তরুণীরাই মূল টার্গেট : একটি চক্রের হাতে ২ হাজার নারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক

আগের সংবাদ

সিসিটিভির আওতায় আসছে রাজধানী : এ মাসেই হতে পারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

পরের সংবাদ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের নেপথ্যে তিন টাইগার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছিল ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই আসরে বাংলাদেশের বড় কোনো অর্জন নেই। তবে বাংলাদেশ আসরটি শুরু করেছিল দুর্দান্ত জয় দিয়ে। প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা হারিয়েছিল ক্যারিবীয়দের। ওই আসরে আশরাফুল, আফতাব ঝড়ে এবং সাকিব ঘূর্ণিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয়রা বাংলাদেশকে ১৬৫ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে লাল- সবুজের প্রতিনিধিরা ২ ওভার হাতে রেখেই পৌঁছে যায় লক্ষ্যে। ওই ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মোহাম্মদ আশরাফুল। অবশ্য আসরটিতে আর কোনো জয়ের দেখা না পেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় সাকিবদের।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে। আর ক্রিকেটের ঝাঁকজমকপূর্ণ আসর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল প্রথম অংশগ্রহণ করে ২০০৩ সালে। সেখানে ২০০৭ সালেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় সাকিবরা। নিজেদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুটা ভালোভাবে করতে না পারলে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগার শুরুটা করেছিল চমক দিয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ স্টেডিয়ামে দিনটা ছিল আফতার আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুলদের। ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ক্রিস গেইলদের ইনিংস থামে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রানে। বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান, আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ রাসেলদের কাছে ঘায়েল হয় ক্যারিবীয়রা। বোলারদের মধ্য সাকিব সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন ৩৪ রান দিয়ে। গেইলদের মিডল অর্ডার সেদিন একাই ধ্বসে দেন টাইগার অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ওই ম্যাচে ২৫ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। ম্যাচের শুরুটা করেন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার সৈয়দ রাসেল। সুইংয়ে কাবু করে তিনি শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান ক্যারিবীয় দানব ক্রিস গেইলকে। একইসঙ্গে কিপ্টে বোলিংয়ে রাসেল এক মেইডেন দিয়ে সে ম্যাচে রান দেন মাত্র ১০। তবে আশরাফুল, ফরহাদ রেজা, মাশরাফিরা বোলিংয়ে চমক দেখাতে না পারলে ক্যারিবীয়রা ১৬৪ রানে পৌঁছে যায়।
জোনানেসবার্গে সেদিন দর্শকরা গেইল ঝড় দেখতে না পারলেও দেখেছেন আশরাফুল ঝড়। ম্যাচের শুরুতে অবশ্য বাংলাদেশ দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাজিম উদ্দিনকে হারিয়ে চাপে পরে। সেখান থেকে চাপ সামলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদ। দুজনে মিলে গড়েন ১০৯ রানের জুটি। সাতটি চার ও তিনটি ছয়ে ২৭ বলে ৬১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে আউট হন আশ্রাফুল।
অবশ্য দল ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিল জয়ের কাছাকাছি। ১৪.২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান। অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে দলের জয় এনে দেন আফতাব আহমেদ। আফতাব ৪৯ বলে খেলেন ৬২ রানের ইনিংস। এই ম্যাচে সাকিব ৯ বল থেকে ১৩ রান করে দলের জয়ে অবদান রাখেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ চার উইকেট হারিয়ে দুই ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যান। বিধ্বংসী ব্যাট করে ম্যাচসেরা হন আশরাফুল।
বিশ্বকাপের ওই আসরে টাইগাররা আরো চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সাবিক, তামিমরা নিজেদের রাঙাতে পারেনি আর কোনো ম্যাচে। ২০০৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর টাইগাররা বিশ্বকাপ মিশনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আয়োজক দশে দক্ষিণ আফ্রিকার। সে ম্যাচে আশরাফুলরা হেরেছিল ৭ উইকেট ব্যবধানে।
পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেট ব্যবধানে। এরপরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ১৪৮ রানের স্বল্প লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগাররা গুঁড়িয়ে যায় মাত্র ৮৩ রানে। নিজেদের বিশ্বকাপ মিশনের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেট ব্যবধানে।
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ লড়াইয়ে না থাকলে এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান ছিল মাঠের যুদ্ধের মহারণে। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তান আসরটির ফাইনালে যায়। আর অন্য সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৫ রানে হারিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠ যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় এশিয়ার দুই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবশ্য শিরোপা জিতে নেয় ভারত।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের ইনিংস থামে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানে। পাকিস্তানের বোলারদের ওপর একাই দাপট দেখান গৌতম গাম্ভীর। ভারতে এই ব্যাটসম্যান ৫৪ বলে খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস। লক্ষ্য বড় না হওয়ায় জয়ের সম্ভাবনা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে এদিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। ৩ বল হাতে থাকতেই সবকটি উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থেমে যায় ১৫২ রানে। ফলে ৫ রানে জয় পেয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নেয় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত।
এদিকে আগের ছয় বিশ্বকাপে ভালো না করতে পারলেও এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন উইজডেন।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১৫ সালে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে খেলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এ দুটি প্রতিযোগিতাই ছিল ৫০ ওভারের। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে বা ৫০ ওভারের খেলায় বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।
তবে ২০ ওভার অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হওয়া ছয়টি বিশ্বকাপের সবগুলোতেই খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাফল্য একেবারে শূন্য। বাংলাদেশ ছয়টি বিশ্বকাপে মোট ২৫টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় পেয়েছে পাঁচটিতে। আবার এ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিই হলো বাছাইপর্বে।
বাকি একটি ম্যাচ বিশ্বকাপের মূল পর্বে। মূল পর্বে একমাত্র জয়টি টাইগাররা পেয়েছিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এটি ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখালেও পরবর্তী সময়ে সেটি আর ধরে রাখতে পারেননি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এমনকি শেষ দুটি বিশ্বকাপের মূল পর্বেও সরাসরি খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাছাইপর্বের বাধা টপকে তবেই তাদের খেলতে হয়েছে মূল পর্বে। তবে এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবে। এছাড়া গত দুই বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে খেলতে হলেও টি-টোয়েন্টি দলের বর্তমান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছেন এখন থেকেই তারা চেষ্টা করবেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার জন্য।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচটি করে দশটি ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য-মুশফিকরা। এর মধ্যে জয় পেয়েছেন সাতটিতে। দুই দেশের বিপক্ষেই সিরিজ জিতেছে তারা। আর এসব বিষয় বিবেচনা করেই উইজডেন বাংলাদেশকে ডার্ক হর্স হিসেবে অভিহিত করেছে।
বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। এখন এবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া স্কোয়াডের সদস্যরা যদি নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের মতো জ্বলে উঠতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে ভালো কিছুই করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়