সাংবাদিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

অর্থপাচার বাড়ছে যে কারণে

পরের সংবাদ

অবন্তিকারা নিরাপদ কোথায়?

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কেন অবন্তিকাদের এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে? কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় অবন্তিকারা নিরাপদ নয়? কেন কোনো একটা ঘটনা ঘটার পর প্রশাসনের টনক নড়ে? এর আগে এরা কোথায় থাকে? সত্যিই কি আমরা প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারব? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এখন ছাত্রী নিপীড়নের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়টি বলা চলে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করেও কীভাবে ছাত্রী নিপীড়নের চারণভূমিতে পরিণত হলো ভাবতে অবাক লাগে। এমন একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেও কেন বাঁচতে পারলেন না ফাইরুজ অবন্তিকা- এ প্রশ্ন সবার।
সাম্প্রতিক ফাইরুজ অবন্তিকা তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং তার সহপাঠী একজন ছাত্রকে তার আত্মহননের জন্য দায়ী করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এবং এ আত্মহত্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিবাদ। এ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের সাময়িক শাস্তি দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ঘটনার আদ্যোপান্ত বিচার করলে দেখা যায় যে, এমন ঘটনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বোর্ডের একজন সহকারী প্রক্টর। যাকে অবন্তিকা একাধিকবার বিচার দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি, উল্টো তাকেই ওই শিক্ষক হেনস্তা করেছেন। এর বাইরে রয়েছে অবন্তিকার একজন সহপাঠী, যে সহপাঠীটি সহকারী প্রক্টর সাহেবের আশকারা পেয়ে অবন্তিকাকে সব সময় উত্তপ্ত করত। যদিও বিষয়টি এখনো তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে, তারপরও অবন্তিকার মায়ের মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা আর অবন্তিকার ফেসবুক স্ট্যাটাস মিলিয়ে বোঝাই যায় অভিযুক্তরা একাধিকবার অবন্তিকাকে হেনস্তা করেছিল এবং অবন্তিকা একজন ভালো ছাত্রী হওয়ায় মনে করেছিলেন সে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন, কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে এ ঘটনায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই জড়িয়ে আছে তখন তিনি হতাশ হয়ে যান এবং এক প্রকার বাধ্য হয়েই আত্মহননের পথ বেছে নেন। আসলে সমাজটা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যে, এখানে বেশকিছু জায়গায় নষ্ট মানুষরা পদ-পদবি দখল করে বসে আছে। এদের দাপট এবং আত্মহঙ্কার সমাজকে বিপথে চালিত করলেও কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করে না। এসব ঘটনার কঠোর কোনো বিচার না হওয়ায় ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে এবং এসব ছাত্রী হেনস্তাকারীও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যতগুলো ছাত্রী হেনস্তার মতো ঘটনা ঘটেছে তার একটিরও সঠিক বিচার হয়নি, যার ফলে হেনস্তাকারীরা দিনের পর দিন হয়ে ওঠেছে বেপরোয়া। আমরা সব সময় যেটা লক্ষ্য করি, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেই তাদের দায় সারে। পরবর্তীতে একটা সময় এসব তদন্ত কমিটির তদন্ত জনসমক্ষে আসে না। আমরা ফাইরুজ অবন্তিকাকে এভাবে অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে যারা বাধ্য করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই। অবন্তিকার ওপর মানসিকভাবে হেনস্তাকারী সে যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন আমরা এদের কঠোর শাস্তির প্রত্যাশা করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকার জন্য প্রতিবাদ করছেন তাদেরও নিরাপত্তা যেন বিঘিœত না হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন কোনো ছাত্রছাত্রীকে হয়রানি না করে। আমরা চাই ফাইরুজ অবন্তিকার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নজির স্থাপন করুক। তবেই তারা এ দায় থেকে মুক্ত হবে এবং ফাইরুজ অবন্তিকার পরিবারও ন্যায়বিচার পাবে। আসুন সবাই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠসহ যেখানেই ছাত্রী নিপীড়ন হবে সবাই প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং সমাজের কিছু নিকৃষ্ট কীটকে ধ্বংস করি।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়