প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : নিজ গ্রাম বাগেরহাটের রামপালের শ্রীফলতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হক। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেয়া হয় শিল্পীর মরদেহ। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, চারুকলা অনুষদের কর্মচারী ও শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় মরদেহ জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন মাহমুদুল হক। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে ও দেশ বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, অধ্যাপক মাহমুদুল হক ছিলেন দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন চিত্রশিল্পী। স্বনামধন্য এই শিল্পী পেইন্টিং ও ছাপচিত্রে সমান প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার ক্যানভাসে শিল্পের নানা মাধ্যমের প্রভাব শিল্প অনুরাগীদের আকৃষ্ট করেছে। চিত্রশিল্পের বিকাশ এবং নৈসর্গিক শিল্পকর্মের জন্য গুণী এই শিল্পী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। উপাচার্য
তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মাহমুদুল হকের জন্ম ১৯৪৫ সালে রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামে। তিনি ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকারি চারু ও কারুকলা কলেজ (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে বিএফএ এবং পরে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় এমএফএ ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি ছাপচিত্রের ওপরে জাপান থেকে দুই বছরের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছাপচিত্র বিভাগের প্রধান, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে এবং পরে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দেশে-বিদেশে শিল্পী মাহমুদুল হকের শিল্পকর্মের ৩৯টি একক এবং অনেক যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে জাপানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান লাভ করেন। এ ছাড়া জাপানের সুচিউরা সিটি শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা পুরস্কার, ১৯৯২ সালে ১০ম জাতীয় শিল্পকলা প্রদর্শনীতে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার’, ১৯৯৩, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে টানা তিনবার এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে সম্মানসূচক পুরস্কার, কুয়েত আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে দ্বিতীয় পুরস্কার, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের ‘সুলতান পদক’সহ দেশে-বিদেশে অনেক পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। দেশে জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগ্রাহক এবং বিদেশের অনেক চিত্রশালায় তার শিল্পকর্ম সংগৃহীত রয়েছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।