নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে মুগদা থেকে গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টেনে তোলার চেষ্টা : সুফল মিলবে কি?

পরের সংবাদ

বিপুল বিস্ময়ের স্বদেশ শক্তি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা এখন দুঃসাধ্য বিষয়। সম্প্রতি কোনো বিশেষ দেশের রাজদূত হাজারো চেষ্টার পরও দেশ, দেশের মানুষ এবং নেতার মনোবল ভাঙতে পারেননি। অহংকারী, লোভী, দাম্ভিক মানুষও দেশ ভুলে যায়, তারও ইতি আছে। তার সময়কালও ওঠানামা করে। এককালে দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় রাখা আর এখন দেশে দেশে প্রভুত্ব কায়েম করা ভিন্ন বিষয়। ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষ সব জানছে, বুঝছে, এগোচ্ছে। তাই সে খুব ভালো করেই জানে কে তার বন্ধু আর কে দুশমন। এটাও জানে আগের মতো খবরদারি করা এখন অচল। বিশেষত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল আর বিস্ময় জাগানো অর্থনীতির দেশকে এখন সমীহ করার বিকল্প নেই। তার মতো যেসব দেশ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে এগোচ্ছে তাদের সঙ্গে আর যাই চলুক- খবরদারি, চোখ রাঙানো চলে না। কারণ দুনিয়ার নিয়ামক যে অর্থনীতি তার একটা বড় দিক এদের হাতে। আপনি যে-ই হোন না কেন তাদের সঙ্গে নিয়ে না চললে খবর আছে।
আমাদের নেতা শেখ হাসিনার ছোটখাটো কিছু বিষয় দূরে রাখলে তিনি অনন্যা। তার আমলে যেসব প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে তা ছিল স্বপ্নাতীত। কেউ যা ভাবেনি বা ভাবা উচিত হলেও কাজে রূপ দিতে পারেনি, তিনি তার অনেকটাই সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন। এমন নেতাকে আপনি কথা আর বাসে আগুন লাগিয়ে ঠেকাবেন? আমরা যারা দেশের বাইরে বসবাস করি আমাদের ভেতর যেসব সুবিধাবাদী বাঙালি তার বিরোধিতা করে তাদের কথা শুনলেই বুঝি শেখ হাসিনা ঠিক পথে হাঁটছেন।
উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি যে কোনো দেশের মানুষের স্বপ্ন। আজকে সে স্বপ্ন আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ জয়রথে। নিন্দুক সমালোচকরা যে যাই বলুক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনামূলক আলোচনা করলেই আমরা পার্থক্য ধরতে পারব। অনেকে হয়তো জানেন পাকিস্তান এখন শেষ ধাপে ধুঁকছে। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে আর বেশি সময় লাগবে না। সেখানকার মানুষ একসময় বুক ফুলিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলত। এখন না কি তারা বলে, পাকিস্তান সে জিন্দা ভাগো। বেঁচে পালাও পাকিস্তান থেকে। এই করুণ পরিস্থিতি পাকিদের প্রাপ্য। কারণ সে দেশের অর্থনীতি নিয়ম মানেনি।
আমাদেরও অনেক দুর্বলতা আছে। সেগুলো আমরা জানি। কিন্তু আমাদের এও জানা উচিত বাংলাদেশ এখন সারা পৃথিবীতে সাড়াজাগানো অর্থনৈতিক উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান। ১৯৭২ সালের ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষুদ্র জিডিপি এখন ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বেশ বড় অর্থনীতি। ১৯৭০-৭১ অর্থবছরে সামষ্টিক আয়ে ছিল নেতিবাচক- ১২ শতাংশ সংকোচন। আর করোনার ছোবলের আগ পর্যন্ত বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে বিরাজমান ছিল। মাথাপিছু আয়ে ১৯৭২ সালে ৮৫ মার্কিন ডলার এখন ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। সামষ্টিক আয়ের অনুপাত হিসাবে বহিঃবাণিজ্যে ১৯৭২ সালে ২ শতাংশের কম ছিল; এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশে। মোট সামষ্টিক আয়ে মাধ্যমিক খাতের অবদান ১৯৭২ সালে ছিল ১৭ শতাংশ। তার মধ্যে শিল্পোৎপাদনের ছিল ৮ শতাংশ। করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে বার্ষিক সামষ্টিক আয়ে মাধ্যমিক খাতের অবদান ছিল ৩৩ শতাংশ (শিল্পোৎপাদনে ১৮ শতাংশ)।
