নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পেল চার হাজার শ্রমিক : গাজীপুর

আগের সংবাদ

গরম মসলার বাজার গরম

পরের সংবাদ

একুশের চেতনা ও বর্তমান ভাষা পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দিনে দিনে গড়িয়েছে ৭২টি বছর। ইতিহাসে এ সময়টি খুব দীর্ঘ না হলেও; আমরা বায়ান্নর চেতনাকে কতটুকু সমুন্নত রাখতে পেরেছি ইতোমধ্যেই তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তা সত্ত্বেও যদি কোনো বাঙালিকে প্রশ্ন করা হয়, বাঙালি হিসেবে আপনার কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয় কোনটি? তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে উত্তরটি আসবে তা হলো- আমার ভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা। সেটি আমরা সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করে বলি আর না-ই বলি অন্তত স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করি না।
মূলত বাংলাকে মাতৃভাষার দাবিতে ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়নি, ভাষা আন্দোলন হয়েছিল বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে। পাকিস্তান সরকার সে দাবি মেনে না নেয়ায় বিশ্ব ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছে এক বিরল ঘটনা। ভাষার জন্য তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে এই ভূখণ্ডের মানুষ। বাংলা সংখ্যাগুরুদের মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও; পাকিস্তান সেটিকে হিন্দুআনি ভাষা এবং অপরপক্ষে উর্দু ইসলাম ধর্মের ভাষা, সামন্তবাদী ভাষা- এসব খোড়া যুক্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে তা সর্বস্তরে ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও বাঙালির মধ্যে একটি দূরত্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তবে ভাষার প্রশ্নে বাঙালি চিরকালই ছিল আপসহীন। কাজেই পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়নি। বাঙালি প্রাণ দিল ভাষার তরে, আদায় করে নিল রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। পরবর্তী সময় নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে একাত্তরে দেশ স্বাধীন হলো। বাঙালি পেল এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। প্রসঙ্গত বলতে হয়, স্বাধীনতার সঙ্গত একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধকে এই প্রক্রিয়ার পরিণতি হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে তার সূচনা হলো ভাষা আন্দোলন। সূচনাকে উপেক্ষা করে কখনো ফলাফল উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুধাবন করতে হলে; আমাদের আগে ভাষা আন্দোলনকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। আজকে আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে বাংলা ভাষা কোন অবস্থায় রয়েছে- এ বিষয়টি এখন প্রণিধানযোগ্য।
মূলত বাংলা একটি মিশ্র ভাষা। এতে নানান দেশের, নানান ভাষার, নানান শব্দ এসে মিশেছে। বাংলা ভাষা সেগুলোকে প্রাণ খুলে আপন করে নিয়েছে। এটিই তো ভাষার ধর্ম। ভাষা যদি তার গ্রহণের দ্বার বন্ধ করে দেয়, ভিনদেশী শব্দ গ্রহণ না করে; তাহলে সেটি পরিণত হবে লাতিন, সংস্কৃত, গ্রিক ভাষার মতোই একটি মৃত ভাষায়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব শব্দ থাকা সত্ত্বেও; ভিনদেশী ভাষার শব্দ নিত্যদিন দেদার ব্যবহার করে যেতে পারি কিনা? নিশ্চয়ই না! বাংলা ভাষা কালক্রমে অনেক সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমাদের এখন রয়েছে এক সুবিশাল শব্দভাণ্ডার। তবে আক্ষেপের বিষয়, খুব চমৎকার বাংলা শব্দ থাকা সত্ত্বেও; আমরা সেটা ব্যবহার না করে তার স্থলে ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি শব্দ বেশি ব্যবহার করে থাকি। আবার উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মিশিয়ে জগাখিচুড়ি এক ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড বাংলার মান, মর্যাদা, গৌরব ক্ষুণ্ন করে।
হতাশার কথা হলো, আমরা আজো শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা সেটি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। সেই সঙ্গে উচ্চ আদালত ও সরকারি অফিসে এখনো ইংরেজি ভাষার আধিক্য রয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত না আমরা বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত বাংলা তার যথাযথ মর্যাদা লাভ করবে না এবং সেই সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও বাঙালি সর্বোচ্চ উৎকৃষ্টতা অর্জন করতে ব্যর্থ হবে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে বাংলা ভাষা বড়ই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে বিরাজমান। এই সংকট নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়। বাংলা ভাষার মান, মর্যাদা ও গৌরব সমুন্নত রাখতে প্রয়োজন বেশ কিছু কার্যকরী উদ্যোগের। প্রথমত, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমকে বাংলায় করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে বাংলার সুবিশাল, সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার সম্পর্কে এবং সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কেননা সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে একটি ভাষা সবচেয়ে বেশি বিকাশ লাভ করে। বিদেশি ভাষার দৌরাত্ম্য কমাতে, বাংলা ভাষায় ভালো সংগীত, চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণ করতে হবে।
ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষার মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় নতুন করে উদ্বুদ্ধ হওয়ার মাস। তবে আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা, সম্মান এবং চর্চা যেন শুধু ফেব্রুয়ারিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর গান : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ না, আমরা ভুলতে পারি না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদের মনে অনন্তকালব্যাপী লালন করতে হবে। বাংলাদেশ এখন বাংলা ভাষার রাজধানী। আমাদের ভাষার মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে গুরুদায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরই নিজ কাঁধে।

রবিউল আওয়াল পারভেজ : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়