা খোলা রেখেছে, তাদের আয়-উপার্জন ঠিক রেখেছে, তাদের শ্রমিকরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও কেউ জানতে পারবে না। কেউ আক্রান্ত হলেই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই যাওয়া অনেকের জন্যই চিরবিদায়ের যাওয়া হয়ে যায়। আবার যারা বেঁচে থাকতে পারেন তাদের নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসা মালিকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। মালিক তো শূন্যপদ একদিনও খালি রাখেন না। বাজারে গার্মেন্টস কর্মীর অভাব নেই। সুতরাং গার্মেন্টস নিয়ে মালিকরা যাই বলুন, আমরা গণমাধ্যমে যাই শুনি, ভেতরের বাস্তবতা খুবই নির্মম! বাস্তবতা হচ্ছে চাকরি হারানোর ভয়ে গার্মেন্টস কর্মীরা সত্য কথা বলতে চায় না। জীবন-জীবিকা তাদের এমন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আবার অন্য কারখানার মালিকগুলো যে কী করছে তার কতটুকুই বা আমরা জানি।
রূপগঞ্জের হাসেম ফুড লিমিটেডস কারখানায় শত শত শিশুকে বেআইনিভাবে তালা বেঁধে ভেতরের অজানা মৃত্যুকূপের পাশে আবদ্ধ রেখে নানা ধরনের উৎপাদন কাজে নিয়োজিত রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত এই শিশুদেরই বড় অংশ মৃত্যুকূপে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিরবিদায় নিল। কত পরিবারের স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। সরকার মৃতদের নামে দুই লাখ টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কারখানার মালিকের অপরাধে এই ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হলো। এখন সরকার ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দেবে কেন- এই প্রশ্ন করা যেতে পারে। কারখানার মালিকরা তো অর্থবিত্তহীন নন। যারা মৃত্যুবরণ করেছে বা অগ্নিদগ্ধ বা আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের জীবিত সন্তান, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেন এই কারখানা মালিকরা নেবে না। এই আইন কার্যকর থাকলে কারখানার মালিকরা শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। বিশাল কারখানা করে দেশে বড় শিল্পপতির তালিকায় নাম ওঠাবেন, কিন্তু শিল্প-কলকারখানার বিধিবিধান ও আইন কর্মরত শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের জীবন-জীবিকার দায়িত্ব নেবেন না তা মোটেও হতে পারে না। এটি হলো শিল্প-কলকারখানা প্রসঙ্গের একদিক। অন্যদিক হচ্ছে যারা এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার শুরু থেকে আইনকানুন, বিধিবিধান দেখা ও পরিবীক্ষণ করার দায়িত্বে থাকেন তাদের দায়দায়িত্বে গাফিলতি, দুর্নীতি, অবহেলা ইত্যাদির সঙ্গে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যুক্ত থাকার কথা, তাদের জবাবদিহি থাকা দায়বদ্ধতা বহন করা যদি নিশ্চিত থাকত তাহলে এ ধরনের মৃত্যুকূপ নামক শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান এভাবে চলার সাহস দেখাত না। ঢাকাসহ সারাদেশে পাঁচ শতাধিক সিসায় বিষ ছড়ানো, অবৈধ ‘কারখানায়’ কয়েক হাজার শ্রমিক দিন-রাত সিসার সঙ্গে বসবাস করে কাজ করছে। তাদেরও দেখভাল করার কেউ নেই! নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অগোচরে এটিও নেই। তবে গোচরে না আনার জন্য নিয়মিত যে ‘পকেটমানি’ তাদের প্রয়োজন সেটি নিয়েই তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের অগোচরে রাখছেন। কিন্তু সিসার বিষ খেয়ে তো গোটা জাতিই ধীরে ধীরে হয় মৃত্যু নতুবা পঙ্গুত্ববরণ করতে যাচ্ছে। এ ধরনের আরো বহু শত শত প্রতিষ্ঠান লকডাউনে অগোচরেই ভেতরে ভেতরে চলছে। এগুলো কে দেখবে? দেখার জন্য যারা তারা না দেখে আছেন এটি বিশ্বাস করার মতো বুদ্ধিহীন নিশ্চয়ই আমরা নই। তবে ‘পকেটমানি’ যে এই সময়ে করোনার চেয়েও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, সেটি একটু আড়ালে-আবডালে থেকে সহজেই দেখা যায়। যেসব প্রতিষ্ঠানকে লকডাউনকালে খোলা রাখতে বলা হয়েছে সেখানে দিনে দুই-তিনবার করে কারা, কেন উপস্থিতি জানান দেন তাকেই ঊর্ধ্বতনরা দেখেন না, জানেন না নাকি ‘পকেটমানির’ অংশ পকেটে অগোচরে নিয়মিত যাচ্ছে বলে তারা মহাখুশিতে আছেন! আসলে মৌসুমটা অনেকের জন্যই বেশ অর্থ কামাইয়ের। কিন্তু এই অর্থ যাদের পকেট থেকে যাচ্ছে তাদের কারো কারো পকেট শূন্য হচ্ছে। দেশে এখন দীর্ঘ করোনার সংক্রমণ অবস্থা বিরাজ করার কারণে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা