হৃত মর্যাদা ফেরত! : কাশ্মিরের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক নরেন্দ্র মোদির

আগের সংবাদ

বাদলা দিন আসছে!

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস আজ : বেপরোয়া দেশের মাদক কারবারিরা

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাদক কারবারিরা। সময়ের বিবর্তনে নিত্যনতুন কৌশল পাল্টে মাদক পৌঁছে দেয়া হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। এমনকি দেশে মাদক উৎপাদন না হলেও বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নতুন নতুন মাদকেও আকৃষ্ট করা হচ্ছে তরুণ সমাজকে। একসময় মাদকের বাজার ইয়াবার দখলে থাকলেও গত কয়েক বছরে লাস্ট স্টেজ অব ড্রাগ (এলএসডি), গাঁজার ব্রাউনি কেক, আইস, থাত, এম্ফিটামিনসহ যুক্ত হয়েছে আরো বেশ কয়েকটি নাম। মাদকের বিক্রির ধরনেও এসেছে পরিবর্তন।
এক সময় পাড়ামহল্লার অলিগলিতে মাদক বিক্রি হলেও তথ্যপ্রযুক্তির কারণে পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ফলে মাদকের ব্যবসা দিন দিন আরো রমরমা হলেও কমে গেছে স্পটের সংখ্যা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির কারণে করোনা মহামারির মধ্যেও পুরনো সব রুটেই দেদার আসছে মাদক। একের পর এক সাঁড়াশি অভিযান, বন্দুকযুদ্ধ, মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের উদ্যোগের পরেও মাদক প্রতিরোধ না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এদিকে মাদক নির্মূলের দায়িত্বে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসির) রয়েছে নানা রকম সীমাবদ্ধতা। এমনকি আধুনিক ল্যাব সংকটে নতুন ধরনের মাদক চিনতেই পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অনলাইনে বেচাকেনা হলোও ডিএনসির নেই কোনো সাইবার ইউনিট। করতে পারে না মোবাইল ট্রাকিং। বন্দরগুলোয় নজরদারি বাড়ানোর জন্য ডগ স্কোয়াড চাইলেও এখনো সেই চাওয়া আলোর মুখ দেখেনি। টেকনাফ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদকের অন্যতম রুট হলেও সেখানে রয়েছে নজরদারির ঘাটতি।
এতসব গাফিলতি ও সীমাবদ্ধতা নিয়েই প্রতি বছরের মতো আজ শনিবার পালন করা হবে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এবার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে ‘মাদক নিয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন’। করোনার কারণে সীমিত পরিসরে হলেও বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো নানা রকম কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও বেশির ভাগে স্ক্যানিং সিস্টেম না থাকায় সরবরাহ ও পাচারে মাদক কারবারিরা কুরিয়ার সার্ভিসের দিকে ঝুঁকছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করতে গিয়ে দেশে এলএসডির সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এলএসডি মাদকের দুইশ বøটার পেপারসহ তিন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ডিবি।
পরে খিলগাঁও থানা পুলিশের অভিযানে আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে নেদারল্যান্ডস, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে চার বছর ধরে কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেলের মাধ্যমে দেশে আনা হচ্ছে এলএসডি। বিশেষ করে সরকারি ডাক বিভাগের স্ক্যানার তেমন শক্তিশালী না হওয়ায় পার্সেল আনার নামে এলএসডি আনতে বেসরকারি কয়েকটি কুরিয়ারের পাশাপাশি সরকারি কুরিয়ারকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাজে সহযোগিতা করছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী ও মাদক কারবারিরা।
বাংলাদেশ থেকে ইয়াবা, আইস, এম্ফিটামিন ও গাঁজা পাচারেও ব্যবহার করা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসকে। রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শাহজালাল ও শাহপরান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে। গত দেড় মাসে শাহজালাল থেকে মাদকের কমপক্ষে চারটি চালান উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৯ মে রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগের একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।
এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ফেডেক্সের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সাড়ে ২৪ কোটি টাকা মূল্যের মাদক এম্ফিটামিন পাউডার অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর সময় শাহজালালে সেগুলো জব্দ করা হয়। শুধু বিদেশ থেকে মাদকের চালান আনা কিংবা পাচার নয়, দেশের অভ্যন্তরেও নানা কৌশলে কুরিয়ারের মাধ্যমে মাদক সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে কারবারিরা।
অন্যদিকে ডিএনসি, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে ২০১৬ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে মামলা, গ্রেপ্তার, অভিযান বাড়লেও মাদকের সরবরাহ বাড়ছেই।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, বছরের একটি বিশেষ দিন মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে পালন করা হলেও বাংলাদেশে যে হারে মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ী বাড়ছে, তাতে প্রতিদিনই মাদকবিরোধী দিবস পালন করা উচিত।
অনলাইনে ঢুকলেই মাদক বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। কুরিয়ার সার্ভিস, গাড়ির সিলিন্ডার, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা কৌশলে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সহজলভ্যতা কমিয়ে যদি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না যায়, তাহলে মাদকের ভয়াল আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, প্রযুক্তিগত কারণে দিন দিন মাদক স্পট কমে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যবসা বাড়ছে। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে কিশোর গ্যাং তৈরি ও মাদকের নতুন নতুন সিন্ডিকেটের মতো ঘটনা ঘটছে। মাদকের ছোবল থেকে বাঁচতে পরিবার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, বিজিবি, মাদক অধিদপ্তরসহ সবগুলো মাল্টি অর্গানাইজেশনকে এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা মাদক আসার রুটগুলো চিহ্নিত। টেকনাফ থেকে ইয়াবা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেন্সিডিল ও গাঁজা আসছে। সবার আগে এগুলোকে সিলগালা করে দিতে হবে।
র‌্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ভোরের কাগজকে বলেন, পুরনো ও নতুন মাদক শনাক্ত করতে হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে র‌্যাবের পক্ষ থেকে ‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে র‌্যাবের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ডিএনসি মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার ভোরের কাগজকে বলেন, ইদানীং কুরিয়ারের মাধ্যমে মাদক পাচার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ডাক বিভাগ ও যেসব কুরিয়ার সার্ভিস আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য আদান-প্রদান করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা এখন থেকে স্ক্যানার মেশিন বসাবে, এ বিষয়ে আরো সচেতন হয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছে।
‘ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্পর্কে একসময় এমন ধারণা ছিল, সেখান থেকে অধিদপ্তর কতখানি বেরিয়ে আসতে পেরেছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, চারটি বিভাগীয় শহরে প্রকল্পের কাজ চলছে। সরকার আরো জনবল বাড়াবে বলে আশ^াস দিয়েছে। নতুন যন্ত্রপাতিও কেনা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়