চলতি সপ্তাহে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা

আগের সংবাদ

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা : সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে > ঘাটতি থাকবে ৩ হাজার মেগাওয়াট

পরের সংবাদ

টাকার বিনিময়ে বসতির সুযোগ দিয়ে বন আইনে মামলা!

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : মেঘনার ভাঙনে দিশাহারা ঢালচর ইউনিয়নের গৃহহারা জেলে পরিবারগুলোকে ঘরনির্মাণের সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বন কর্মকর্তা চন্দ্র শেখরের বিরুদ্ধে। টাকার বিনিময়ে চরের জমিতে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি গৃহহীন মানুষকে বন আইনের বিভিন্ন ধারার মামলায় জড়িয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন এ কর্মকর্তা ও তার কর্মচারীরা।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়নের বন বিভাগ ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা (রেঞ্জার) চন্দ্র শেখর দাস এবং তার অধীনে কর্মরত বনকর্মীদের দ্বারা এমন পাতানো মামলার শিকার পরিবারগুলো এ অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং অপর তিনদিকে মেঘনায় আবদ্ধ ঢালচর ইউনিয়ন নদীভাঙনে বিলীনপ্রায়। গত এক দশকে ঢালচরের ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহভাগ এলাকাসহ ইউনিয়নটির ৭০ ভাগ এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। মাত্র ৩০ ভাগ ভূখণ্ড নিয়ে ইউনিয়নটি টিকে আছে। মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে ঢালচর ইউনিয়নের ১৭ হাজার বাসিন্দার বেশির ভাগ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বাসিন্দাদের এই দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গৃহহীন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, পূর্ব ঢালচরে প্রায় ৪ হাজার একর চাষযোগ্য শক্ত ভূমি রয়েছে। যেখানে বন বিভাগের কোনো গাছ নেই বা গাছ সৃজনের কোনো সুযোগও নেই। পরিত্যক্ত চাষযোগ্য শক্ত ওই ভূমি ২০০৩-২০০৪ সালে মেঘনার ভাঙনে গৃহ হারানো স্থানীয় ভূমিহীনদের মধ্যে দেড় একর করে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে (তারুয়া) সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ হেক্টর সরকারি খাসজমি গৃহহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় ভূমি প্রশাসন। আশির দশকের শুরুর দিকে চর নিজামের (কালকিনি) ২১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ৭০টি পরিবারকে স্থায়ীভাবে বসতি করার জন্য দেয়া হয়েছে। মেঘনার ভাঙনে ঢালচরের মাছঘাট, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ চাষযোগ্য ও বসতি জমির ৭০ ভাগ বিলীন হওয়ায় গৃহহীন প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন আশ্রয়ের জন্য কালকিনি, পূর্ব ঢালচর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরের চাষযোগ্য শক্ত ভূমিতে বসতি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের দায়িত্বরত রেঞ্জার চন্দ্র শেখর দাস স্থানীয়দের এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সরকারি এসব খাসভূমিতে বসতি গড়ার সুযোগ দেয়ার জন্য ঘরপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর বসতি স্থাপনের সময় বন বিভাগের জমি জবরদখলের অভিযোগ তুলে ওইসব গৃহহীন মানুষকে বন আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জেলে বেলায়েত, সেলিম গাইন, নুরুল ইসলাম, আহম্মদ, গিয়াস উদ্দিন, ইকবাল, ফিরোজ বেপারী, শফি মেম্বারসহ আরো অনেকে অভিযোগ করেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘরপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রথমে ঘর নির্মাণের সুযোগ দেন। ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করার আগে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা পরিশোধে বিলম্ব হলেই বন বিভাগের জমি জবরদখলের অভিযোগে মামলায় জড়িয়ে দেন। অসংখ্য পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘর নির্মাণের সুযোগ দিয়েছেন। তাদের মতো যারা বাকি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন কেবল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
মাঝের চরের বাবুল বেপারী জানান, রেঞ্জার চন্দ্র শেখর দাস ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ঢালচরের মাঝের চর এলাকায় বাড়ি করার সুযোগ করে দেন। তিনি বাড়িও করেছেন। এখন তাকে গাছ বিক্রির মামলায় আসামি করে দিয়েছেন। বাবুল বেপারীর অভিযোগ, রেঞ্জার চন্দ্র শেখর নিজেই গাছ বিক্রি করেছেন। এখন আবার নিজেই ওই গাছ বিক্রির দায়ে আমাকেসহ অন্যদের আসামি করেছেন।
মেঘনার ভাঙনে বিলীন ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সবুজকে ৪টি, ২নং ওয়ার্ডের আয়ুব আলীকে ৩টি, ৪নং ওয়ার্ডের বাবুল বেপারীকে ৬টি এবং ৫নং ওয়ার্ডের কামরুল পাটওয়ারীকে ৪টি মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত এক বছরে ঢালচরের নদী ভাঙনে গৃহহীন অন্তত দেড়শ ব্যক্তিকে জড়িয়ে এমন ৩০টি মামলা দেয়ার তথ্য মিলেছে। গৃহহীন মানুষের কাছ থেকে বসতি স্থাপনের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালচরজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। বিক্ষুদ্ধ মানুষ গত সোমবার এসব মামলার প্রতিবাদে ঢালচরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢালচর বন বিভাগ রেঞ্জার চন্দ্র শেখর দাস বলেন, বনের জমি ও বন নষ্ট করার দায়ে মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা দেয়ার কারণে ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা আমার বিরুদ্ধে অহেতুক টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল মতিন খান বলেন, বন বিভাগ মামলা দিলে আদালত থেকে আমাদের কাছে মতামত চেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে পূর্বঢালচরে বন্দোবস্ত দেয়া জমিতে ঘর নির্মাণের ঘটনায় বন বিভাগ মামলা দিলেও আদালত তা খারিজ করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন কেনো বন্দোবস্ত দেয়ার বিষয়ে আপাদত সময় নেয়া হচ্ছে। ঢালচরের দক্ষিণে নতুন নতুন চর ভূমি জাগতে শুরু করেছে। নতুন বন্দোবস্ত দেয়ার ক্ষেত্রে এসব নতুন চরভূমির স্থায়িত্ব এবং ম্যানগ্রোভ বাগানের গুরুত্বের বিষয়টি মাথায় রাখতেই হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়