লাটে উঠতে বসেছে অথচ এর সঙ্গে জড়িত কয়েক কোটি মানুষ। সুতরাং রক্তক্ষরণ ও নিঃস্বকরণ হচ্ছে ওই শ্রেণিপেশার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য কর্মী, এমনকি মালিকরাও। সুতরাং গত দেড় বছরে সমাজ ও অর্থনীতিতে জোয়ারের নদীর মতো এ কূল হুমড়ি খেয়ে ভাঙছে, ওই কূল বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোমের মতো উঁচু-নিচু অদৃশ্যমান ভূমিতে গড়ে উঠছে। এই বাস্তবতাটি সমাজবিজ্ঞানের একজন গভীর পর্যবেক্ষক হিসেবে আমাদের অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। সরকার বড় ধরনের মাঠ পর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গবেষণা যথাযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দিয়ে করালে নিশ্চয়ই বস্তুনিষ্ঠ একটি ধারণা লাভ করতে পারত। সেটিই হবে সরকারের জন্য উন্নয়ন কৌশলকে এগিয়ে নেয়া বাস্তব পদক্ষেপ।
করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন দিয়ে আর কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি বারবার জারি করে দেশের অর্থনীতিতে যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে সেটি সরকারের পক্ষে মোটেও আর টেনে নেয়া ঠিক হবে না। কারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ উচ্চবিত্তের সংখ্যার দিক থেকে কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু এখন এরাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সরকারের জন্য এটি অশনিসংকেত। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সম্মুখে একদিকে করোনার সংক্রমণ রোধ, অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা শুধু টিকিয়ে রাখা নয়, বিকাশমান রাখা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। নতুবা এর অভিঘাত রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের সর্বত্র ভয়ানকভাবে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারকে সব মনোযোগ দিতে হবে শতভাগ জনগণকে মাস্ক পরানোর মতো সচেতন করে তোলার প্রতি। বিশ্বের করোনা বিশেষজ্ঞরাই এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার মতো পর্যায়ে নেই। সে কারণে তাদের আগের কথার সঙ্গে বর্তমানে নতুন তথ্যসংবলিত কথাকে আমরা বিজ্ঞানের ধারাবাহিক বিষয় হিসেবে না বুঝে, আমাদের বুঝমতো এটিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অনেক সময় গণমাধ্যমের সম্মুখেই উচ্চারণ করে যাচ্ছি। এতে যারা বোঝার মতো তারাও তো বিজ্ঞানের ধারণা স্পষ্টীকরণের প্রক্রিয়া না জেনে নিজেরাই খেই হারিয়ে ফেলছেন। আসলে বিজ্ঞান এত সহজ বিষয় নয়, চটজলদি কোনো সিদ্ধান্তে বা শেষ কথায় উপনীত হওয়া যায় না। বিষয়টি যখন একেবারে নতুন জটিল সমস্যা হয় তখন সহজে সব উত্তর পাওয়া যায় না। করোনা ভাইরাস গত দেড় বছরে নানা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর পেছনে দৌড়াচ্ছেন। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ততদিনে আরো অসংখ্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট জন্ম দিচ্ছে, ছড়াচ্ছেও। সুতরাং নতুন নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ীই তো সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বাড়বে বা কমবে, প্রতিরোধ ও চিকিৎসাও সেভাবেই নিতে হবে। কিন্তু আমাদের তো এত ধৈর্য নেই। সে কারণেই আমাদের মধ্যে চলছে ভয়ানক এক করোনার সামাজিক সংকট। এ পর্যন্ত আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলো বহির্বিশ্বের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। কিন্তু আমাদের জনমানুষের বিশ্বাস, বোধ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়গুলো আমরা খুব কমই আমলে নেয়ার চেষ্টা করেছি। করোনার মতো ভাইরাস সম্পর্কে যেখানে আমাদের উচ্চশিক্ষিত মানুষদের মধ্যেই প্রতিনিয়ত আহরিত জ্ঞানগত ধারণা লাভে ঘাটতি রয়েছে, সেখানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এই ভাইরাসটি কীভাবে সংক্রমিত হতে পারে সেটি জানা, বোঝা ও নিজেকে প্রতিরোধ করার মতো সচেতনতার অবস্থানে দাঁড়ানো খুবই দূরের বিষয়। সে কারণে আমরা শুনি, ‘করোনা বলে কিছু নেই’, ‘করোনা গরিব লোকের নয়’, ‘করোনা শেখ হাসিনার রাজনীতির চাল’, ‘করোনা করোনা বলে সরকার আমাদেরকে শেষ করে দিচ্ছে’, ‘দুর্নীতি করছে’, ‘চিকিৎসা দিতে পারছে না’, ‘মরণ যার যেভাবে আছে সেভাবেই হবে’, ‘মাস্ক