নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে ইফতার মেয়র আতিকের

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

মার্চ ১৯৭১ আরো কিছু কথা

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ডন ১ মার্চ ১৯৭১ লিখেছে- শেখ মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় পরিষদের পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যের পরিষদ অধিবেশনে যোগ দেয়া এবং সংবিধান প্রণয়নের কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অধিবেশনে বসতে হবে এবং আলোচনা করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।’ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে অংশগ্রহণে ভুট্টোর বেঁধে দেয়া শর্তাবলির সূত্র ধরে তিনি তির্যকভাবে জিজ্ঞাসা করেন, ‘(ভুট্টোকে) নিশ্চয়তা দেয়ার আমি কে?’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ছয় দফা কর্মসূচি কেবল বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রণয়ন করা হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা যে অধিকার ও স্বায়ত্তশাসন চেয়েছি, আমরা চাই পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের জনগণও তা ভোগ করুক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ছয় দফা এখন আর তাঁর নিজের সম্পত্তি নয়। এর মালিকানা এখন জনগণের; সুতরাং যে আকারেই হোক, এর সংশোধনের অধিকার তাঁর নেই।
সংখ্যাগরিষ্ঠের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার আলোচনার সূত্র ধরে শেখ মুজিব বলেন, যারা এই অনর্থক ধুয়া তুলেছেন তারা আসলে সংখ্যালঘুর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। স্পষ্টতই ভুট্টোর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব বলেন, এসব কথা কেবল আপত্তিকরই নয়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও তা সবাইকে সন্দিহান করে তোলে। তিনি বলেন, ভুট্টোর ৮৩ সদস্যের মতো পূর্ব পাকিস্তানের ১৬০ সদস্য যদি জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকার করেন তাহলে কী ঘটবে তা তাঁর জানা নেই।
শেখ বলেন, নির্বাচনের ফলাফলের পরও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে- যাতে নির্বাচনের অর্জন নস্যাৎ করা যায়। তিনি হুঁশিয়ার করে দেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যদি কোনো বাধার সৃষ্টি করা হয়, এর পরিণতির জন্য তিনি দায়ী থাকবেন না।

মালিক গোলাম জিলানি
এর আগে তেহরানের দৈনিক কিয়ান আওয়ামী লীগ প্রধানের যে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তার ওপর ভিত্তি করে করাচির ডন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারত বাংলাদেশকে খেয়ে ফেলতে পারে কিনা এ প্রশ্নটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ফেডারেল পাকিস্তান হওয়ার কারণে ভারত না আবার বাংলাদেশকে ‘খেয়ে ফেলে’ মুজিব হেসে উঠেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করলেন, ‘আজকাল কেউ কাউকে খেয়ে ফেলতে পারে না। ভারত তো তাদের বাংলাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খেয়ে যায়, আমাদের দরিদ্র লোকেরা ভেঙে পড়ার পর্যায়ে এলেও তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে।’
তিনি বললেন, ‘ভিয়েতনামের দিকে তাকান, আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশ তার ইচ্ছে চাপাতে গিয়ে গরিব কৃষকের মাতৃভূমিতে কত অসহায় হয়ে পড়ছে। আমেরিকা যদি ভিয়েতনামকে খেয়ে ফেলতে না পারে, ভারত কেমন করে বাংলাদেশকে খাবে?’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকা যদি ভিয়েতনামকে খেয়ে ফেলতে না পারে, ভারত কেমন করে বাংলাদেশকে খাবে?’
