কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইলে আবারো হিযবুত তাহরীরের প্রচারণামূলক মেইল আসায় শঙ্কা প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শিক্ষার্থীদের ই-মেইলে হিযবুত তাহরীরের প্রচারণামূলক বার্তা আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ রাত ১২টায় সুবল দাস নামে (ংঁনধষফধং৯৮৯৭@মসধরষ.পড়স) ই-মেইল থেকে বুয়েটের সব বর্ষের অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইলে হিযবুত তাহরীর নামক নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন থেকে একটি পিডিএফ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তির টাইটেল ছিল ‘ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?’ এবং তারা সাধারণ ছাত্রদের এই নিষিদ্ধ সংগঠনের দিকে আহ্বান করে। এর আগেও পৃথক পৃথক ই-মেইল (ধংরভুধসধহফযধশধ১৯৯৬@মসধরষ.পড়স ও লঁহধুবফশধনরৎ৪.০ @মসধরষ.পড়স) ব্যবহার করে এ জাতীয় পিডিএফ পাঠানো হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বেনামি স্টিকারে কিউ-আর কোড দেয়া থাকে, যা স্ক্যান করলে হিযবুত তাহরীরের প্রচারণামূলক লেখা দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কৌশলে নিষিদ্ধ সংগঠনের এমন তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে আমরা বিভিন্ন সময় উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিষদ বরাবর অভিযোগ করি। কে বা কারা গোপনে এরূপ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা নিয়ে তদন্ত চলমান বলে আমাদের জানানো হয়। নির্দেশনা দেয়া হয়, আমরা যেন উপাচার্য, এডিএসডব্লিউ (অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, ডিরেক্টরেট অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার) এবং আইসিটি (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি) বরাবর অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করি। বিশেষ করে আজ রাতে গণহারে মেইল আসার পর আমরা সবাই অনতিবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাই। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে অনেকে এদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল স্টেপ নিতে জিডি করছেন।
এমন কর্মকাণ্ড বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, স্পষ্টতই হিযবুত তাহরীরের এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে সম্পূর্ণ তাদের দলীয় স্বার্থ হাসিল, প্রচারণা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করছি এবং তাদের বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা দেয়ার দাবিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। মূলত হিযবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। যখনই আমরা এরূপ সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেছি বা করব, তৎক্ষণাৎ তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে সর্বদা সচেতন আছি। পাশাপাশি আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ।
বিবৃতিতে মেইলসমূহের আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো নিষিদ্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনকে কোনোদিন বরদাশত করিনি, করি না এবং করব না। আমরা আমাদের উপাচার্যকে আহ্বান জানাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য ইনটেলিজেন্স এজেন্সির সহযোগিতায় আইসিটি সেল গঠন করে এসব ই-মেইলের আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানাই। নিষিদ্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের কোনো স্থান এই বুয়েটে হবে না এবং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করব।