মগবাজারে বিস্ফোরণ আরো একজনের মৃত্যু

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য

পরের সংবাদ

কৃষির সম্ভাবনা, সমস্যা ও প্রতিকার

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত এবং একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। একসময় এদেশে প্রচুর আবাদি জমি ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ আবাদি জমির পরিমাণ কমতে থাকে। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা ও আধুনিক বিশ্ব এবং পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়তই দেখা দিচ্ছে।
এভাবে যদিও কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, তারপরও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে, সরকারি ও বেসরকারি শক্তিসমূহের প্রচেষ্টা এবং গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিকূল আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও এ দেশে কৃষি দ্রব্যাদি উৎপাদনে বর্তমানে একটি ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও প্রতিকূলতা বৃদ্ধি এবং আবাদি জমি কমার পরও ইংরেজ ও পাকিস্তান আমল আর স্বাধীনতা-পরবর্তী কৃষির চেয়ে বর্তমানের কৃষিতে এক ধরনের স্বকীয়তা বিরাজমান রয়েছে। কিছুদিন ধরে অর্থকরী বিভিন্ন ফসল বা শস্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রায়ই বিশ্বের সেরা দশে অবস্থান করছে। যেটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের ব্যাপার।
সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের কৃষি খাতে ইতিবাচক ও অপার সম্ভাবনা থাকলেও এতে বিদ্যমান রয়েছে বেশকিছু মৌলিক সমস্যা। বাংলাদেশের কৃষির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস ও ঝড়-তুফান, নদীভাঙন ও ভূমিধসসহ বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন আমাদের কৃষি। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে জনসংখ্যা ও বসতবাড়ি বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আবাদি জমির পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা কৃষির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জে রূপ নিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে কৃষি উপকরণগুলোর ব্যাপক আধুনিকায়ন হলেও অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়াতে ও আরো অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এগুলোর সহজলভ্যতা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। গ্রাম পর্যায়ের অনেক কৃষকই পুরনো বা সনাতন পদ্ধতিতে, দেশীয় যন্ত্রপাতি এবং কায়িক শ্রমের ওপর ভিত্তি করে ফসল ফলিয়ে থাকেন। তাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। একটা বিষয় না বললেই নয় যে, কৃষক কষ্ট করে ও বহু টাকার জোগান দিয়ে চাষাবাদ করে যখন বিক্রি করতে যায় তখন অধিকাংশ সময়ই আশানুরূপ বাজার মূল্য পায় না, অনেক সময় তাদের ঘাটতির সম্মুখীনও হতে হয়। এক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতা ও মজুতদারি একটি চক্র সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।
নির্দিষ্ট কিছু পণ্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে ক্রয় করলেও অধিকাংশ পণ্যেই কৃষকরা তাদের ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার অনেক সময় কৃষকের হাতে নিজস্ব বা দেশি পণ্য থাকা সত্ত্বেও আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করলে দেশি পণ্যের বাজার মূল্য কমে যায়। আর সংরক্ষণের পর্যাপ্ত পরিমাণে সুবিধা না থাকার কারণে অনেক সময় পেঁয়াজ-রসুন, আলু, ভুট্টা ও গমের মতো বহু শস্যই নষ্ট হয়ে যায়। আবার বাংলাদেশের বহু এলাকা রয়েছে যেখানে কৃষক চাষাবাদ করতে সক্ষম কিন্তু শস্য বা পণ্য বিক্রির বাজার দূরবর্তী হওয়াতে বা যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকায় সেই এলাকায়ও কৃষি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ মাশরুমের কথা বলা যেতে পারে। চরম বাস্তবতা হলো যে, এটি যেখানে সেখানে বিক্রি করা যায় না। আবার বিক্রি করা গেলেও উপযুক্ত পরিমাণে বাজারমূল্য উদ্যোক্তা বা কৃষকরা পায় না। এ রকম বহু সমস্যার কারণে মূলত কৃষকরা বা কৃষি উদ্যোক্তারা দিন দিন কৃষিবিমুখ হয়ে যাচ্ছে।
তা ছাড়াও কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পলিথিন যত্রতত্র ইত্যাদির উপস্থিতিতে মাটি দূষণ ও বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে উপকারী অণুজীবগুলো ধ্বংস হয়ে দিন দিন মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি কার্যক্রম ক্রমেই হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এ কৃষি খাতের সব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিরূপণ করে, একে একে সেগুলোর সমাধান করার কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে, তা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সব শ্রেণির মানুষেরই কৃষিকে মনেপ্রাণে ধারণ করে, যার যার অবস্থান থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষিতে এক ধরনের বিপ্লব ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করুক এবং আজীবন তা ধরে রাখুক, এটাই কামনা সবসময়।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়