ডিএমপি কমিশনার : স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ থাকলে মামলা নয়

আগের সংবাদ

ইইউ-চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অঙ্গীকার > ৫০ বছরেই ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ : এক হাজার কোটি ডলার তহবিলের নিশ্চয়তা, উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা

পরের সংবাদ

আমির হোসেন আমু : রাত ২ টা ২০-এ ব্রাশ ফায়ারের শব্দ পাই

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারের অভ্যন্তরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমিও গ্রেপ্তার হই। আমি সেদিন কারাগারে চার নেতার সঙ্গেই ছিলাম। তিনটি রুমের মধ্যে ১ নম্বর রুমে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমেদ। ২ নম্বর রুমে ছিলেন কামরুজ্জামান আর তিন নম্বর রুমে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সঙ্গে অপর একটি খাটে আমি ছিলাম। কারাগারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আলোচনা শুনতাম। হঠাৎ শুনলাম, সরকারের তরফ থেকে জাতীয় চার নেতার সঙ্গে আলোচনা করা হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সামসুল সাহেব যিনি পরবর্তীকালে রাশিয়ার অ্যাম্বাসাডর ছিলেন, তিনি জেলগেটে সাক্ষাৎ করতে এসে তাজউদ্দীনকে বলেছিলেন এই সাক্ষাৎকারের কথা। এরপরেও জেলখানায় আমরা কোনো পরিবর্তন দেখিনি। বরং, একটা গুমোট ভাব বিরাজ করছিল। কারো মুখেই কোনো হাসি ছিল না। আলোচনার খবরটা শুনে আমি বলেছিলাম, এটা অবাস্তব কথা। কারণ, খন্দকার মোশতাক চার নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষমতা ভাগাভাগি মোশতাক করবে- এটা বিশ্বাস হয় না। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসের ৪৬তম বছরে সেদিনের স্মৃতিচারণ করে গত সোমবার তিনি এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হঠাৎ ২ নভেম্বর রাত। আমরা প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার এশার নামাজের পর রুমে মিলাদ ও দরুদ শরিফ পড়তাম। সেদিন ছিল রবিবার। রাতের খাবার শেষ করে এশার নামাজ পরে যখন মিলাদ পড়ব। মনসুর আলীকে ডাকলাম। উনি বললেন, ‘আমার জ¦র, আমি অসুস্থ, আমি খাটের ওপর বসেই মোনাজাত ধরব।’ মিলাদ ও দরুদ শরিফ পড়া শেষে যে যার মতো খাটে গেলাম। কেউ কেউ শুয়ে পড়ল। হঠাৎ রাত দেড়টা থেকে পৌনে ২টার দিকে আমাদের রুম খোলার শব্দ শুনলাম। জেলার এসে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে বললেন, আপনি একটু আসুন, আলোচনা আছে। মনসুর আলী পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরা ছিলেন, হাতে তসবিহ ও মাথায় টুপি ছিল। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি গেলেন। পরে জানলাম কামরুজ্জামান তাদের ৪ জনকে একটি রুমে রেখে বাকিদের বের করে দেন। চার নেতাকে বলা হয়েছিল ‘আপনারা বসুন, আলোচনা আছে’। চার নেতাকে পাশাপাশি বসিয়ে হঠাৎ ব্রাশ ফায়ার করা হলো। রাত তখন ২টা ২০ মিনিট। এর ১৫/২০ মিনিট পর আবার ব্রাশ ফায়ার। পরে জানতে পারলাম, প্রথম ব্রাশ ফায়ারের পর মনসুর আলী জীবিত ছিলেন। মরেননি, গঙ্গাচ্ছিলেন, পানি চাচ্ছিলেন। তখন তারা আবার ফেরত এসে বেয়নেট চার্জ করে গুলি করে মনসুর আলীর মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আমির হোসেন আমু বলেন, জেলখানা হলো মানুষের একটি সুরক্ষিত জায়গা। এখানে মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা অন্য কোনোভাবে থাকতে পারে না। সেই সুরক্ষিত জায়গায় মোশতাক সরকারের ছত্রছায়া ও নির্দেশনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটল। প্রথম ব্রাশফায়ার হয়েছিল রাত ২টা ২০ মিনিটে। আলোচনার নামে ডেকে নিয়ে চার নেতাকে শেষ করে দেয়া হলো।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, একই দিনে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যা, শেখ ফজলুল হক মনির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার মধ্য দিয়ে মনে হচ্ছিল এটা একটা পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। কিন্তু আড়াই মাসের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে হত্যার মধ্য দিয়ে মানুষের সামনে পরিষ্কার হতে লাগল যে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রীক নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধ জাগ্রত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের আশাআকাক্সক্ষা হত্যার যে সূচনা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতা হচ্ছে ৩ নভেম্বরের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেননি। আজকের যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এই জায়গায় এসেছে, সেটা আসত না, যদি না শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না আসতেন। কারণ, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতির সূচনা হয়েছিল। সেই ধারা ছিল সাম্প্রদায়িকতার ধারা, যে সাম্প্রদায়িকতা এখনো হঠাৎ করে গর্জে ওঠে। যে সাম্প্রদায়িকতা এখনো মানুষের জীবন নেয়ার চেষ্টা করে, মানুষের জীবনের ওপর হানা দেয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর হামলা করে, বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে এই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অবসান ঘটিয়েছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সংবিধান থেকে অসাম্প্রদায়িকতা তুলে দিয়ে আজকে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তাতে স্পষ্ট সেই বীজ এখনো আছে। সুযোগ পেলেই তারা মাথাচারা দিয়ে ওঠে।
আমি মনে করি, ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় এই চার নেতাকে হত্যা এবং পরবর্তীকালে অনেক হত্যা, সামরিক বাহিনীর মধ্যে হত্যা, বাইরে হত্যা, আমাদের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে হত্যা, মিথ্যা মামলা, খুন-গুম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে এই দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা। এই দেশকে পাকিস্তানে রূপান্তর করার ষড়যন্ত্র ছিল। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে আমরা উল্টো ধারা অর্থাৎ আমাদের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়