তিনি বলেন, কেবল পূর্ব পাকিস্তানের নয়, ফেডারেল কাঠামোর আওতায় পশ্চিম পাকিস্তানের সব প্রদেশের অধিকার তিনি নিশ্চিত করতে চান। ‘আমরা চাই সুবিচার ও ঐক্যের ভিত্তিতে সমগ্র জাতি উন্নতি লাভ করুক। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পাকিস্তানই হবে শক্তিশালী পাকিস্তান। তার পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে শেখ মুজিব বলেন, পররাষ্ট্রনীতি হবে জোট নিরপেক্ষ কিন্তু পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে সক্রিয় বন্ধুত্ব থাকবে।’ শেখ মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, যারা তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে, তারা কুৎসা রটনাকারী। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে যেসব ভুল করা হয়েছিল তা সংশোধন করতে পারলে পাকিস্তান শক্তিশালী হয়ে উঠবে, অন্যদিকে বর্তমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান এত দুর্বল হয়ে পড়বে যে, তা থেকে আর উত্তরণ সম্ভব হবে না।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইসলামাবাদ আর পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যতের নির্দেশনা দিতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মসূচি কেবল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নয়। ফেডারেল কাঠামোর আওতায় আমরা চাই পাঞ্জাব, সিন্ধু, বালুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অধিকারও সুরক্ষিত হোক।
তিনি চান পাকিস্তান ‘সেন্টো’ এবং ‘সিয়োটো’ থেকে বেরিয়ে আসুক। তবে তিনি চান পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্কের একত্রে থাকার আরসিডি গ্রুপ থাকুক এবং বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অংশগ্রহণে তো আরো বড় হোক।
কাশ্মির বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একনায়কত্বের দোহাই দিতে এবং সমরাস্ত্রের জন্য বিপুল ব্যয় করতে সামরিক বাহিনী ও পুঁজিবাদীরা কাশ্মিরকে ব্যবহার করছে। ‘তবুও’ জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করিনি।’ মুজিব ভারতের সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক রক্ষা করতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা একই উপমহাদেশের ভাগীদার। পছন্দ হোক বা না হোক আমাদের এক সঙ্গে থাকতে হবে, একসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে।
চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব : চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব মুজিবের পররাষ্ট্রনীতির অংশ। ভৌগোলিক অবস্থান এবং নীতিই বন্ধু নির্ধারণ করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এই নয় আমাদের পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমরা মুসলমান এবং আমরা কখনো কমিউনিজম গ্রহণ করব না।’ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুজিব বলেন, ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক এবং আবেগময় বন্ধনে দুদেশ এমন দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ যে, এ নিয়ে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই এবং এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশকে কেউই বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
আগামী দিনের মন্ত্রী কারা হবে তা নিয়ে দলের ভেতরের অনুমান এখন প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আসছে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল তাজউদ্দীন আহমদকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ দেয়া হবে বলেই পার্লামেন্টারি পার্টিতে তাকে কোনো পদে বসানো হয়নি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আর যারা স্থান পেতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- কর্নেল ওসমানী, মশিউর রহমান, কামরুজ্জামান, এম আর সিদ্দিকী, ডক্টর কামাল হোসেন এবং মোহাম্মদ ইদ্রিস।
সিদ্দিকী এবং ইদ্রিস উভয়েই চট্টগ্রামের বলে তাদের একজনকে মন্ত্রিসভায় নেয়া হতে পারে। মন্ত্রী পদপ্রত্যাশী অন্যদের প্রাদেশিক মন্ত্রসভায় রাখার কিংবা বিদেশে, করপোরেশনে, ব্যাংক বা কমিশনে পদায়নের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। খোন্দকার মোশতাক আহমদকে জাতীয় পরিষদের স্পিকার, পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে বিরোধীদলীয় সাবেক নেতা আবদুল মালেক উকিলকে জাতীয় পরিষদে ডেপুটি স্পিকারের পদটি দেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
৪ দফা দাবি পূরণ হলে আওয়ামী লীগ অধিবেশনে যাবে- ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর করাচির দ্য ডন ৮ মার্চ ১৯৭১ এই শিরোনাম সংবাদ করে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আজ ঘোষণা করেছেন তার চার দফা দাবি পূরণ হলে সংসদে যাবেন। অপরাহ্নে রমনা রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব তাঁর চার দফা পেশ করেন:
১. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
২. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে সরিয়ে নিতে হবে।
৩. সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে।
৪. নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম লীগের নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে জনগণই ক্ষমতার উৎস। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একজন রাজনীতিবিদ (জুলফিকার আলী ভুট্টো) তার দলের গুরুত্ব কতটা তা প্রকাশ করতে গিয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকেও একটি রাজনৈতিক শক্তি আখ্যা দিতে দ্বিধা করেনি। একই নেতা দেশের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করে একটি ধারণা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যে, তিনি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।
লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারে সংশোধন, পশ্চিম পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মহিলা আসনের নির্বাচনে স্থগিতকরণ, ১ মার্চ ৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা এবং একই নেতার সঙ্গে ৫-৬ ঘণ্টা সভা করে ২৫ তারিখ নতুন তারিখ ঘোষণা করা, সব মিলিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এসব থেকে শেখ মুজিবুর রহমান যে একটি ভিন্ন ধারণা পাবেন এটাই স্বাভাবিক।
