চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

বেড়েছে পুকুর খনন : বড়াইগ্রামে অবাধে ধ্বংস করা হচ্ছে কৃষিজমি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আবু সাঈদ, বড়াইগ্রাম (নাটোর) থেকে : বড়াইগ্রামে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষিজমিতে অবাধে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কৃষিজমির এমন ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসনের ভূমিকা তেমন লক্ষ্য করা যায় না। নামমাত্র কিছু অভিযান চললেও পুকুর খননকারীরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই অবাধে চলছে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন। এতে করে শুধু কৃষিজমিই নষ্ট হচ্ছে না, পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর এ গাড়ির বেশির ভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক। ১৫-২০ বছর বয়সি এই চালকদের কোনো গাড়ি চালানোর বৈধ কাগজপত্র নেই।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড়াইগ্রাম উপজেলার তারানগর, সরিষাহাট, শ্রীরামপুর, বাগডোব, বাজিতপুর, মানিকপুর, আদগ্রাম, পিওভাগ, বনপাড়া, রাজাপুর, জোয়াড়ী, আহমেদপুর, কামারদহ, কুমরুল ও জোয়াড়ীয়াসহ এলাকায় অসাধু মাটি ব্যবসায়ী আদম আলী, জনি, উজ্জ্বল রহমানসহ অনেকেই তিন ফসলি জমিতে খনন করছেন পুকুর।
এ মূহূর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক এক্সেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন চলছে। এতে প্রতিদিন উপজেলায় ১৫ থেকে ২০ বিঘা আবাদি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। যার কারণে দিনের পর দিন ফসলি জমির পরিমাণ কমেই চলেছে।
উপজেলার ধানাইদহ কয়েন বাজার এলাকার মাটি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, এক একর জমিতে ১০ ফুট গভীর পুকুর খনন করলে মাটি উত্তোলন হয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ গাড়ি। গাড়িপ্রতি এক হাজার ১০০ টাকা হিসেবে এই পরিমাণ মাটির দাম প্রায় ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
উপজেলার গাড়ফা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, ফসল চাষাবাদে সেচ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক ইত্যাদির খরচ বেশি। কিন্তু তুলনামূলকভাবে মৎস্য চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় পুকুর খননের দিকে ঝুঁকেছে অধিকাংশ কৃষক।
ভুক্তভোগী কৃষক সাইপুর রহমান বলেন, মাঠে যেভাবে পুকুর খনন করছে, এভাবে পুকুর খনন করলে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত হ্রাস পাবে।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পুকুর খনন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তিন ফসলি জমির পরিমাণ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল এক লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৩ হেক্টর। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৮৭ হেক্টরে। কৃষিজমি কমছে। আমরা মিটিংয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব। তিন ফসলি জমি কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।
নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, পুকুর খনন অনেক বেড়ে গেছে। গত ৫ বছরে নাটোর জেলায় মাছ উৎপাদন বেড়েছে ৯ হাজার ৫০০ টন। কারণ, ২০১৩-১৪ মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৪ হেক্টর, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ছিল এক লাখ ৫০ হাজার ৮৩৮ হেক্টর, ২০১৫-১৬ মৌসুমে তা কমে হয় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৩ হেক্টর। ২০২২-২৩ মৌসুমে তা আরো কমে গেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় পুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার। তা ২০২২-২৩ মৌসুমে বেড়ে অনেক বেশি হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই চাই না, জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করা হোক। নাটোরে যে পরিমাণ মাছের চাহিদা রয়েছে, তার থেকে বেশি উৎপাদন হচ্ছে।
সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই এ উপজেলায় কৃষিজমি কেটে পুকুর বানানো যাবে না। এটা আমারও জোর দাবি।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, পুকুর খনন বন্ধে আমরা যেখানে যখন খবর পাচ্ছি, উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করছি।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. মারিয়াম খাতুন জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলাসহ নাটোর জেলাজুড়েই ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বিধিবিধানের মধ্যে থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়