সাড়ে ৩ মাস পর কারামুক্ত আলাল

আগের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কোনো প্রশ্ন নেই : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

হাসপাতালে আর কত অপমৃত্যু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। দেশের পাঁচতারকা মানের হোটেলসদৃশ হাসপাতালগুলোয় এ ধরনের অপমৃত্যু অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করছে। এসব ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ালেও অভিযুক্ত ও তদারকি প্রতিষ্ঠানের চাপে সমাধানও মিলছে না। গত মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার ও হাসপাতালে আহনাফ তাহমিদ (১০) নামে এক শিশুকে ফুল অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর জ্ঞান ফেরেনি। ভুল অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। এর এক দিন আগে সোমবার ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে রাহিব রেজা (৩১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এরও আগে ৭ জানুয়ারি বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদের মৃত্যুর ঘটনায় বাবা ফখরুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসককে জেলগেটে দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ভুল চিকিৎসায় কতজনের মৃত্যু ঘটছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান ১০টি কারণের অন্যতম অনিরাপদ চিকিৎসাসেবা। প্রতি বছর নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভুল চিকিৎসায় ১ কোটি ৩৪ লাখ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। আমাদের দেশে কাঠামোগত ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি চিকিৎসায় জনগণের খরচ বেড়েছে। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। বলা যায়, স্বাস্থ্য খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। সময় এসেছে সরকারকে কঠোর হওয়ার। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার শিকার ব্যক্তির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি জানা নেই অনেকের, নেই সচেতনতা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- যারা অভিযোগ করেন, বিচারের আশায় তাদের কেটে যায় দীর্ঘ সময়। বিএমডিসিতে এ বিষয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় ধীর গতি। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগেও সর্বোচ্চ শাস্তির নজির নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক রোগ নির্ণয় ও দক্ষতার অভাবেই সাধারণত ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভুল ওষুধ সেবন, ক্ষতিকর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, নি¤œমানের ওষুধ, ভুল অস্ত্রোপচার এবং প্রতারকের খপ্পরে পড়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মৃত্যুর জন্য অন্যান্য সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলে কোনোভাবেই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো রোগীর অস্ত্রোপচারের আগে সঠিক অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার প্রস্তুতি কেন থাকবে না- এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি- কেউ দায় এড়াতে পারে না। ঘাটতিগুলো কোথায়, খুঁজে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধ করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারি দরকার। আর অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়