বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ

আগের সংবাদ

অগ্নিকাণ্ডের দায় সাত সংস্থার : দায়ী কর্মকর্তা ও ভবন মালিককে আসামি করতে হবে, টাস্কফোর্সে বিশেষজ্ঞদের রাখার সুপারিশ

পরের সংবাদ

বরিশালের মুকুট জয়ের নেপথ্যে

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুইবার ফাইনালে উঠেও জয়বঞ্চিত থাকা বরিশাল অবশেষে বিপিএলের দশম আসরে এসে পেল কাক্সিক্ষত শিরোপার স্বাদ। এর আগের আসরগুলোতে ফাইনালে উঠে কখনোই না হারা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে তারা হারিয়েছে হেসেখেলে। তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশাল এক ওভার বাকি থাকতেই কুমিল্লাকে হারিয়েছে ৬ উইকেটে।
সমর্থকদের সফল এক বিপিএলই উপহার দিল ফরচুন বরিশাল। বেশ কয়েকবার ফাইনালে গিয়েও এর আগে শিরোপা জিততে পারেনি তারা। এবারো তাদের নিয়ে কোনো হইচই ছিল না। বরং তাদের ‘বুড়োদের দল’ হিসেবেও বলেছে অনেকে। তবে টুর্নামেন্ট শুরু হতেই সব আলোচনা বদলে দিয়েছেন তারা।
শুরুটা যদিও মসৃণ ছিল না বরিশালের। প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে শুভসূচনা করলেও পরবর্তী সময়ে হোঁচট খেতে হয় তাদের। টানা ৩ ম্যাচ হারে তারা। ঢাকা ও সিলেট পর্বের শুরুতে সেসব ম্যাচে হারলেও বেশ ভালো প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বরিশাল। অনেক ম্যাচে বড় সংগ্রহ করলেও সেসব রান সহজেই টপকে যায় প্রতিপক্ষ। আবার রান তাড়া করতে গিয়ে অল্প দূরত্বে থামতে হয় তাদের। তবে সিলেট পর্বের পরের ম্যাচগুলোতে জয়ের ধারায় ফেরে তারা। এবারের বিপিএলে দলীয়ভাবে অনেক বড় বড় ইনিংস আসে কুমিল্লার কাছ থেকে। অনেক ম্যাচেই রান এসেছে ১৮০-এর ওপরে। গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে ৭টিতে জয় পেয়ে পয়েন্ট তালিকায় ৩য় অবস্থানে থেকে প্লে-অফ নিশ্চিত করে বরিশাল। এলিমিনেটর ম্যাচে প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামকে ৫ ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জয়ের দিকে এগিয়ে যায় তারা। ২য় কোয়ালিফায়ারে রংপুরকে হারাতেও বেগ পেতে হয়নি বরিশালকে। প্রথম অবস্থানে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করা সোহান-সাকিবের দলকে তারা হারায় ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ভালো অবস্থানে থেকে ফাইনাল খেলতে আসা বরিশাল তবুও শিরোপার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছিল না। কারণ তাদের প্রতিপক্ষ ৪ বারের শিরোপা জেতা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। রাসেল, মইন আলি, নারাইনের সঙ্গে লিটন, হৃদয়, মোস্তাফিজদের নিয়ে গড়া কুমিল্লাকে হারানো যে কঠিন হবে বরিশালের জন্য, তা বেশ ভালো করেই জানত তামিম বাহিনী। তবে সেই কঠিন কাজটাই হেসেখেলে সম্পন্ন করলেন তারা। ১৫৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১ ওভার বাকি থাকতেই কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পায় বরিশাল। ফাইনালে ম্যাচ জিতেই গ্যালারির লাল সমুদ্র আর ‘বরিশাল বরিশাল’ কলরব যেন ছুঁয়ে গেছে তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমদের। বরিশালের শিরোপা জয় আরো একদিক থেকে বিশেষ। সেটা মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য। বিপিএলের শুরুর আসর থেকে খেলছেন দেশের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার। কয়েকবার ফাইনাল খেললেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। দুজনের সেই আক্ষেপ একসঙ্গেই ঘুচল। দুজনের আবেগের মুহূর্ত আরো রঙিন করেছেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম। নিজের দ্বিতীয় বিপিএল শিরোপা বিশেষভাবে এই দুজনের সঙ্গে উৎসর্গ করেছেন আরো কয়েকজনকে, ‘যে কোনো শিরোপা জেতা দারুণ ব্যাপার। তবে এবার একটু ভিন্ন কারণ ছিল। কারণ আমাদের দলে এমন কয়েকজন ছিল তরুণদের মধ্যে মিরাজ, সৌম্য বা অভিজ্ঞদের মধ্যে রিয়াদ ভাই, মুশফিক, ওরা লম্বা সময় ধরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু ওরা এই (বিপিএল) ট্রফি কখনো পায়নি। তাই আমার নিজেরই একটা ইচ্ছা ছিল আল্লাহ যদি আমাদের দেয়, তাহলে আমি তাদের উৎসর্গ করব।’
বিপিএলে এবার বরিশালের ভালো করার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে দলীয় পারফরম্যান্স। সাথে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এগিয়ে দিয়েছে তাদের। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ১৫ ম্যাচ খেলে ৩৫ এর বেশি গড়ে রান করেছেন ৪৯২। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার জেতার পাশাপাশি হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। বরিশালের হয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হার্ডহিটার ব্যাটার কাইল মায়ার্স।
তার আগমনেই মূলত বদলে যায় বরিশাল। মায়ার্সের দুরন্ত গতির ব্যাটিং আর কার্যকর মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে খাবি খেয়েছে প্রতিপক্ষরা। শিরোপাজয়ীদের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে এবারের বিপিএলে প্রত্যাবর্তন করেছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বোলিংয়ে ৯ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৫টি। হয়েছেন টুর্নামেন্টের ৪র্থ সেরা বোলার। সঙ্গে প্রয়োজনের সময় কার্যকর ব্যাটিং করেও মিটিয়েছেন দলের চাহিদা। এছাড়া ১৫ ম্যাচে ৩৭৯ রান করা মুশফিকও দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এছাড়া শেষের দিকে বরিশালের হয়ে খেলতে আসা হার্ডহিটার ডেভিড মিলার ছিলেন বড় আকর্ষণ। তবে বেশি কিছু করার প্রয়োজন পড়েনি তার। বাকিদের পারফরম্যান্সই জয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েছিল তাদের।
চ্যাম্পিয়ন হয়ে আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হয়েছে বরিশাল। শিরোপাজয়ী দল হিসেবে পেয়েছে ২ কোটি টাকা। সঙ্গে নগদের সিইও বোনাস হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামী ৮ মার্চের পর যে কোনো দিন শিরোপা বরিশালে নিয়ে উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল ফ্র্যাঞ্জাইজির মালিক মিজানুর রহমান। সেই ট্রফিও আবার যাবে বরিশালের প্রতীক লঞ্চে করে। বরিশালবাসীর জন্য তাই আনন্দের সীমা থাকছে না।
: আবু রুহাব তাহবিব

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়