অশ্লীল ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল : সবুজবাগে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

কারিগরি কারণে পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পে ধীরগতি

পরের সংবাদ

ভালো কাজের শর্তেই মেলে খাবার-চিকিৎসা

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটায় ৩টা বাজলেই কমলাপুর পুরাতন বাজার জামে মসজিদের সামনের সড়কে একে একে আসতে থাকে বিভিন্ন বয়সি মানুষ। এরপর তারা সারিবদ্ধ হয়ে বসেন ফুটপাতে। সামাজিক দূরত্ব মেনে একজনের পর আরেক জন বসতে বসতে ফুটপাতে দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। হাল্কা টিয়ে রঙের টি-শার্ট পড়া কিছু তরুণকে আসতে দেখলেই ফুটপাতে বসে থাকা মানুষের চোখ খুশিতে চিকচিক করে ওঠে। তাদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয় ‘এতক্ষণে হলো অপেক্ষার অবসান’।
ফুটপাতঘেঁষা সাদা দেয়ালে লাল হরফে বড় করে লেখা ‘ভালো কাজের হোটেল’। ফুটপাতে বসে থাকা মানুষ সেই হোটেলের অতিথি। এই হোটেলের সুনাম অনেক। সেখান থেকে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হয় না। কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। নেই অন্য কোনো ঝুট ঝামেলা। তবে হ্যাঁ, একটা শর্ত আছে। অতিথিদের প্রত্যেককে একটি করে ভালো কাজ করতে হবে। সেই হিসাবটাই দিতে হয় এখানে।
গতকাল ভালো হোটেলে অতিথি হয়েছিলেন গোপালগঞ্জের আরিফ শেখ (১৩)। আরিফ ঢাকার কমলাপুরের খাজা আকবর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কাজ করে। লকডাউনে হোটেল বন্ধ, তাই কাজও নেই। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়িও যেতে পারেনি। কাজ না থাকায় রোজগারও নেই। নেই খাওয়ার পয়সাও। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হোটেলে আসছে আরিফ। আজ কী ভালো কাজ করেছে সে? জানতে চাইলে আরিফের উত্তর- ‘আজ আমি নামাজ পড়ছি। সব সময় পড়া হয় না। লকডাউনে কাজ নেই তাই অফুরান সময়।’
রাস্তা থেকে প্লাস্টিকের জিনিস কুড়িয়ে বেড়ায় সায়দাবাদের সাগর (১১)। গতকাল সাগরও গিয়েছিল সেখানে। তার ভালো কাজ কী? জানতে চাইলে সাগর তার পাশে বসা ছেলেটিকে দেখিয়ে বলে, ‘ও আমার মিতা। ওর নামও সাগর। আজ তার পায়ে কাঁচ ঢুইকা গেছিল। আমি সেইটা তুলছি। পা থেইকা রক্ত পড়তাছিল, আমি চাইপা ধরছি।’ বন্ধুর কথার সত্যতার প্রমাণ দিতে পাশে বসা ছেলেটি তার ডান পা উঁচু করে তুলে ধরল।
আরিফ বা সাগরের মতো শিশুরাই শুধু নয়, বড়রাও এসেছিলেন। মুগদা থেকে আসা রিনা বেগম (৫৫), মাণ্ডা থেকে আসা রানু আক্তার (৪৫), কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থাকা মো. সগিরউদ্দিনও (৫২) ছিলেন তাদের মধ্যে। সবাই করোনাকালে কাজ হারিয়েছেন। উপার্জন না থাকায় খাবার জোগাড় করাই মুশকিল হয়ে গেছে। তবে ভালো কাজের হোটেলে এলেই তাদের মুশকিল আসান হয়ে যায়। প্রতিদিন তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ মানুষ এই হোটেলে অতিথি হয়ে আসেন। রাজধানীর একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ভালো কাজকে উৎসাহিত ব্যতিক্রমী এই কাজটি

করে যাচ্ছেন ২০০৯ সাল থেকে। এই স্বেচ্ছাসেবকরা ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত। তারা স্টিলের একটি ব্যাংকে রোজ ১০ টাকা করে জমা করেন। যাদের বলা হয় ডেইলি টেন মেম্বর। ওই টাকা দিয়ে এই স্বেচ্ছাসেবকরা ৩টি ভালো কাজ করছেন। ভালো কাজের হোটেলের মাধ্যমে শনি থেকে বৃহস্পতিবার অসহায় মানুষকে অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে তারা খাবার দেন। শুক্রবার তারা খাবার নিয়ে যান রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায়। কমলাপুর ভালো কাজের হোটেলের পাশেই তাদের ভালো কাজের হাসপাতাল। এই হাসপাতালে অসহায় মানুষদের সপ্তাহে একদিন চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ওষুধও দেয়া হচ্ছে। এখানেও ওই একই শর্ত। ব্যক্তিকে একটি ভালো কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলটি ‘ডেইলি টেন স্কুল’ নামে দরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। বাড্ডা, বাসাবো ও মাদারীপুরে তাদের এই স্কুলগুলোতে ৫৬০ জন দরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুকে লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে। সেখানেও একটি ক্লাস নেয়া হয়। যেখানে প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। এভাবেই মানুষের মধ্যে ভালো কাজ করার ইচ্ছার বীজ বুনে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান উদ্যোক্তা আরিফুল রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে এই কাজটা করছি। তখন বছরে এক-দুই দিন, এরপর মাসে এক দুই দিন করে দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করতাম। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিনই খাবার দেয়া হয়। ডেইলি টেন মেম্বরদের টাকা একত্রিত করে কাজগুলো করা হয়। এছাড়া আমাদের কিছু শুভাকাক্সক্ষী আছেন। যারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। শুরুতে ৭-৮ জন সদস্য ছিলাম। ২০১০ সালে ইত্যাদিতে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। এরপর সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৭/৮ জন থেকে ১১০ জন সদস্য হলাম। এখন আমাদের সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২০ জন। আমরা যে খাবারটা দেই তার মূল উদ্দেশ্য শুধু পেট ভরানো না। তাদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ অধিকাংশ সময় খারাপ কাজের সূত্রপাত হয় মানুষের ক্ষুধা থেকে। ক্ষুধা কমিয়ে মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য।
আগামীর স্বপ্ন প্রসঙ্গে আরিফুল বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের সবাই ভালো কাজ করছেন। প্রতিদিন যদি একটি করে হলেও ভালো কাজ করি তাহলে এর যোগফলে আমাদের জীবন বদলে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়