মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

মমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ : জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটে ভাগান্তিতে রোগীরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি চিকিৎসাসেবায় দেশসেরা খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থী রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ নিয়ে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে হৃদরোগীদের শয্যা রয়েছে মাত্র ৭১টি। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকে ২৮০ জন। ফলে নির্ধারিত শয্যা ছাড়িয়ে সেবাপ্রার্থী রোগী ছড়িয়ে পড়েছেন হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির সামনের অংশসহ প্রবেশ পথগুলোতেও। কিন্তু রোগীদের এই বাড়তি চাপ সামলাতে ১৯৭২ সালের পর বাড়ানো হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে নেই কোনো প্রফেসর পদ। ফলে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক সংকটে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিত খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে হৃদরোগী ও তাদের স্বজনরা। ভুক্তভোগীরা জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো জটিল রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাকে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি (হৃৎপিণ্ড পরীক্ষার রোগনির্ণয় পদ্ধতি) করার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে পরীক্ষার মান বিবেচনায় পরীক্ষাটি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে করারও পরামর্শ দেন তারা। কিন্তু হাসপাতালের নতুন ভবনের চারতলা কার্ডিওলজি বিভাগের ইকো কক্ষে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারীরা পরীক্ষার সিরিয়াল দেয় দুই থেকে তিন মাস পর। এ অবস্থায় রোগী এবং স্বজনদের প্রশ্ন, ইকো পরীক্ষা করতে যদি দুই বা তিন মাস সময় লাগে। তবে চিকিৎসা হবে কখন?
নগরীর মাসকান্দা এলাকার বাসিন্দা লিপি (৪৫) নামের এক ভুক্তভোগী জানান, গত কিছুদিন ধরে হৃদরোগ এবং হাড়ব্যথা রোগে ভুগছি। এ কারণে সম্প্রতি সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা আমাকে কালার ডপলার ইকো করে দেখা করতে বলেছেন। এরপর ১ এপ্রিল হাসপাতালে ইকো করতে গেলে তারা আমাকে আগামী পহেলা জুন সকাল ৮টায় যেতে বলেছেন। এই অবস্থায় আমার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। একই সমস্যায় রয়েছেন হাসপাতালের ভর্তি ও চিকিৎসা নেয়া আরো কয়েকশ সেবাপ্রার্থী রোগী। এই অবস্থায় হাসপাতালের প্যাথলজিতে ইকো পরীক্ষা করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা, লাভবান হচ্ছে বেসরকারি প্যাথলজিগুলো।
ভোগান্তির কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিনের সময়ে অর্থাৎ বিগত তিন বছর আগে কার্ডিওলজি বিভাগে ইকো পরীক্ষার মেশিন ছিল ৩টি। বর্তমানে মাত্র একটি মেশিনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ইকো পরীক্ষার কাজ। ফলে রোগীদের ভিড়ে এই দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা।
কার্ডিওলজি বিভাগের কর্মচারী মো. কামাল জানান, ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার তথ্য জানানো হয়।
হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, বর্তমানে রোগীর চাপ বেশি। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। নেই প্রফেসর পদ, তারপরও অল্প জনবলেও রোগীদের সেবার কোনো ঘাটতি নেই। তবে হৃদরোগ বিভাগে আগে তিনটি ইকো মেশিন থাকলেও বর্তমানে একটি মেশিনে কাজ চলছে। ফলে রোগীদের চাপে সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এ বিষয়টি বারবার পরিচালসকসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত তারা এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করেও হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে ইকো মেশিনের বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়