কাগজ প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য অনেক সস্তা। এ কারণে তামাকপণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। তামাক ব্যবহারে ক্যান্সারসহ নানা রোগ-ব্যাধিও বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম ও কর কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। এক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্য সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য ক্রমান্বয়ে সস্তা হয়ে পড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। তামাকের কারণে লাখ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু, অসুস্থতা, পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় এনে আসন্ন বাজেটে সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য খাতের মতো তামাকপণ্য খাতেও দুষ্টচক্র আছে। তাই অনেক বছর ধরে তামাকের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ দুষ্ট চক্রকে দমন করতে হবে। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তিনি বলেন, তামাকের ব্যবহার কমাতে জনসচেতনতা বাড়ানো ও প্রচারাভিযান চালাতে হবে। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বর্তমানে পঁচাত্তর শতাংশ সিগারেট ব্যবহারকারী নি¤œস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এ স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৮ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয় যে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙাশ মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন বক্তারা। এসবের মধ্যে রয়েছে, নি¤œ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ। মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা। এ তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখা। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
এ সময় বক্তারা বলেন, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ মোট এগার লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার (বাংলাদেশ) মো. আব্দুস সালাম, আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।