জবির নতুন প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন

আগের সংবাদ

শেখ হাসিনার ইউরোপ জয় : মিউনিখ সফর > সরকার প্রধানদের অভিনন্দনে সিক্ত > শেখ হাসিনাকে ঘিরেই সবার আগ্রহ > বক্তব্যে যুদ্ধবিরোধী বার্তা প্রসংশিত

পরের সংবাদ

আমার বাংলা ভাষা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও দার্শনিক। মাতৃভাষার প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা। এই জ্ঞানতাপস মানুষটি মনে করতেন মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি- এ তিনের প্রতি যার শ্রদ্ধা নেই সে মানুষ নয়। মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবন, আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের প্রত্যেকের মন-প্রাণ ও ব্যক্তিসত্তার পরতে পরতে মিশে আছে মা ও মাতৃভাষা। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের ভাষা হলো আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো মায়ের ভাষা। কিন্তু ভাষা বিজ্ঞান অনুসারে মাতৃভাষার সংজ্ঞায় আক্ষরিক অর্থে মায়ের মুখের ভাষাকেই মাতৃভাষা বলে। জন্মের পর একজন মানুষ তার মায়ের কাছ থেকে প্রথম যে ভাষাটি শেখে, সেটাই ওই ব্যক্তির মাতৃভাষা। ভাষা হচ্ছে ভাবের বাহন। ভাষা আমাদের পরিচয়, আমাদের গৌরব, আমাদের সত্তা, আমাদের অহংকার, আমাদের প্রেরণা-চেতনা, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বাংলা ভাষার মাধ্যমেই আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, মতবিনিময় করি। স্বপ্ন-বাসনা, স্নেহ-মমতা, আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ একে অন্যের সঙ্গে আদান-প্রদান করি।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। অধিকার অর্জনের মাস। চেতনায় উদ্ভাসিত হওয়ার মাস। তাই তো ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমাদের মধ্যে নতুন করে ভাষাপ্রেম জেগে ওঠে। একুশের মূল চেতনা ছিল রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু রাখা। কিন্তু আমরা কি তা পেরেছি? অথচ ভাষার মাস এলে দেশজুড়ে মাতৃভাষাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়। সাংস্কৃতিক কর্মসূচি, বইমেলা, আলোচনা সভা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠ, অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকরা এই মাসকে বেছে নেয়। মাতৃভাষার প্রতি এমন উচ্ছ¡াস ও সীমাহীন আবেগ অপরাপর জাতির ক্ষেত্রে তেমন একটা দেখা যায় না।
মাসজুড়ে মাতৃভাষা নিয়ে এত সব উৎসব আনুষ্ঠানিকতা পালিত হলেও মাতৃভাষার ব্যবহার কিন্তু আজো নিশ্চিত হয়নি। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস এলে বাংলা ভাষা নিয়ে যতটা আবেগ আর উচ্ছ¡াস দৃশ্যমান হয়, এর সর্বজনীন ব্যবহার ততটা দৃশ্যমান হয় না। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাতৃভাষা যেন ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ফলে ঔপনিবেশিক ভাষার চর্চা দিন দিন বেগবান হচ্ছে। বিত্তবান ও মধ্যবিত্তরা ছুটছে ইংরেজি মাধ্যম অভিমুখে। অন্যদিকে দরিদ্র শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অজস্র আরবি ভাষাভিত্তিক মাদ্রাসা। ভাষার মাসের সঙ্গে বাস্তবতার মিলতো নেই-ই, বরং রয়েছে ভিন্ন চিত্র। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, ফেব্রুয়ারি মাস এলেই ভাষার প্রতি আমাদের আবেগ আর ভালোবাসা বেড়ে যায় বটে, কিন্তু ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই যেমন চলছিল, তেমনি চলতে থাকে। কোনো ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম উপায় হলো শুদ্ধ বানান, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা ও লেখা। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা এবং একই সঙ্গে দাপ্তরিক ভাষা। সব সরকারি ও কর্মপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষায় কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও বাংলা ভাষার শুদ্ধতা কি আমরা রক্ষা করতে পারছি? বাংলা ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কী দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছি? ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন কী শুধুই একটি মাস? অথচ আমরা ইংরেজি লেখার সময় কতই না সতর্ক থাকি। এর কারণ কী? কারণ হলো যোগ্যতা ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু বাংলা ভাষায় ভুল বানান লেখায় কারো যোগ্যতা বা দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না। তাইতো শুদ্ধ বানানে শুদ্ধ উচ্চারণের চর্চার বিষয়ে কারো কোনো ভ্রæক্ষেপ নেই, শোধরানোর তাগিদ নেই। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে চলছি।
কোনো কিছু লেখার আগে সন্দেহ দেখা দিলে অভিধান দেখে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলাটাই ভালো বলে আমি মনে করি। আসলে সমস্যা হচ্ছে আমাদের মানসিকতায়। শুদ্ধ বানানের চর্চায় ইচ্ছা ও আন্তরিকতাটাই প্রধান। এ বিষয়ে আমাদের পর্যাপ্ত বই-পুস্তক রয়েছে, সুযোগও রয়েছে। কিন্তু নেই ভাষার প্রতি ভালোবাসা। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, কঠিন আইন ও জরিমানার মাধ্যমে এ অনিয়মের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
কোনো জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাইলে প্রথমেই ধ্বংস করে দিতে হবে তা মুখের ভাষাকে। এ কথাটির সত্যতা অনুধাবন করতে পেরেই ইংরেজরা এ দেশে ইংরেজি ভাষা চালু করে। ফলে ২০০ বছর এ দেশবাসীকে শাসন-শোষণের মাধ্যমে বাঙালিদের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানিরাও ইংরেজদের পথ অনুসরণ করে। তারই প্রতিবাদে চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। তাই তো আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সময় বায়ান্ন থেকে একাত্তর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই হলো আমাদের স্বাধীনতার সিঁড়ি। একাত্তরে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। দুটো আন্দোলনেই রক্ত ঝরেছে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যদি আমরা না পেতাম, তাহলে কী হতো? বাংলা মটরের নাম থাকতো পাক মটর। ঢাকার সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড লেখা হতো উর্দুতে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ থাকত না। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসানের প্রতিভা আবিষ্কৃত হতো না। তাছাড়া পাকিস্তানের জাতীয় দলে কোনো বাঙালি কোনো দিনই সুযোগ পেতো না। ড. ইউনূসও নোবেল পুরস্কার পেতেন না। স্বাধীনতা ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকও হতো না, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাকও হতো না।
স্বাধীনতা হলো পরশ পাথর, যা বদলে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ হতে চলেছে পৃথিবীর অন্যতম অর্থনীতির দেশ। সব কিছুতেই ভালো করছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফল উৎপাদনে রেকর্ডধারী। মাছ উৎপাদনে দুনিয়ার সেরাদের তালিকায়। গার্মেন্টস রপ্তানিতেও অন্যতম সেরা। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই তো এসব সম্ভব হয়েছে। আর সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন যিনি দেখিয়েছিলেন, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই এই গৌরবের মাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

ড. ইউসুফ খান : কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়