পরে লাভ কি, মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে যায়’, ‘মানুষের চেহারা বদলে যায়’, ‘কলিকালের আজব চিজ দেখায়’, ‘টিকা না দিয়ে টিকা টিকা করছে’ ইত্যাদি হাজারো মন্তব্য যে যার মতো করে বেড়াচ্ছে। এখন গ্রামের মানুষও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে ঘরে কাতরাচ্ছে, নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ হাসপাতালে ছুটছে। কেউ ভাগ্যগুণে সময়মতো অক্সিজেন পেলে বাঁচতে পারছে, কেউ কেউ পরপারে পাড়ি জমাচ্ছে। পরিবারে সংক্রমিত মানুষকে রেখে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশীরা খুব বেশি খোঁজখবর নিচ্ছে এমন নয়। লাল পতাকা উড়িয়ে দিলে সেই কলেরা যুগের নিষিদ্ধ এলাকা বলে কারো সেখানে পদচারণা পড়ে না। যারা আক্রান্ত হয়নি, তারা হাটে, ঘাটে, মাঠে, শহরে যে যার মতো চলছে, ভয়-ভীতি তাদেরও যে খুব একটা আছে তাও নয়। করোনার সংক্রমণ ক্ষমতাটি সম্পর্কে তাদের জানা নেই, কেউ তাদের সেভাবে বুঝিয়ে বলতেও পারে না। সে কারণে অন্তত মাস্কটি বাইরে ঠিকঠাক মতো পরে চলাফেরা অথবা কাজ করার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না।
সরকার এখন তৃণমূল থেকে যেসব কমিটি গঠন করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চাচ্ছে। তা তখনই কার্যকর ও সুফল দিতে পারবে যখন এসব কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা নিজেরাই আগে করোনার সংক্রমণজনিত বহুমাত্রিক অদৃশ্য যে নিয়মগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন করবে। সে ধারণা প্রদানের জন্য গণমাধ্যমে কোভিড বিশেষজ্ঞদের কিছু বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা প্রয়োজন। সেসব নিয়মকানুন, করোনার সংক্রমণ বিস্তার ও রোধের উপায়গুলো সম্পর্কে প্রতিটি স্থানীয় পর্যায়ের কমিটির সদস্যকে আগে ওয়াকিবহাল করতে হবে। তারা যেন জনগণকে জনগণের বোধগম্য ভাষায় মাস্ক কেন পরতে হবে, কীভাবে পরতে হবে, পড়লে কীভাবে করোনার হাত থেকে নিজে মুক্ত থাকতে পারবে, একইভাবে সবাই পড়লে সবাই আপনাআপনি করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে সেই ব্যবহারিক (প্র্যাকটিকাল) অভিজ্ঞতা মানুষকে প্রদান করে শুধু কর্মক্ষেত্রে বা চলাচলে একটু দূরত্ব রেখে অবস্থান করলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে মুক্ত থাকা যায়, এসব নিয়মকানুন অনুসরণ করলে প্রতিদিনের কাজকর্ম করতে বাধা নেই সেই আস্থা জনগণের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। তারপরও যদি কেউ সংক্রমিত হয় তাহলে তার চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়ার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা ওই প্রতিনিধি দলের দায়িত্বের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের জনশক্তির সচেতন অংশকে আমরা যদি এভাবে করোনা অসচেতন মানুষদের মধ্যে কাজ করার একটি আন্দোলন হিসেবে শুরু করতে পারি, সব মানুষকে প্রয়োজনীয় মাস্ক সরবরাহ, করোনার গণটেস্ট, গণটিকা দান এবং শহর ও গ্রামের সর্বত্র তদারকিতে রাখা, কাউকে জোরপূর্বক নয় বরং বুঝিয়ে শুনিয়ে স্বাস্থ্যবিধির কার্যক্রমগুলোকে সচল করতে পারি তাহলেই করোনা সংক্রমণের নানা ধরনের ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ থেকে যেমন আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব, একই সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা সচল, দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারব। সেই পরিকল্পনাই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে সামনে নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে সমাজের বৃহত্তর অংশে যেই অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে যাচ্ছে সেখানে নানা অপপ্রচার, জঙ্গিবাদ, মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতির নানামাত্রিক বিস্তার মানুষের পারিবারিক ও মনোজাগতিক সংকট জটিলতর রূপ ধারণ করতে পারে। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে করোনা সংকট মোকাবিলার চেয়ে এসব সংকট মোকাবিলায় আরো বহুমাত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং ঈদের পরে সরকারের নতুন প্রস্তুতি, কর্মোদ্যম এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বাস্তবোচিত উদ্যোগ নিতেই হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়