নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে গুমোট হয়ে ওঠে ঢামেক প্রাঙ্গণ : বেইলি রোড ট্র্যাজেডি

আগের সংবাদ

দায়ীরা পার পেয়ে যায় যেভাবে

পরের সংবাদ

সিলিন্ডারে গ্যাস যখন মৃত্যুদূত

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, গত বছর চুলার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে তা ছিল ৯৪টি। এসব ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি মূল্যবান মালামালেরও ক্ষতি হয়। এর আগের বছরগুলোতেও এ পরিসংখ্যান ছিল উদ্বেগজনক। এবছর ২৯ ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর বেইলি রোডে ৪৬ জন মৃত্যুর ঘটনায় আবার নড়ে চড়ে বসেছে সবাই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কারিগরি ত্রæটি, অসচেতনতা ও অসতর্কতার ফলে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে। দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। রান্নার কাজকে সহজ করতে নিয়ে আসা সিলিন্ডার যেন মৃত্যুদূতে পরিণত হচ্ছে। তাই গ্যাসসংক্রান্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

আশরাফুল ইসলাম রানা

দিন দিন চাহিদা বাড়ছে
পরিবেশ দূষণ কমাতে ২০০০ সালে দেশে যানবাহনে গ্যাসের ব্যবহার এবং রান্নার কাজে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার শুরু হয় ২০০৫ সালের দিকে।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশে ৬০ লাখের বেশি এলপিজি ব্যবহারকারী রয়েছেন। আর এলপিজি সিলিন্ডার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি।
২০১০ সালে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধের পর থেকে বাসাবাড়িতে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সীমাবদ্ধতায় দেশজুড়ে রান্নার কাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। বাজারে সাড়ে ১২ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। গৃহস্থালি রান্নার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, পরিবহন, ছোট-বড় শিল্পকারখানায়ও এলপিজি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সিলিন্ডার গ্যাস নামে বহুল ব্যবহৃত এই জ্বালানিটি যেমন সহজলভ্য, তেমনি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিন দিন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের খবর আসছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনায় সিলিন্ডার সরাসরি বিস্ফোরিত না হলেও লিকেজ হওয়া গ্যাস থেকে ঘটছে অগ্নিকাণ্ড।

প্রতিকার নয়, প্রয়োজন সচেতনতা
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। সাধারণত এলপিজি গ্যাস ২ শতাংশ ও লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস ৫ শতাংশ বাতাসের সংস্পর্শে এলেই তা বিস্ফোরণ সম্ভাবনা তৈরি করে। লাইন গ্যাসের চেয়ে ১০-১২ গুণ চাপ কম থাকে সিলিন্ডার গ্যাসে। গৃহস্থালির বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটছে গ্যাস লিকেজ থেকে। মূলত সিলিন্ডার থেকে কানেক্টিং পাইপ, চুলার রাবার কিংবা রেগুলেটরের ত্রæটি থেকে গ্যাস লিকেজ হচ্ছে।
তা হয়তো বদ্ধঘরে জমা হচ্ছে। এক পর্যায়ে বৈদ্যুতিক স্পার্ক বা কোনোভাবে আগুন লেগে বিস্ফোরণ ঘটছে। তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে প্রয়োজন সচেতনতা।

১. কাজ শুরুর আগে সব জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। এতে জমাট বাতাস সরে যাবে। ভেন্টিলেশন ফ্যান থাকলে চালু করে দিন। কিচেন হুড থাকলে চালিয়ে দিন।

২. রোজ কাজ শেষে শুকনা কাপড় দিয়ে চুলা মুছে রাখা জরুরি। প্রয়োজন হলে কাপড়টিকে ভিনেগার দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে পানি দিয়ে ভেজানো যাবে না।

৩. এলপিজি সিলিন্ডার কোনো পাটাতনের ওপর না রেখে সমতল জায়গায় খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। আশপাশে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা না লাগে সেটিও খেয়াল রাখা দরকার। চুলা, সিলিন্ডার থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি ওপরে রাখতে হবে এবং লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত তিন ফুট দূরে স্থাপন করতে হবে সিলিন্ডারটি।

৪. ভালো মানের চুলা ব্যবহার করুন। কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে নি¤œমানের চুলার কারণে জীবন সংশয়ও হতে পারে। মাসে একবার বার্নারের ছিদ্র এবং ক্রেট পরিষ্কার করুন ।

৫. রেগুলেটরের নজেলটি যাতে পাইপ দিয়ে ভালো করে কভার করা থাকে সেটা লক্ষ্য রাখুন। গরম বার্নারের সঙ্গে যাতে গ্যাসের পাইপ কোনওভাবে লেগে না থাকে এদিকেও নজর রাখতে হবে।

৬. ঘরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া গেলে দরজা-জানালা খুলে দেওয়া। এই সময় ম্যাচের কাঠি না জ্বালানো, বৈদ্যুতিক সুইচ, মোবাইল ফোন অন/অফ না করা।
এটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে।

৭. সিলিন্ডারে সংযুক্ত পাইপটি নিয়মিত ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। কিন্তু ভুলেও সাবান পানি ব্যবহার করবেন না। ২ বছর পরপর অবশ্যই পাইপটি বদলে ফেলুন।

৮. একটি ঘরে দুটি সিলিন্ডার রাখার জন্য অন্তত ১০ বর্গফুট জায়গা থাকা জরুরি। এমন জায়গায় সিলিন্ডার রাখবেন না, যেখানে সহজেই তা অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে।
সিলিন্ডারের ওপরে কখনোই কোনও কাপড়, বাসন ইত্যাদি রাখবেন না।

৯. খালি সিলিন্ডার থেকে গ্যাসের রেগুলেটর খোলার সময় আশপাশে কোনও মোমবাতি জাতীয় জিনিস যাতে না জ্বলে, তাও খেয়াল রাখুন।

১০. এলপিজি সিলিন্ডার যদি অব্যবহৃত থাকে অথবা গ্যাসহীন অবস্থায় থাকে, তাহলে রেগুলেটরের নব বন্ধ করে রাখা উচিত।
প্রয়োজনবোধে সিলিন্ডার ভর্তি থাকার সময় সেফটি ক্যাপ ব্যবহার করা নিরাপদ। এছাড়া রান্না শেষে চুলা ও রেগুলেটর উভয়ের সুইচ বন্ধ করে রাখুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়