পুরান ঢাকায় প্রেসে আগুন

আগের সংবাদ

মৌসুমের আগেই ঊর্ধ্বমুখী ডেঙ্গু

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের প্রত্যয়

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ সালের ১৭ মার্চে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং একই দিন জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য ‘সোনার মানুষ’ অন্বেষণ করতে হচ্ছে আমাদের। জাতির পিতার জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ রকম দিন এখনকার প্রজন্মের জীবনে সত্যিই অভিনব। তাছাড়া ১৯৯৭ সাল থেকে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা শুরু হলেও বঙ্গবন্ধুকে নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ এ প্রজন্মের হয়েছে গত ১৫ বছরে। তারা জেনেছে, স্বাধীনতার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে তিনি সব সময়ই তা প্রত্যাশা করতেন। তিনি যে সোনার মানুষ খুঁজেছেন তা এই শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের মধ্য দিয়ে তৈরি করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মাটির মানুষ ও সাধারণ মানুষের নেতা। এ জন্য তার সহজ-সরল আচরণ শত্রæ-মিত্র সবাইকে আকৃষ্ট করত। মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিলেন তিনি আজীবন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। কারণ তিনিও শিশুদের ভালোবাসতেন। বিশ্বের সব মহামানব শিশুবান্ধব ছিলেন, শিশুদের প্রিয় ছিলেন। মহান নেতা হয়েও, রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ততা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু কখনো তাঁর শিশুপুত্র রাসেলকে আদর করতে ভোলেননি। কোথাও যেতে তিনি রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। শিশু রাসেলও তাঁকে খুব ভালোবাসত। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রাসেল আব্বাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করত। আব্বাকে মোটেই ছাড়তে চাইত না।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘রাসেলের সব থেকে আনন্দের দিন এলো যেদিন আব্বা ফিরে এলেন। এক মুহূর্ত যেন আব্বাকে হাতছাড়া করতে চাইত না। সব সময় আব্বার পাশে ঘুরে বেড়াত।’ শিশুরা সুন্দর স্বপ্ন দিয়ে তাদের নিজস্ব জগৎ নির্মাণ করে। বঙ্গবন্ধুও তাঁর রাজনৈতিক জীবন স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন। শিশুদের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে তারই আলোকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, শিশু হাসপাতাল ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। এ ছাড়া শিশুদের জন্য আরো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুদের প্রিয়জন। শিশু-কিশোরদের কাছেও তিনি ছিলেন ‘মুজিব ভাই’। ১৯৬৩ সালে ঢাকা প্রেসক্লাবে আয়োজন করা হয় ১০ দিনব্যাপী শিশুমেলা। ওই শিশুমেলায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই পবিত্র শিশুদের সঙ্গে মিশি মনটাকে একটু হালকা করার জন্য।’ শামসুজ্জামান খান স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে- ‘১৯৬৩ সালে শেখ সাহেবকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে দেখার ও কাছে পাওয়ার সুযোগ ঘটে। আমরা ওই বছর কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উদ্যোগে ঢাকাস্থ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক শিশু-কিশোর আনন্দমেলার আয়োজন করি। সেই মেলায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি আগ্রহসহকারে আসেন এবং মেলার প্রদর্শনী ও স্টল পরিদর্শন করেন। আনন্দমেলার নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় দেখাশোনার জন্য কচি-কাঁচার মেলার সদস্যদের নিয়োগ করা হয়। পুলিশ বা শান্তিবাহিনী, গোয়েন্দা- সবই ছিল কচি-কাঁচার মেলার সদস্য। শেখ সাহেব যখন প্রদর্শনী দেখছিলেন তখন তাঁর কাছ থেকে মেলার গোয়েন্দা বাহিনী একটি লোককে আটক করে। তার চেহারা উসকো-খুশকো, গায়ে একটি কাঁথা জড়ানো। খুদে গোয়েন্দারা তার দেহ তল্লাশি করে তার কাছে মেলার একটি ম্যাপ ও কিছু কাগজপত্র পায় এবং পরে দেখা যায় খুদে গোয়েন্দারা যাকে পাকড়াও করেছে সে সরকারের আসল গোয়েন্দা। শেখ সাহেবের পিছু নিয়ে আনন্দমেলায় ঢুকেছে। শেখ সাহেব সরকারি গোয়েন্দাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘চান্দু, এখানেও আমার পিছু নিয়েছ- শিশুদের সঙ্গে একটু আনন্দ করব তাতেও ফেউ লাগিয়ে রেখেছে সরকার। যা মাফ করে দিলাম।’ পরে দাদাভাইয়ের দিকে ঘুরে বললেন, ‘দাদাভাই, আপনার গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দাদের ওপর টেক্কা দিয়েছে, শাবাশ!’
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এর মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে সোভিয়েত ইউনিয়ন গিয়েছিলেন। সে সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পরামর্শে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারের অত্যাচারের দৃশ্য নিয়ে ৫-১২ বছরের ১৫-১৬ জন শিশুর আঁকা ছবি সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য গণভবন ‘সুগন্ধা’য় উপস্থিত হন। সঙ্গে ছিলেন ড. আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন ও লুৎফুল হায়দার চৌধুরী। শিশুদের আঁকা ছবিগুলো বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘আমার দেশের শিশুরা এমন নিখুঁত ছবি আঁকতে পারে, এসব না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আজকের কর্মব্যস্ত সারাটা দিনের মধ্যে এই একটু খানি সময়ের জন্য আমি শান্তি পেলাম। শিশুদের সান্নিধ্য আমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ সোনার মানুষ ঠিক এরকমই চেয়েছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেন। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিশু উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে করেন বাধ্যতামূলক। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে করা হয় জাতীয়করণ। শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪-এর ২২ জুন শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পর জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ তৈরি করে। বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদের অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত শিশু নীতিকে আরো যুগোপযোগী করতে ঘোষিত হয় শিশু আইন ২০১৩। