মগবাজারে বিস্ফোরণ আরো একজনের মৃত্যু

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য

পরের সংবাদ

কে শুনে কার আর্তনাদ?

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক সোনার হরিণ সমতুল একটা বিদ্যানিকেতনে পড়ার সুযোগ হওয়া। এর পেছনে রয়েছে অনেক কাব্য-মহাকাব্য। যে কাব্য-মহাকাব্য রচনার মূলে ছিল কঠোর পরিশ্রম, না খেয়ে দিন কাটানোর ইতিহাস আর সমাজের মানুষের অসহনীয় কিছু লাঞ্ছনা-বঞ্চনাপূর্ণ উক্তি। আরেকটু পেছনে যাওয়া যাক। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষা জীবনটা। কঠিন সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে কোনোমতে একটা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির মধ্য দিয়ে পড়াশোনাটা শুরু। আবার অনেকের মা-বাবা শখের বসে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পরিবর্তে কিন্ডারগার্টেন কিংবা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করায় তাদের সন্তানদের। তবে সে সুযোগ সবার জীবনে হয়ে ওঠে না। কারণ আমাদের সমাজের নিয়মানুযায়ী কিন্ডারগার্টেন আর ইংলিশ মিডিয়াম এলিট শ্রেণিদের জন্য নির্ধারিত। ওখানে আবার সবার ঠাঁই হয়ে ওঠে না। এবার কোনোমতে প্রাইমারি লেভেলের গণ্ডিটা পার হওয়া তখনো চলছিল সব ঠিকঠাক। কপালে চিন্তার ভাঁজ নেই। ছোট শিশুরা যেভাবে মুক্তভাবে চলে ঠিক সেভাবে চলছিল। একটা সময় সাধারণত মা-বাবাদের ইচ্ছে জাগে সন্তানরা ক্লাসে ফার্স্ট, সেকেন্ড অথবা থার্ড হবে। এই প্রতিযোগিতা সব মা-বাবারই থাকে। সমাজের সঙ্গে তাল মিলাতে গেলে থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। এমনকি যে মা-বাবাও সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চিত তাদের ভেতরেই এমন একটা প্রতিযোগিতা কাজ করে। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই শুরু আরেক ধরনের বৈষম্য। সন্তানদের জন্য হাউস টিউটর, প্রাইভেট, কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। অনেক সময় এক ধরনের প্রতিযোগিতা হয়ে যায় যে, কার সন্তানকে কত নামি-দামি গৃহশিক্ষক কিংবা কত দামি প্রাইভেটে দেয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় যাদের, তাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব একটা প্রাইমারি লেভেলের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াবে বা বাড়িতে টিউটর রেখে পড়াবে? কোনো প্রাইভেট, হাউস টিউটর ছাড়াই সামনে এগোতে হয়। নিজে যা পড়ে আর ক্লাসের শিক্ষক যা পড়ায় তাই একমাত্র অবলম্বন পরীক্ষায় পাস করার। এভাবে প্রাইমারি স্তরের পড়াশোনা শেষ। এবার মাধ্যমিক। ঠিক এসএসসির কাছাকাছি যেতে না যেতেই পরিবার থেকে ছোটখাটো যে খরচটা পাওয়া যেত তাও আর পাওয়া যাবে না। কারণ ছেলে এখন বড় হয়েছে পরিবার আর কত দেবে? সমাজ তখন থেকেই উপার্জনের একটা পথ দেখাতে শুরু করল। মা-বাবার টাকায় তো অনেক দিন এবার টিউশন করো। তবে টিউশনের দীক্ষাটাও সবার জন্য না। সমাজের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য। মাধ্যমিক স্তর এই গøানি নিয়ে শেষ। এখনো পরিবারের প্রত্যাশা একটু বেড়ে যায় সন্তান একটা কলেজে ভর্তি হবে, দুয়েকটা টিউশন করে নিজের খরচটা নিজে চালিয়ে নিয়ে যাবে। টিউশনের টাকা থেকে কিছু পরিবারকে দিয়ে সহায়তা করবে। এদিকে ছেলেটি টিউশনের বেড়াজালে থেকেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন লালন করে। বড়ই আশা উচ্চশিক্ষাটা দেশের একটা নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেষ করবে। আর নিজেকে সমাজের একটা উচ্চপর্যায়ে দাঁড় করাবে। টিউশন করার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুলছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। এখন মাথায় বিশাল পাথরের বোঝা। নিজেকে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য হলেও একটা নাম করা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তার কারণ সমাজ ভালো পড়াশোনা বলতে মেডিকেল বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকেই বুঝে। অনেকে চাইলেও লাখ লাখ টাকা খরচ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে না। না পারে বিদেশি কোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে। এবার জীবনযুদ্ধের কঠিন আরেকটা ধাপে পদার্পণ করল। এবার শুরু হলো নিজের স্বপ্নপূরণের যুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে হলে নাকি অনেক প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়তে হয়। তা অবশ্য সবার জন্য না। যেখানে এক মাস টিউশন না করালে ঠিকমতো তিন বেলা ভাত জোটে না সেখানে প্রাইভেট-কোচিং বিলাসিতা। ভর্তি যুদ্ধ শুরু। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে। এবার আরেক দুশ্চিন্তা ভর্তির টাকা পাবে কই? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও থাকবে কই? হলে সিট পাবে তো? হ্যাঁ নানান অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে ধারদেনা করে ভর্তিও হওয়া হয়, কিন্তু এবার থাকার অনিশ্চয়তা। কোনোভাবে থাকার মতো গণরুমে হলেও যদি একটা সিট হতো। একটা সিট পেতে হবে। এবার সিটের জন্য রাজনৈতিক বড়ভাই একমাত্র অবলম্বন। ভাইয়ের কথামতো চলতে হবে। ভাই যা বলে তা শুনতে বা করতে হবে। তার কোনো বিপরীত হলেই ভাইয়ের কাছে অনেক লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করতে হয়। এভাবে একটা সময় পর হয়তো গাঁ গুজানোর মতো একটা সিটও পাওয়া যায়। আরেক চিন্তা হাজির দুয়েকটা টিউশন করে নিজের খরচ চালাতে হবে তার থেকে অল্প পরিবারকে দিতে হবে। তখনো দ্বারস্থ হতে হয় কোনো বড় ভাই অথবা বড়ভাইয়ের পরিচিত। এটাই নি¤œবৃত্ত পরিবারের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া সন্তানদের আর্তনাদ। যে আর্তনাদ নীরবে-নিবৃতে চলে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে জীবনটা চলছিল। অনেক স্বপ্ন। প্রহর গুনছিল এই তো মাত্র আর কয়টা দিন পড়াশোনাটা শেষ করে একটা চাকরি ধরবে। সমাজের মানুষের কথা থেকে রেহাই পাবে। এই বলে সান্ত¡না দিচ্ছিল নিজেকে। দেশে ভয়ানক করোনা আসছে। বেঁচে থাকার জন্য অনেক নিয়মনীতি মানতে হবে। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচাতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু বন্ধ করেছে। একটা সময় পর সব কিছু খুলে দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর খুলেনি। কিন্তু বিপত্তি সেখানে। এতদিন যে স্বপ্নটা লালন করে আসছে সেটা অনেকটাই ভেঙে গেছে। করোনা বেড়েই চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে অবস্থান করতে করতে একঘেঁয়েমি চলে আসছে। যাই একটু বাইরের পরিবেশটা দেখি। এভাবে সময় কাটছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ছে তো বাড়ছে। এদিকে ছুটি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লালিত-পালিত স্বপ্নটাও অধরা হচ্ছে।
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়