সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে ঘন ঘন লোডশেডিং : বিপর্যস্ত জনজীবন, বেড়েছে চার্জার ফ্যান-লাইটের চাহিদা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অধিকাংশ এলাকায় দিনে আট থেকে দশবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে নগরের বাসিন্দারা ঘুমাতে পারছেন না। বিদ্যুৎ থাকছে না সেহ্রি-ইফতারের সময়ও। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আর আসছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিস্টেম কন্ট্রোল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল পিক আওয়ারে (সন্ধ্যায়) চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গেছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে ওই সময়ে চট্টগ্রামে লোডশেডিং হয়েছে ৪০০ মেগাওয়াট। এছাড়া সারাদিনে কমবেশি ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে নগরের আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বাকলিয়া, হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকায়। এসব এলাকা নগরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এর বাইরে পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলোশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাদারবাড়ী, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে। শহরের বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইউনিট- ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়বকুণ্ড, স›দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারীতে তিন-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ (চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চল)। এদিকে সপ্তাহখানেক ধরে চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে সাত ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের এই বিবরণের অনেক বেশি লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। তীব্র লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত দিনলিপির নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোমিনুর রহমান বলেন, সারাদিনে ছয় থেকে আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। নিস্তার নেই ইফতার-সাহরিতেও। ইফতারের আগে একবার ইফতারের পর আবার লোডশেডিং। সেহ্রিতেও একই অবস্থা। একবার গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসে। নগরের ষোলোশহর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই রমজানে ইফতারের সময় এবং সেহ্রিতে বিদ্যুৎ না থাকার মতো বিড়ম্বনা আর নেই। এই গরমের মধ্যে তীব্র লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলছে।
পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। এছাড়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে পানির স্তর কমে আসায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা দুদিন ধরে নাজেহাল অবস্থায় আছি। জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে আরো বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার মূল্য দিতে হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না দিয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়।’

অন্যদিকে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় তীব্র গরম আর অন্ধকারে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে জনজীবন। এতে রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। যাদের আইপিস বা জেনারেটর কোনোটাই কেনার সামর্থ্য নেই তারাই মূলত রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের ক্রেতা। নগরের তিন পুলের মাথা, রাইফেল ক্লাব, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লোডশেডিং বেড়ে যেতেই ইতোমধ্যেই দোকানগুলোতে বেড়েছে চার্জার ফ্যান-লাইটের ক্রেতা। প্রয়োজন অনুসারে দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন এসব পণ্য। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে এসব পণ্যের। বিভিন্ন মার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোডশেডিং শুরু হতেই চার্জার লাইট-ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের ইলেকট্রিক পণ্য কিনতে আসা পাথরঘাটার বাসিন্দা জুয়েল জানান, হঠাৎ করে রিচার্জেবল লাইট-ফ্যানের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়