মগবাজারে বিস্ফোরণ আরো একজনের মৃত্যু

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য

পরের সংবাদ

আসুন কষ্ট হলেও ঘরে থাকি

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অতিমারি করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের মানুষ একটি সংকটময় সময় পার করছে। কতদিন এই বিভীষিকাময় সময় পার করতে হবে সেটাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কেউ। এমনও হতে পারে, আরো কয়েক বছর আমাদের করোনার সঙ্গে চলতে হবে। করোনার কারণে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত- সব স্তরের মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষভাবে উপান্তিক ও প্রান্তিক মানুষ যে কত কষ্টে দিনাতিপাত করছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যে হারে করোনা আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। করোনার চলমান ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কত যে মারাত্মক আকার ধারণ করছে, তা আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে সহজেই বুঝতে পারি। প্রতিনিয়ত আমাদের পরিচিতজনদের করোনোয় আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর আমাদের ব্যথিত করে তুলছে। এই করুণ অথচ নির্ঘাত অবস্থাকে মেনে নিয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে আমাদের।
করোনার এই উল্লম্ফন সহসাই নির্মূল হবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। এ অবস্থা থেকে বাঁচার এখন দুটি পথ খোলা আছে আমাদের সামনে। প্রথমত, সব জনগণকে গণহারে টিকার আওতায় নিয়ে আসা; নতুবা চলাফেরা সীমিত করে ঘরে থাকা। প্রথমটি যেহেতু এই মুহূর্তেই সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছ না, সেহেতু ঘরে থাকাই এখন সবচেয়ে উত্তম পন্থা। কিন্তু ঘরে থাকা সবচেয়ে নিরাপদ জানা সত্ত্বেও এই কাজটিতেই আমাদের বেশি অনীহা। আমার কিছু হবে না, এই ধারণা পোষণ করে আমরা ঘুরি ফিরি আর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। তাই বাধ্য হয়েই সরকারকে লকডাউনের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করেছে। তবে লকডাউনই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় না হলেও এই মুহূর্তে এটি ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ও নেই সরকারের হাতে। লকডাউনে খেটে খাওয়া দিনমজুর গরিব মানুষের চরম কষ্টকর ও ভোগান্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়, এটা সত্য।
কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য হলো, আমাদের নিরাপদ ও সুস্থ থাকা। কষ্ট লাঘবের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তবে সে কষ্টের আর সীমা থাকবে না। মনে রাখতে হবে, জীবন আগে নাকি জীবিকা আগে। আমরা খাওয়ার জন্য বাঁচি না বরং বাঁচার জন্য খাই। জীবিকার তাগিদে বের হয়ে যদি আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়, তবে কি হবে জীবিকা দিয়ে? মানুষ কখনো না খেয়ে বা কম খেয়ে মরে না, বরং বেশি খেয়েই মরে। মাত্র তো কয়েকটা দিন। এই কয়েকটা দিন না হয় ঘরে বসে অল্প খেয়েই বাঁচি; তাতে তো অন্তত আমি ও আমার পরিবার নিরাপদে থাকব। পায়ে বেড়ি দিয়ে সরকার কখনো জনগণকে আটকাতে পারবে না। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই, যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তবে এর খেসারত কিন্তু আমাদেরই দিতে হবে। এমনও হতে পারে, নিজের বা কোনো আপনজনের জীবনের বিনিময়ে দিতে হতে পারে সেই খেসারত। আমার হয়নি বা হবে না, এটি শুধু ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। মনে রাখতে হবে, আমি বা আপনি কেউই কিন্তু নিরাপদ নই। যদি সরকার ঘোষিত লকডাউনে যথাযথ নিয়ম না মানি, যদি স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করি, তবে যে কোনো সময় আমি বা আপনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারি। বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউনের মাধ্যমে করোনার উচ্চগতিকে রুখে দিতে পেরেছে। কারণ তাদের জনগণ নিজেরা সচেতন থেকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলেছেন। তাই আমাদেরও শুধু টিকার ওপর নির্ভর করলে চলবে না, বরং আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে হ্যাঁ, বাইরে কিছু প্রয়োজন থাকতেই পারে। যেমন- পরিবারের অসুস্থ ব্যক্তিকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, অতি প্রয়োজনীয় বাজার-সদায়, ওষুধপত্র কেনার জন্য বাইরে আসার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। তবে এসব অজুহাতে বারবার না বের হয়ে যথাসম্ভব কম বের হতে হবে। সেক্ষেত্রেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আর মাস্ক পরিধান করার কথা তো বলাই বাহুল্য; এক মুহূর্তের জন্যও মাস্কবিহীন ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। যে বিভীষিকাময় সময় আমরা অতিক্রম করছি এ থেকে উত্তরণের দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, আমাদেরও। যদি আমরা সজাগ না হই, তবে সবচেয়ে বড় মাশুলটা দিতে হবে আমাদেরই।

হ প্রভাষক, সাভার সরকারি কলেজ, ঢাকা।
সড়হরৎঁষযধয়ঁব.ফঁ@মসধরষ.পড়স

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়