হৃত মর্যাদা ফেরত! : কাশ্মিরের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক নরেন্দ্র মোদির

আগের সংবাদ

বাদলা দিন আসছে!

পরের সংবাদ

লকডাউন মানিকগঞ্জে খড়গ আমিনবাজারে!

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর পাশের চার জেলা মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জসহ ৭ জেলা লকডাউন ঘোষণার প্রভাব পড়ছে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে। বিশেষ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার পয়েন্টে যানজটের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ ভোগান্তি। ঢাকামুখী সড়কে অপরিকল্পিতভাবে বাস আটকে দেয়ায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলেও রংসাইড (সাভারমুখী সড়ক) দিয়ে সমানতালে ঢুকছে সব ধরনের যানবাহন। এই তালিকায় পুলিশের বাস, ভ্যান, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিটি করপোরেশনের ময়লার লরি ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা লকডাউন করা হলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওই জেলার প্রবেশমুখ বা ঢাকা জেলার প্রবেশমুখ ধামরাইয়ে শ্রীরামপুর, সাভারের নয়ারহাট, চন্দ্রা কিংবা হেমায়েতপুরে বাস না আটকে আমিনবাজারে আটকে দেয়ায় যৌক্তিকতা ও সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন আমিনবাজারে যানজটে আটকেপড়া যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে অব্যবস্থাপনার এমন চিত্র দেখা গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সচিত্র ও ভিডিও আপলোড করে অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন অনেকে। এর সূত্রে খবর গেছে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের কানেও। কিন্তু সুফল মিলছে না কিছুতেই। বরং গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনের চিত্রও ছিল আগের দিনগুলোর মতোই।
জানা গেছে, ২২ জুন মঙ্গলবার ৭ জেলায় লকডাউন শুরু হলে এর খড়গ নামে ঢাকা জেলার আমিনবাজারে। ঢাকামুখী সড়কে বাস আটকে দিলে সেইসব বাস রাস্তার ওপর জড়ো হচ্ছে। আবার তা ঘুরিয়ে দিলে জড়ো হচ্ছে সাভারমুখী সড়কে। এতে রাস্তার দুই পাশের বড় অংশ থাকছে বাসের দখলে। ফলে রাস্তার দুই পাশে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। বিশেষ করে ঢাকামুখী পয়েন্টে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজট দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার মুখে

জেলা ট্রাফিক পুলিশ বাস আটকালেও কোনো লেন পদ্ধতি নেই। এতে বাসের সারির পিছনে আটকা পড়ছে সব ধরনের যানবাহন এমনকি, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। মহাসড়কের পূর্বপাশে মেসার্স মমতাজ ফিলিং স্টেশন ও পশ্চিম পাশে অনলাইন ফিলিং স্টেশন ও সিএনজি পাম্পের সামনের রাস্তা এখন বাস, ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস, পাঠাও এবং ওভারের দখলে রয়েছে। পুলিশের চোখের সামনে উল্টোপথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।
ঢাকামুখী পয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ধরে আটকে থাকা ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান পার করতে ট্রাফিকের ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্টদের এখন আর রাস্তায় দেখা যায় না। ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনজন ট্রাফিক কনস্টেবল। যারা উল্টোপথে আসা যানবাহনের ক্রসিং পার হতে আটকে দেয় সোজাপথে আসা পরিবহন।

ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কি করেন এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন নানা মন্তব্য। তাদের মতে, ঘুরিয়ে দেয়া সাভারমুখী বাসে যাত্রী তুললেই ভাড়া ১০০ টাকা। সারি সারি দাঁড়ানো বাসে যাত্রী তুলতে সহায়তা করছে পুলিশ। মাইক্রোবাসে তোলা হচ্ছে দূরের যাত্রী। পাঠাও ওভার তো রয়েছেই। সবই চলছে পুলিশের সহযোগিতায়। আবার যানজটে আটকে দেয়া স্থান থেকে গাবতলী পর্বত সিনেমা হল পর্যন্ত লোকজন যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। এতে সুবিধা নিচ্ছে পুলিশ।
দুর্ভোগে আটকেপড়া যাত্রীদের দাবি, সালেপুর ব্রিজের আগে থেকেই বাসের জন্য পৃথক লেন করে দিলে ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। ১০ মিনিট পর পর সংকেত দিয়ে পরে ঘুরিয়ে দিতে পারে ওইসব বাস। ট্রাফিক পুলিশের এটুকু সিদ্ধান্তহীনতায় যানজট এবং ভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। অবশ্য বাস আটকেও ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাকামুখী মানুষের ¯্রােত। রাস্তায় বাধা পেয়ে কেউই ফিরে যাচ্ছেন না বরং পায়ে হেঁটে ভোগান্তির পথ পাড়ি দিয়ে ছুটছেন গন্তব্যে।
এদিকে সাইদুর রহমান আকন নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পুলিশকে হানিফের তিস্তিয়া (চিশতিয়া) পাম্পের ভেতরে নিয়ে টাকা দিয়ে সিস্টেম করা হচ্ছে। সালেপুর থেকে সাভার বা চান্দরা যেখানেই যেতে হবে গুনতে হবে ১০০ টাকা!’ সিট খালি রাখার বালাই নেই। ক্রসিংয়ে ঘুরিয়ে দেয়া বাসে পাশাপাশি সিটে বসিয়ে যাত্রী নিয়ে ছুটছে আন্তঃজেলা বাস। অপর এক ব্যক্তি ভিডিও আপলোড করে বর্ণনা করে বলেছেন, সোজাপথ বন্ধ উল্টোপথ চালু। এমন অনেকের স্ট্যাটাসে চোখ পড়েছে পুলিশ কর্মকর্তাদের। তবুও ভোগান্তি কমছে না। মূলত লোকজনকে ঢাকামুখী না হতে নিরুৎসাহিত করতে পরিকল্পিত ভোগান্তি মনে করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ভোগান্তি সঙ্গী করেই ঢাকায় ঢুকছে মানুষ। এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে কোনো সদুত্তর মিলেনি।
অন্যদিকে, ঝক্কি পাড়ি দিয়ে আমিনবাজার ব্রিজ পার হলে নতুন ভোগান্তি শুরু হয়। ঢাকার বাসগুলো ওই ব্রিজের নিচের ইউলুফ ঘুরে জড়ো হয় পর্বত সিনেমা হলের সামনে। পায়ে হেঁটে বা অটোরিকশায় তুরাগ নদী পার হয়ে আসা যাত্রীদের তুলতে রাস্তার ওপর দাঁড় করানো হচ্ছে বাস। বাস দাঁড় করিয়ে হেলপারদের হাকডাকের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আবার পর্বত সিনেমা হলের সামনে রাস্তার দু’পাশে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের চেকপোস্ট। যেখানে বসানো তল্লাশি চৌকির কারণে কমছে গাড়ির গতি। সবমিলিয়ে পুলিশি অবস্থাপনার কারণে ১০ মিনিটের ওই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে কয়েক ঘণ্টায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়