রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন, পুড়ল সহ¯্রাধিক ঘর

আগের সংবাদ

তিন জট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা > নাসিক নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মতামত : জলজট, যানজট ও আবর্জনা জট নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা

পরের সংবাদ

আইভীর হেদায়েতে দোয়া করবেন শামীম ওসমান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনতু রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, কোনো দলমতের কারণে আমি রাজনীতিতে আসিনি। রাজনীতি করতে এসেছি জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে। রাজনীতি করতে এসেছি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে। আমি নৌকার বিরুদ্ধে নই, নৌকা প্রতীক আমাদের রক্ত দিয়ে কেনা প্রতীক। নৌকার হয়ে মাঠে নামলাম। এই ঘাঁটি নৌকার, এ মাটি আওয়ামী লীগের। জয় আমাদের হবেই। সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে ভোটের ছয় দিন আগে গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় বাঁধন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদ বাদল, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজি আসাদুর জামান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল, সাবেক পিপি ওয়াজ উদ্দিন খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ‘গত নির্বাচনে আইভিকে নৌকা মার্কা শাড়ি দিয়েছিলেন, এবার কী দিবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, গতবার শাড়ি দিয়েছিলাম এবার তার (ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী) হেদায়েতের জন্য দোয়া করব। সংবাদ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও শামীম ওসমান ব্যক্তি আইভীর পক্ষে কিনা সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকল সংবাদ সম্মেলনের তার বক্তব্যের মধ্যেই। কেননা, সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম একবারো উচ্চারণ করেননি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য। উল্টো বলেছেন, এখানে কে প্রার্থী, হু কেয়ারস। কলাগাছ, না আমগাছ- সেটা দেখার বিষয় নয়। এটা বঙ্গবন্ধুর নৌকা। নৌকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচন এলেই আমাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নির্বাচনের সময় আমি কেন সাবজেক্ট ম্যাটার হবো, জানতে চাই। এখন আমার অবস্থা গরিবের ভাবির মতো। ও বলে আমি তার, সে বলে আমি তার। শামীম ওসমান বলেন, সামনে যেদিন আসছে, কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। ছাত্রলীগের মনে কষ্ট দিয়েন না। দুঃসময়ে তারাই এগিয়ে এসেছিল। নির্বাচন ধমক দিয়ে হয় না। একে অপরকে দোষারোপ করে নির্বাচন হয় না। সব রাগ অভিমান ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে হবে। সবার ঘরে ঘরে যেতে হবে। এই ঘাঁটি নৌকার, এ মাটি আওয়ামী লীগের। জয় আমাদের হবেই। তিনি আরো বলেন, আজ থেকে নৌকার হয়ে মাঠে নামলাম। আমরা যখন জাগব অন্যরা তখন ঘুমাবে। আমাদের রক্ত মুক্তিযোদ্ধার রক্ত। বঙ্গবন্ধু আমাদের শেষ ঠিকানা। আমি কারও সামনে মাথা নত করি না। আমি নিজেই ঝড়, এই ঝড় কারও সামনে মাথা নোয়ায় না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকাকে ডুবিয়ে দেবে। হাতি সাইজে বড় হতে পারে; আমরা হাতি কাঁধে নিয়ে দৌড় দেব, কিন্তু নৌকার ওপর উঠতে দেব না। আপনাকে গডফাদার কেন বলা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও ইচ্ছা হলে গডফাদার বলে, বলতে পারে। কেউ ব্রাদার বলতে চাইলে বলতে পারেন। আবার ফাদার বললে পারেন, তবে মাদার বলেন না। তবে কে কী বলল আমি কেয়ার করি না। কেউ কিছু বলে শান্তি পেলে বলুক, বলতে দেন। আমি নীলকণ্ঠের মতো, সব হজম করতে পারব।
সংবাদ সম্মেলনে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, পাশের এলাকায় ফতুল্লায় কয়দিন আগে নির্বাচন হলো। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলো। কেউ টেরও পেল না। আমিও গেলাম না। কথাও হলো। কোনো কথাও বললাম না। কিন্তু এই নির্বাচনটা (নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন) এলেই কেন জানি একটা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। আমি এই কয়দিন চুপ ছিলাম এই ভেবে, সংসদ সদস্য হিসেবে আইনগতভাবে এটা (প্রচারণা) আমার কাজ নয়। কিন্তু চুপ থাকায় বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। কেউ দলের উল্টা দিক থেকে হেঁটে ক্ষতি করছে, কেউ দলে থেকে ক্ষতি করছি। তাই ভাবলাম কথাগুলো বলা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এনে শামীম ওসমান তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জামান, তার মা নাগিনা জোহা এবং প্রয়াত ভাই নাসিম ওসমানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমি কাউকে ব্লেইম করি না। আপনারা এখানে অনেকে আছেন। আল্লাহ সাক্ষী। কবরস্থান যখন শ্মাশানের মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে, আমি শুধু বলেছিলাম, ইবলিশ-শয়তানের কাজ। অবশ্যই এটা ইবলিশ-শয়তানের কাজ। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছিল একজনের নাম ধরে, একজন মহিলার নাম ধরে। আমি তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলাম, তার নাম কেন বলো, সে তো কোনো সাবজেক্ট না! কারণ আমার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু, একটা প্রেস রিলিজ আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল। শামীম বলেন, এখনো সেটাই চাই। আল্লাহর কাছে মাফ চান। অনুরোধ করব, আল্লাহর কাছে মাফ চান। আমাদের সবাইকে একদিন যেতে হবে। যেতে হবেই। আল্লাহর কাছে মাফ চান। ওনার কাছে মাফ চাইলে কিছু হবে না।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে আইভী-শামীম দ্ব›দ্ব বহু দিনের। ২০১১ সালের নির্বাচনে শামীমকে হারিয়ে প্রথম মেয়র হন আইভী। এবারের নির্বাচনে আইভীর মূল প্রতিদ্ব›দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির প্রতীক ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। নির্বাচনের জমজমাট প্রচারের মধ্যে আইভী তার প্রতিদ্ব›দ্বী তৈমূর আলম খন্দকারকে ‘ওসমান ভাইদের’ প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও তৈমূর দাবি করেছিলেন, তিনি ‘জনগণের প্রার্থী’, কারো সঙ্গে তার ‘পারসোনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ নেই। এই দুই প্রার্থীর এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর সংবাদ সম্মেলনে আসার ঘোষণা দেন শামীম ওসমান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়