আশুলিয়ায় ফার্নিচার গুদামে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

আগের সংবাদ

বাতাসে আগুনের হলকা!

পরের সংবাদ

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে আট মাসে ৪১৩ অগ্নিকাণ্ড : বিধিবিধান মানছে না কারখানা মালিকরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম নজরুল ইসলাম, গাজীপুর থেকে : রাজধানী ঢাকার পাশে গাজীপুর শিল্পজেলা হিসেবে অনেক আগেই পরিচিতি লাভ করেছে। জেলাটিতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। অবৈধ ঝুট গোডাউন রয়েছে ২ হাজারেরও বেশি। কিছুদিনের মধ্যেই আরো বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু শিল্প কারখানা করার ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান মানছে না বেশির ভাগ শিল্প মালিকরা। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পরিবেশ দূষণ এড়াতে প্ল্যান্ট স্থাপন, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ অন্তত ১৫-১৬টি জরুরি বিধি এবং নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসবের তোয়াক্কা করছেন না মালিকরা। এ অবস্থায় সাম্প্রতিককালে বহু শিল্প কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা আলোচনা জন্ম দেয়। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি- এই আট মাসে গাজীপুরে ৪১৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দায় চাপিয়েছে একে অন্যের ওপর।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, গোডাউনগুলোতে সেফটি মেজার একেবারেই নেয়া হয়নি। গাজীপুর একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। এখানে প্রায় ২৬ লাখ শ্রমিক মিল কারখানায় কাজ করে। এরা যে বিভিন্ন কলোনিতে থাকে সেই জায়গাগুলি খুব সংকীর্ণ এবং এখানে প্রতি বছরই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে কোনাবাড়ী আমবাগ এলাকায় ঝুট গোডাউনের সংখ্যা বেশি। আবাসিক এলাকায়ও তারা ঝুট গোডাউন করেছে। এসব গোডাউনে আগুন লাগলে নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এসব স্থানে কোনো ধরনের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে না।
তিনি আরো বলেন, যারা ব্যবসাবাণিজ্য করেন, তারা যেখানেই করেন না কেন, হোক সেটা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে, অবশ্যই সবার উচিত সেখানে অগ্নিপ্রতিরোধের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটা নিজ উদ্যোগেই করতে হবে। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আমরাও সার্ভে করছি, মহড়া করছি, টপোগ্রাাফি করছি, মানুষের মধ্যে অ্যাওয়ারনেস বিল্ডাপ করছি যে আগুন লাগলে কি কি করতে হবে। যদি আমরা সচেতন হই তাহলে, আমার মনে হয়, অগ্নিকাণ্ড কমে আসবে। মাত্র আট মাসে ৪১৩টি আগুন লাগার ঘটনাকে আশঙ্কাজনক মনে করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও। এ ব্যাপারে তাদের দায়বদ্ধতা কতোটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে রাজস্ব কর্মকর্তা আ. রশিদ বলেন, নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ সিটি করপোরেশনে আবেদন করলে আমরা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকি। কেলমাত্র নবায়নের ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ নিয়ম মানছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমরা তা যাচাই করে দেখি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান নথিভুক্ত নয়, তাদের ব্যাপারে খুব বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করছে কিনা, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় পরিবেশবিদ অধ্যাপক অসিম বিভাকর। তিনি সরাসরিই অভিযোগের আঙুল তুললেন এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে। বললেন, তারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। আমরা সাম্প্রতিককালে দেখছি একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এর মধ্যে গত ৮ মাসে ৪১৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এই গাজীপুরে। এটি আসলেই অস্বাভাবিক ঘটনা। কেননা একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরেই অন্য সব কারখানার সতর্ক হয়ে যাবার কথা। একটি কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটার পর মনে হতেই পারে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু পরপর যখন দশটি কারখানায় আগুন লাগে, তখন কিন্তু অন্য কারখানাগুলোর সতর্ক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি পরপর ৪১৩টি ছোট বড় কারখানায় আগুন লেগেছে। তারপরেও তারা সতর্ক হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারখানার মালিকরা হয়তো ভাবছেন যে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তাদের তো কোনো আর্থিক ক্ষতি নেই। কারণ তাদের কারখানাগুলো ইন্স্যুরেন্স করা থাকে।
অপরদিকে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ যারা এই কারখানাগুলো প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছিলেন অথবা যারা কারখানাগুলোকে অনুমোদন দিয়েছেন, সেই কারখানা প্রতিষ্ঠার যে নির্দিষ্ট শর্ত, সেই শর্ত তারা পূরণ করছে কিনা? কিংবা কারখানা প্রতিষ্ঠার পরে নিয়ম মেনে চলছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার না করলেও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, শীতকাল শেষ হওয়ার পরেই গরমের দিনে সারাদেশেই কম-বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে থাকে। গাজীপুরে প্রচুর শিল্প কারখানা। অন্যদিকে ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখানে বেশি দেখা যায়। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ফায়ারের সনদ হালনাগাদ করা নেই, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস সবগুলো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে আমাদের কাছে রিপোর্ট করবে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের কিছু উদ্যোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেখা যায় যে অগ্নিকাণ্ড খুব ছোট আকারের হয় কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক ভাইদের সঠিকভাবে এই বিষয়ে ট্রেনিং বা ধারণা না থাকায় আগুন বেশি ছড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে শ্রমিক ভাইদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং একটি ফায়ার টিমও গঠন করে দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা সহজেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।
এদিকে, ঝুট ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন আগুন আতঙ্কে। কিন্তু ব্যবসার কোনো বৈধ ভিত্তি না থাকায় সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি এদের কেউই। তবে, টেলিফোনে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার ঝুট ব্যবসায়ীদের সংগঠন একতা সমিতির সভাপতি আনোয়ার পারভেজ বলেন, আগুন প্রতিরোধে যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা তারা করেন। ঝুট ব্যবসা অল্প জায়গায় অনেক বেশি হওয়ায় সবকিছু মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়