বালুচ নেতা আকবর বুগতি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করলেন- ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার সময় সাংবিধানিক সমস্যাগুলো উত্থাপন না করে কেবল ‘কেন্দ্রে ক্ষমতা ভাগাভাগি’ নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবের সঙ্গে ভুট্টোর কথা হয়েছে মাত্র ৪০ মিনিট বাকিটুকু কেবল আনুষ্ঠানিকতা। নৌবিহার ছিল কেবল আনন্দফুর্তির জন্য। ভুট্টো আওয়ামী লীগ প্রধানের কাছে তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করার দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের খসড়া সংবিধানের কথাও তিনি বলেননি। প্রশ্নের জবাবে বুগতি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনি এসব খবর সংগ্রহ করেছেন এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত পিপলস পার্টির কেবিনেটই তা নিশ্চিত করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ভুট্টো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, ভুট্টোর সৃষ্টি স্বৈরশাসকের হাতে, ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি প্রয়োজনে পাকিস্তান ভেঙে হলেও এগিয়ে যাবেন। তিনি বললেন, ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তা যদি না হয় খণ্ডিত পাকিস্তানের কেবল পশ্চিম পাকিস্তান অংশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেও তিনি তৃপ্ত থাকবেন।
তিনি বললেন, ভুট্টো ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের চেয়েও বাজে শাসক হবেন’ এ কারণেই মানুষ এখন আইয়ুব জাতীয় নস্টালজিয়ায় ভুগছে। তিনি জানান, ভুট্টো কখনো সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি করেননি। ভুট্টো চেয়েছেন আইয়ুব খানের অপসারণ ঘটুক আর তিনি একই একনায়কত্বের কাঠামোতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হোন। বুগতি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রক্তপাত, দুঃখজনক ও শোকাবহ ঘটনার জন্য ভুট্টোই দায়ী। জনমত এজন্য তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে।
একাত্তরের মার্চের পাঁচ মাস আগেই ভুট্টোর মুখোশ উন্মোচিত করেছে কাউন্সিল মুসলিম লীগ। কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান অভিযোগ করেছেন সরকারের যেসব আমলা স্বৈরশাসন অব্যাহত রাখতে চাচ্ছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পেছন দরজার প্রভাবে ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান বলেন, ভুট্টো এমনিতেই পাকিস্তান সরকারের খুব কাছে অবস্থান করেছেন আর বর্তমানে সরকারের আরো ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছেন। ফলে সরকারের গতিবিধি সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিবহাল আর তা মাথায় রেখেই তিনি যে কটুকাটব্য করছেন ও প্ররোচনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তার ভিন্ন অন্তর্নিহিত মানে রয়েছে।
তিনি বলেন, এটা সত্য সামরিক আইন দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না; আমরা যত তাড়াতাড়ি এর হাত থেকে মুক্তি পাই ততই মঙ্গল। এই বেআইনি শাসন থেকে বেরিয়ে আমার জন্য একটি প্রক্রিয়ায় সরকার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা স্থাপন করেছে আর সে প্রক্রিয়ার ফলাফল দেখতে আরো ষাট দিনের প্রতীক্ষা।
শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মেনে নেয়া সহজ ছিল না। এতদিন যাদের ভূমিকা ছিল শাসকের, তাদেরই শাসিতের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর ছিল দুঃস্বপ্নের মতোই। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক শক্তিগুলো ভুট্টোর স্বপ্নকে আরো উসকে দেয়।
পাঞ্জাব পাকিস্তান ফ্রন্ট ভুট্টোর নেতৃত্ব অস্বীকার করল, দলের আহ্বায়ক মালিক গোলাম জিলানির অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তানের গণতন্ত্রপ্রেমিক সব নাগরিককে আহ্বান করেছে তারাও যেন তাকে সমর্থন করেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে ভুট্টোর যে নেতৃত্ব তা যেন অস্বীকার করেন। ভুট্টো যেভাবে জাতীয় পরিষদকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন এবং একটি সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য শেষ সুযোগটিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তাতে পুরো বিষয়টিকে ইতিহাসের কেবল একটি ঘটনার সঙ্গেই তুলনা করা চলে- ওয়াইমার রিপাবলিকের সংসদ রাইখস্ট্যাগে আগুনে জ্বলছে এবং হিটলার অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছেন।
এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সংকটের একমাত্র সমাধান- আওয়ামী লীগের কাছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উচিত শেখ মুজিবুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় অখণ্ডতা ও সংহতির স্বার্থে এখনই তার হাতে ‘প্রকৃত ক্ষমতা’ হস্তান্তর করা।
আসগর খান স্পষ্ট করেই বলেছেন, যদি পাকিস্তানের অর্ধেকটা অংশ ‘শেষ’ হয়ে যায় তাহলে শেষ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানেরও ঐক্যবদ্ধ ও অখণ্ড থাকার কোনো কারণ নেই। ভারতের কাছ থেকে আগ্রাসী হুমকি থাকার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে তিনি তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ২৩ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তান শাসন করেছে এবং পূর্ব পাকিস্তানকে অনেক ভুগতে হয়েছে। এখন তারা যদি পাকিস্তান শাসন করে এবং তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে তাতে পশ্চিম পাকিস্তানকে যদি খানিকটা ভুগতেও হয় তাতে কী এসে যায়?
১ মার্চ আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধানের ডাকে পালন করা হরতালে সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, মিল-কারখানা, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোর্ট-কাচারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ডাক্তার, সাংবাদিক, শান্তিরক্ষী প্রমুখের গাড়ি ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কোনো যানবাহন রাস্তায় নামেনি। ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ সার্ভিসও হরতালের কারণে বন্ধ থাকে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে ২৫ মার্চ মধ্যরাত- দ্রুত বদলে দেয় এশিয়ার মানচিত্র।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়