মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস : মাদকের আগ্রাসন থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে

আগের সংবাদ

৮০-তে পা রাখলেন ফেরদৌসী রহমান

পরের সংবাদ

গুরুদাসপুরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে সড়ক নির্মাণ

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : মাত্র ২শ ফিট সংযোগ সড়ক আর একটি সেতু নির্মাণে ৪০ বছর জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েছে গ্রামবাসী। শুধুই আশ্বাসের বেড়াজালেই আটকে আছে সব কিছু। আজো কাজটি হয়নি। শেষে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ৬ লক্ষাধিক টাকার জায়গা ক্রয় করে স্বেচ্ছাশ্রমে বানালেন সংযোগ সড়ক। শুধু একটি মাত্র সেতুর আশায়।
এই গল্প নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষের। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো বাধাই যে দমিয়ে রাখা যায় না তার প্রমাণ সাড়ে ৪শ মানুষের ঘাম ঝরানো শ্রমে তৈরি হওয়া রাস্তাটি সবার জন্যই দৃষ্টান্ত।
একটি সেতু আর সংযোগ সড়কের আক্ষেপ প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যা বেষ্টিত এই বিলহরিবাড়ী গ্রামের উত্তরপাড়ের অধিবাসীদের। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের দুঃখ গাথা গল্প পৌঁছায় না উচ্চ পর্যায়ে। বেঁচেও মরার মতো অধ্যায়কে সঙ্গী করে এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাহমান একটি নালা বিলহরিবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গ্রামটি হরদমা এবং বিলহরিবাড়ী নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুর্গাপুর-যোগেন্দ্রনগর রাবারড্যাম হয়ে একটি পাকা সড়ক ওই নালার দক্ষিণপাড়ে এসে শেষ হয়েছে। নালার উত্তরপাড়ে জনবহুল বিলহরিবাড়ী গ্রাম। আর দক্ষিণপাড়ে হরদমা গ্রামে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও বাজার রয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত এ উত্তরপাড়ের মানুষদের শিক্ষা, লাশ দাফন, চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রয়োজনে দক্ষিণপাড়ের এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। কাঁচা সড়কের কাদা মাড়িয়ে ওই খেয়ার নৌকা পার হয়ে তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া উত্তরপাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মাধ্যমও একটি খেয়া নৌকা।
স্থানীয়রা জানান, উত্তরপাড়ের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে অতিকষ্টে তিন কিলোমিটার কাদাযুক্ত কাঁচা সড়ক ও ওই নালা পারাপার হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই দুর্ভোগ নিয়ে পারাপার হলেও জনপ্রতিনিধিরা কাঁচা সড়কটি পাকাকরণ ও সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু আশ্বাসেই শেষ। এলাকাবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি নির্মিত হয়নি এখনো।
বিলহরিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ক্ষুদে শিক্ষার্থী আরিফুল, সান্তা, মরিয়ম, আঁখি ও শাপলা জানায়, বিদ্যালয়ে যেতে কাঁচা সড়ক ও খেয়া নৌকা পার হতে হয়। কাদাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় পা পিছলে পড়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন বাড়তি পোশাক নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসে।
ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হয়। ওই নালার ওপর সেতু না থাকায় বর্ষাকাল ও শুষ্ক মৌসুমেও খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে শত শত ছাত্রছাত্রী পারাপার করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে কৃষকদের পণ্য পরিবহনে বাড়ে অসহনীয় ভোগান্তি। বিশেষ করে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিষের গাড়ি কোনো রকমে সড়ক বয়ে আসলেও ওই নালা পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থরা সময়মতো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা ওই কাঁচা সড়ক এবং সেতু নির্মাণের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, সেতু না থাকায় ছোট একটি খেয়া নৌকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীসহ বিলহরিবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হন। তাছাড়া সড়কটি কাঁচা আর নিচু হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। এতে এই গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করেন। বরাদ্দ পেলে ওই গ্রামের মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য কাঁচা সড়কটি পাকাকরণের চেষ্টা করব এবং সেতু নির্মাণের বিষয়টি স্থানীয় সংসদকে অবগত করা হবে। যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ওই এলাকার যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ করে দিয়েছি। সেতুর বিষয়টিও সময় মতো দেখা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়