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত শিশুদের সেবা ও ভাতা প্রদান, পথশিশুদের পুনর্বাসনসহ তাদের জীবনমান উন্নত করতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিশু শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্কুল টিফিন, শিশুর জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের ‘মহাকবি’, তিনি বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টিতে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’। তাঁর ছিল দুর্নিবার গ্রন্থপ্রীতি। তিনি ছিলেন সচেতন পাঠক। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, উইনস্টন চার্চিল, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, ফিদেল ক্যাস্ত্রো প্রমুখ রাজনৈতিক নেতার মতো যখনই অবসর পেতেন তখনই তিনি বইয়ের বিচিত্র জগতে হারিয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু যে প্রচুর শিল্প-সাহিত্যের বই পড়তেন তা তাঁর ভাষণ, বক্তৃতা, চিঠিপত্র আর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে রবার্ট পেইন দেখেছেন, জর্জ বার্নার্ডশ, বার্ট্রান্ড রাসেলের রচনাবলি, মাও সেতুং স্বাক্ষরিত গ্রন্থ। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিপ্রেমী ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৪৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণকালে একই গাড়িতে করাচি আসার পথে উর্দুভাষী কয়েকজন পাকিস্তানিকে তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ ২১৭) ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের শান্তি সম্মেলনে যোগদান করে তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ২২৮)
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সবসময়ই কাছে পেয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিকদের। জসীমউদদীন, সুফিয়া কামাল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, হাশেম খান, সমরজিত রায় চৌধুরী প্রমুখ কবি ও চিত্রশিল্পী এবং কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক ছবি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পীদের মাঝেও তাঁকে দেখা গেছে। ১৯৭৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন- ‘মানবাত্মার সুদক্ষ প্রকৌশলী হচ্ছেন দেশের সুধী সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাব্রতী, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী।’ সোনার মানুষ গড়ে তোলার জন্য এঁদের ভূমিকা ছিল মুখ্য। এজন্য তাঁদের প্রতি তাঁর প্রাণের টান এত। অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্মৃতিচারণ-এ আছে, ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্মথ রায়কে বাম পার্শ্বে ও তাঁকে দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়ে সেদিন নানা অন্তরঙ্গ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি অসুস্থ কবি হুমায়ূন কাদির, আবুল হাসান ও মহাদেব সাহাকে সুচিকিৎসার জন্য বার্লিন, মস্কো, লন্ডন প্রেরণ করেন এবং একটি কবিতা লেখার জন্য দাউদ হায়দারকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্ষা এবং নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কবি আল মাহমুদকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি ছিলেন নাটকের একজন সুহৃদ। টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের ওপর থেকে প্রমোদকর ও সেন্সর প্রথা সহজতর করেছিলেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল। প্রাদেশিক পরিষদে এফডিসির বিল উত্থাপন করেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল। তখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল চলচ্চিত্র বিষয়ক দপ্তর।
রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতাই বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্থ ছিল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ভাষণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার পঙ্ক্তি- ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,/রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি’ এবং ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেবার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেছেন। ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি’ এবং ‘নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস’ তাঁর কণ্ঠে সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ছিল বেশি। বাংলা একাডেমি আয়োজিত ১৯৭২ সালের ৮ মে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে তিনি বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ ও অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে। কিন্তু সত্য, শ্রেয়, ন্যায় ও স্বাজাত্যের যে চেতনা বাঙালি কবিগুরুর কাছ থেকে লাভ করেছেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে তারও অবদান অনেকখানি। বাঙালির সংগ্রাম আজ সার্থক হয়েছে। বাঙালির রবীন্দ্র-সম্মাননার চেয়ে বড় কোনো দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক দলবিধির ১০ ধারায় মৃতব্যক্তির মাহাত্ম্য প্রচার নিষিদ্ধ করে খুনি সরকারের তরফ থেকে এক ঘোষণা দেয়া হয়। ফলে ২১ বছর ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ থেকে পুনরায় ব্যবহৃত হতে থাকে শব্দটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার আদর্শ প্রতিষ্ঠার যুগ শুরু হয়। একইসঙ্গে জাতীয় শিশু দিবসের প্রচলন সেই আমল থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকার গত ১৫ বছর যাবৎ সোনার মানুষ গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেছে এবং এগিয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। আর এই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে স্মার্ট নাগরিককে অবশ্যই সোনার মানুষ হতে হবে।

ড. মিল্টন বিশ্বাস : বঙ্গবন্ধু গবেষক, অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়