জবির নতুন প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন

আগের সংবাদ

শেখ হাসিনার ইউরোপ জয় : মিউনিখ সফর > সরকার প্রধানদের অভিনন্দনে সিক্ত > শেখ হাসিনাকে ঘিরেই সবার আগ্রহ > বক্তব্যে যুদ্ধবিরোধী বার্তা প্রসংশিত

পরের সংবাদ

উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা ব্যবস্থার সুফল কারা পাচ্ছে?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা এক ভয়ংকর অধিকার বঞ্চনা নিয়ে বসবাস করছে। বঞ্চনার ভয়াবহতা এতই দীর্ঘ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, থেকে শুরু করে মুখ ফুটে কথা বলার অধিকার পর্যন্ত। সব স্তরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা, অদৃশ্য শাসনব্যবস্থা আরোপ রয়েছে। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড়ে বসবাস করা জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং স্বাধীনতার পরও তাদের একই ধারার ব্যবস্থায় নির্যাতিত, নিপীড়িত হতে হয়।
বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর ওপর সমতলের কিছুসংখ্যক উগ্র সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মদতে অসংখ্যবার হামলা, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা, হত্যা, গুম করা হয়। বেদনাদায়ক বিষয় হলো এই হামলা, হত্যা, গণহত্যা ও গুমের পরিসংখ্যান এক হাজার, দুই হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। নানা সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় পাহাড়ে এই পর্যন্ত প্রায় এক থেকে দুই লাখ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। পাহাড়ে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর মতে এর চেয়েও দ্বিগুণ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বাংলাদেশের সব মুক্তি সংগ্রামের লড়াইয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণ, অবদান ছিল। কিন্তু তারপরও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বঞ্চিত। পাহাড়ে এখনো প্রতিনিয়ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, গুমের শিকার হতে হয়। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মুক্তি সংগ্রামের লড়াই অবধারিত রেখেছে। পাহাড়ে বেড়ে ওঠা তরুণরা পাহাড়ের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে সংগ্রাম করছে। অসংখ্য তরুণকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন ১৯০০ খ্রি. আইনে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমতলের বাঙালিদের এই অঞ্চলে জমি কেনাবেচা বৈধ ছিল। সে প্রক্রিয়ায় সমতলের বাঙালিদের জমি চাষাবাদের জন্য পাহাড়ে এনেছিল পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। পরবর্তী সময়ে জমি চাষ ও বসবাসের জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে প্রভাবিত, নির্যাতিত করে জমি ক্রয় ও দখল করেন। এর মধ্য দিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমি দখল হতে শুরু করে। যা এখনো চলমান।
১৯৮৫ সালে দেশের কোটা ব্যবস্থায় প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নামমাত্র ৫ শতাংশ কোটা চালু করা হয়। যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার থেকেও একেবারে সংকীর্ণ। বরাদ্দকৃত যে কোটা চালু রয়েছে তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই কোটার সুফল পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে পায় না। ১৯৮৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিসহ সব সরকারি পরিষেবায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত ৫ শতাংশ কোটার উপরি উপরি প্রায় ১ থেকে ৩ অংশ বাদে বাকি ২ অংশ সেটেলার বাঙালিদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যা শিক্ষাক্ষেত্রে ৪ শতাংশেই সেটেলার বাঙালি সন্তানদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় কোটার সুফল তো দূরে থাক, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্মত হাসপাতালও নেই। গত কয়েক দিন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা মেডিকেলের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ব্যাচেলর অব সার্জারি এবং ব্যাচেলর অব মেডিসিনের (এমবিবিএস) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত ফলাফলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত কোটার অপব্যবহার দৃশ্যমান হয়। অর্থাৎ প্রকৃত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাইরে প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী সেটেলার বাঙালিদের সন্তান। এখানে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে সেটেলার বাঙালি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আলাদা করে কেন উল্লেখ হচ্ছে?
উল্লেখ হচ্ছে এই জন্য, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেটি তাদের চাহিদা অনুযায়ী কম হলেও এটির সম্পূর্ণ ভোগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী করবে। সংবিধান অনুযায়ীও এই কোটার সুফল পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ভোগ করবে। তাহলে কেন সেটেলার বাঙালিরা এই সুযোগের অপব্যবহার করছে? না এই কোটার অপব্যবহার অদৃশ্য শক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে?
পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক দুটো নিয়মে বিভক্ত- একটি অদৃশ্য শক্তি অন্যটি দৃশ্যমান অপশক্তি, যার কোন্দলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন অধিকার বঞ্চনার স্বীকার এবং নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হতে হতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকাও দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত। বাংলাদেশে একজন সমতলের মানুষ যেমন অধিকার পাবে, তেমনি পাহাড়ের মানুষেরও সে পরিপূরক অধিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, অধিকার বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
সুতরাং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনা মুক্তির দাবিও পাহাড়ে নিরাপত্তা ও তাদের নির্ধারিত অধিকারের সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পাহাড়ের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আর এসব পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার যদি সময়ক্ষেপণ করে, তাহলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর বঞ্চনা ও অত্যাচারের ভয়াবহতা আরো বাড়বে।

মারুফ হাসান ভূঞা : মিরপুর, ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়