মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই : মধ্যনগরে বোরোর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় কৃষক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে : মধ্যনগর উপজেলায় বোরো ফসলের নানামুখী বিপর্যয়ের সম্ভাবনায় শঙ্কিত কৃষক। খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল কৃষকের গোলায় উঠবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাস শুরু। এ সময় হাওরে শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষকের সর্বনাশ। সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণে ফসলহানির সম্ভাবনা কৃষকের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাওরের কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই জমিতে কোল্ড ইনজুরি, খোলপোড়া ও পাতাপোড়া রোগের কিছুটা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কিছু জমিতে পোকার আক্রমণও লক্ষ্য করা গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সর্বনাশা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হতে পারে বোরো ফসল। রয়েছে শিলাবৃষ্টি ও আগাম বন্যার হুমকি। হাওরে ফসল রক্ষায় নির্মিত নড়বড়ে বাঁধের ওপর ভরসা নেই তাদের। কৃষকেরা জানান, তারা শুধু বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই বোরো ফসলের ক্ষতি হলে পুরো বছর অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে।
মধ্যনগর উপজেলা কৃষি বিভাগের কার্যক্রম পাশের ধর্মপাশা উপজেলা থেকে পরিচালিত হয়। ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় এবার ৩১ হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার টন ধান। যার সম্ভাব্য মূল্য ৫০৫ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ সময়ে ঝড়-বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর ঝড়-বৃষ্টির অনেক সম্ভাবনা থাকায় এ বছর ব্লাস্ট রোগ ব্যাপকভাবে ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে। ধান গাছের বর্তমান বৃদ্ধি পর্যায়ে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে দেখা দিতে পারে। এখন ধান গাছে শিষ বের হচ্ছে বা ফুল বের হচ্ছে। শিষ ব্লাস্ট রোগ একবার হয়ে গেলে আর দমন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ঝড় বৃষ্টির পর জমিতে প্রথমেই ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া (বিএলবি) রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা যাবে। তবে এপর্যন্ত কোল্ড ইনজুরি, খোলপোড়া, পাতাপোড়া রোগের কিছু প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও ব্লাস্ট বা অন্যান্য রোগ এখনো দেখা যায়নি মধ্যনগরের হাওরে। কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে রোগে আক্রান্ত জমিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে আগাম পদক্ষেপ নিতে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকের সঙ্গে নিয়মিত উঠান বৈঠক, পরামর্শ সভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে দাবি করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, রোগ-বালাইসহ সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারলে এ বছর ভালো ফলন হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের মাঠকর্মীরা নিয়মিত মাঠে কাজ করছে। কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে, পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যা শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে রয়েছে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, যা হাওরে আগাম বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সেসঙ্গে রয়েছে শিলাবৃষ্টির ভয়। গত সপ্তাহে পাশের তাহিরপুর উপজেলায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি হাওরের বোরো ধান ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি হলে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের বোরো ফসলের ক্ষেত। পাউবোর প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়ে উপজেলার গোড়াডুবা হাওরের কৃষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও এলাইনমেন্ট থেকে বাদ দিয়ে হাওরের বোরো ফসলকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। আর যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোতে সঠিকভাবে কাজ হয়নি। সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে যদি বেশি বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের এখানে বন্যা দেখা দিতে পারে। মাসের শেষের দিকে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি কম হলে বন্যার শঙ্কা নেই।
তিনি আরো বলেন, সব উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে জিওব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ইঁদুর ও কাঁকড়ার গর্তের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়