উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

যশোর হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদীচী : ‘দুই যুগেও হয় না বিচার এই লজ্জা-অপমান কার’

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ৬ মার্চ যশোর হত্যাকাণ্ডের দুই যুগপূর্তি। এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার’ এই স্লোগানকে ধারণ করে ৪, ৫ ও ৬ মার্চ তিনদিনের এ কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হবে যশোরে। এ কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম, ইকরামুল কবির ইল্টু, জামসেদ আনোয়ার তপন এবং সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
লিখিত বক্তব্যে অমিত রঞ্জন দে বলেন, ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায়ে আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়ে আদালত তিরস্কার করে বলেছিলেন, কোনো রকম তদন্ত ছাড়া এই বোমা হামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। বলা বাহুল্য, যশোর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে সরকার সীমাহীন অবহেলা দেখিয়েছে। ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে আছে। এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, উদীচীর ওপর বোমা হামলার সুষ্ঠু বিচার হলে হামলাকারীরা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সংঘটিত বোমা হামলার সুযোগ পেত না। যশোর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান পরবর্তী সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তার সূত্র ধরে দুজনকে গ্রেপ্তার করার পরও অজ্ঞাত কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের পর মামলাটির তদন্তের ভার সিআইডির হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি।
তিন দিনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জানান, যশোর হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানায় উদীচী। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার! এই লজ্জা ও অপমান কার?’- এই শ্লোগান নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হবে যশোর শহরে। তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ৪ মার্চ : ‘রং তুলিতে প্রতিবাদ’ শীর্ষক ২৪ জন চিত্রশিল্পীর চিত্রাংকন, গ্রাফিতি অংকন; ৫ মার্চ : সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা এবং ৬ মার্চ : বিকাল তিনটায় যশোর টাউন হল ময়দানে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। ওইদিন বিকাল সাড়ে চারটা থেকে যশোর টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সমাবেশ, প্রদীপ প্রজ¦ালন, মশাল মিছিল ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত যশোর হত্যাকাণ্ডের শত ছবির প্রদর্শনীও থাকবে। ৬ মার্চ যশোরে আয়োজিত কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাকর্মী ছাড়াও খুলনা বিভাগ,
বরিশাল বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের পদ্মাপারের জেলা ও শাখাগুলোর বন্ধুরা অংশ নেবেন। এছাড়া দেশের সব জেলা ও শাখায় যশোর হত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মাহমুদ সেলিম বলেন, সংস্কৃতি মানুষকে জাগিয়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার- এ কথাটি উদীচী যেমন বোঝে তেমনি ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও বোঝে। সেজন্যই বারবার উদীচীসহ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক শক্তির ওপর হামলা চালায় তারা। কিন্তু সংস্কৃতির এই শক্তি সম্পর্কে স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সচেতন?
ইকরামুল কবির ইল্টু বলেন, শুধু গান গাইতে গিয়ে কাউকে বোমার আঘাতে মরতে হবে- এটা কেউ স্বাধীন দেশে কল্পনাও করতে পারেনি। বোমা হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আহতদের পুনর্বাসনের জন্য উদীচী সাধ্যমতো চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।
বদিউর রহমান বলেন, একটি স্বাধীন দেশে যদি সংস্কৃতিকর্মী হত্যা মামলার বিচার না হয়, তাহলে এই স্বাধীনতার কী মানে? একটি ন্যায়বিচার যদি চেয়ে নিতে হয় তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, যতদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হবে তত দিনই রাজপথে সোচ্চার থাকবে উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়