মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

প্রণোদনা বাড়লেও কমেছে আউশ ধানের উৎপাদন : ঘুরপাক খাচ্ছে ৩০ লাখ টনে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হরলাল রায় সাগর : আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। গত ১৫ বছরে ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৭১১ জন প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে প্রায় ৩৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু সরকারের এসব সহায়তা কর্মসূচির পরেও আউশ ধানের উৎপাদন ও জমি আবাদে কাক্সিক্ষত সফলতা আসছে না। বরং আবাদ ও উৎপাদন দুই-ই কমছে। সরকারের হিসাবেই এক বছরে আউশ চাষের জমি কমেছে প্রায় ৯৮ হাজার হেক্টর বা ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ধানের উৎপাদন কমেছে প্রায় ১ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।
আউশ ধান মূলত বৃষ্টি ও সেচ নির্ভর ফসল। এক সময় আউশ ও আমন ধানের ওপর নির্ভর ছিল খাদ্য উৎপাদন। কিন্তু আশির দশক থেকে দেশে আউশের চাষ ক্রমাগত কমতে থাকে। বাড়তে থাকে বোরো ধানের চাষ। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছে। আর ধান উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২৩ লাখ ৪১ হাজার টন। পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ আবাদ ছিল ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে। সে সময়ে আবাদ ছিল ৩৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৩২ লাখ ৮৭ হাজার টন।
পরবর্তী সময় এক দশক উৎপাদন ৩০ লাখ টনের ঘরে ছিল। অবশ্য ওই সময়ে স্থানীয় জাতের ধান চাষের কারণে ফলন ছিল কম। এরপর থেকে আউশের চাষ কমতে কমতে ৯-১০ লাখ হেক্টর জমিতে ঠেকে। এ সময় বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান উদ্ভাবিত হওয়ায় আউশের গড় ফলন বাড়তে থাকে। সরকারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগে হেক্টর প্রতি ফলন হতো এক টনের মতো। সেখানে বর্তমানে গড়ে আড়াই টন থেকে প্রায় তিন টন ফলন হচ্ছে হেক্টরে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরজমিন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোরের কাগজকে বলেন, আউশের উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেচ-বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, উফশী জাতের বীজ সরবরাহ ও প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে আউশ চাষের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের তরফ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে সেচ ও বিদ্যুৎ সম্পর্কিত সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সভায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কৃষি বিশ্লেষক ও সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, বোরোতে উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক আউশ চাষ করতে চায় না। সে জমিতে অন্য ফসল সহজে ফলাতে পারেন কৃষক। তবে প্রণোদনার কারণেই চাষিরা আউশ চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। উৎপাদনও আগের থেকে বেড়েছে। তাই উফশী জাতের নতুন ভ্যারাইটি

ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা অব্যাহত থাকা দরকার।
কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে আউশে কৃষকদের প্রথম প্রণোদনা দেয়া হয়। এ বছর চার জেলার কৃষকদের ১৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকার উপকরণ সার ও উফশী জাতের বীজ দেয়া হয়। প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য দেয়া হয় ৫ কেজি উফশী জাতের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার। চলতি অর্থবছরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৬৪ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৬৪ জেলার ১০ লাখ কৃষকের মাঝে এ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। শুরু থেকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫টি অর্থবছরের মধ্যে দুটি অর্থবছরে (২০১৫-১৬ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর) প্রণোদনার তথ্য পাওয়া যায়নি। বাকি অর্থবছরগুলোতে (১৩ বছর) ৩৬৬৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬০ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়। আর উপকারভোগী হলেন ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৭১১ জন প্রান্তিক কৃষক।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আউশ ধানের উৎপাদন ৩০ লাখ টনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে আউশ ধান মূলত প্রান্তি ফসলে পরিণত হয়েছে। পানির মধ্যে আউশের চাষ হয়-যা শ্রমসাধ্য। কৃষক কঠোর পরিশ্রম করতে চায় না। তুলনামূলক ব্যয় বহুলও। পাশাপাশি আউশ সরাসরি বীজ ছিটিয়ে বোনার ধান হলেও দেশে বীজতলা তৈরি করে চারা বোনা হয়। তাছাড়া কখনো বৈরী আবহায়ওয়ার কারণে আবাদ ও উৎপাদন কমে যায়। একই ক্ষেতে সমসাময়িক অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন সেসব ফসলের চাষাবাদ বাড়ছে। আউশ চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আউশ ফসলের প্রাক্কলিত হিসাব ২০২২-২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ১ হাজার ১১৫ মেট্টিক টন। আগের বছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৯৭ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে চাষ কম হয়েছে। এ সময়ে গড় ফলন ৫ দশমিক ৬০ টন বাড়লেও গড় উৎপাদন কমেছে ৩ দশমিক ৩২ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৯৩ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ৪২ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর ও ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরে আউশ উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ ৪২ হাজার টন। এ সময়ে এক বছর অতি খড়া ও এক বছর অতি বৃষ্টি-বন্যার কারণে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বিবিএসের কয়েক বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ ৪ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৭১০টন। সে হিসেবে মাত্র তিন বছরে আউশ চাষ কমেছে দুই লাখ ৪৩ হাজার সাত ২৫ টন আর উৎপাদন কমেছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৪ টন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশীয় জাতের আউশ চাষ হচ্ছে কম জমিতে। কারণ এর ফলন খুবই কম হেক্টরে গড় ফলন ১ দশমিক ২২ টন থেকে ১ দশমিক ৪৩ টন পর্যন্ত। অথচ উফশীর ফলন প্রতি হেক্টরে গড়ে ২ দশমিক ৬২ টন থেকে ২ দশমিক ৯০ টন পর্যন্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়