উন্নয়নের সূচক এখন কথা বলছে। অনেকেই মনে করে এসব সূচক না কি বানোয়াট। তারা ভোগবাদে বিশ্বাসী হওয়ার পরও এমন কথা বলে রাজনৈতিক কারণে। আসলে বাংলাদেশের চেহারায় যে পরিবর্তন তা অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই। বিগত এক দশকে সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়েছে। রাজনীতি, সম্প্রদায়গত বিভেদ, ধর্ম নিয়ে উস্কানি- এসব বাদ দিলে দেশের মানুষের হাতে টাকা এসেছে। বিপুল না হলেও মধ্যবিত্ত হওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছে গেছে অনেক বড় এক জনগোষ্ঠী। কিন্তু লুটপাট, টাকা পাচার ও অনিয়মের কারণে আরো অনেক পথ যাওয়ার রাস্তাটা ক্রমেই সরু হয়ে উঠেছে বা উঠতে চাইছে।
করোনা মহামারি পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। এই কঠিন সময়েও বাংলাদেশ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। আমাদের সমাজে লেখাপড়ার অভাব জ্ঞানের আকাল মারাত্মক। সহজ ছিল না মানুষকে টিকা দেয়ানো। সহজ ছিল না ভ্যাকসিন দেয়ানো। তারপরও সে কাজ সফলভাবে হয়েছে। নিন্দুকেরা যাই বলুক বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ও ঝুঁকি ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। যে পজিটিভ বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি তার অস্তিত্ব কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নে বাধা নয়। এর বাইরে যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, তার কাছেই আছে মূল চাবিকাঠি। তারা মাঠে-ময়দানে, কল-কারখানায় কাজ করে দেশকে সচল রাখেন। বছরের পর বছর হরতাল, অবরোধ ও হাঙ্গামাবিহীন অর্থনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটা দেখার পরও কি আমরা বিশ্বাস করব না? আমার ধারণা নারীশক্তির জাগরণই দেশের মূলস্তম্ভ। বাংলাদেশের অর্জনের চালিকা শক্তি যেমন শেখ হাসিনা তেমনি তার মতো এ দেশের নারীরাই আছেন অগ্রভাগে। নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। ‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুস্থ, এতিম, অসহায় পথশিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশকেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ডে। পাকিস্তানের সঙ্গে এই তফাত আমাদের অনেক এগিয়ে রেখেছে। যা এখন সে দেশের বুদ্ধিজীবীরাও স্বীকার করে। পাকিস্তানের কথা বারবার বলছি এ কারণে এখনো দেশের জনগণের এক অংশ পাকি প্রেমে মশগুল। তাদের এই মানসিক অবস্থান আমাদের অর্থনীতিকে পিছিয়ে রাখছে। কারণ এরা মন ও মগজে বাংলাদেশি হতে পারেনি এখনো। এই জাতীয় অভ্যন্তরীণ অবরোধ না থাকলে আমাদের অর্থনীতি আরো এগিয়ে থাকত।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ আর কাচের দেয়াল নয়। কেউ চাইলেই তাকে চুরমার করতে পারবে না। যতদিন কোনো অপশক্তি তা রুখে না দেয় ততদিন সচল থাকবে এই যাত্রা। একটা কথা বলতেই হবে, আমাদের দেশে অভাব আছে এখনো। বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের বাজার এখন অশান্ত। দাম বাড়ছে হু হু করে। সাধারণ মানুষের কষ্টও বাড়ছে। এমন কঠিন বাস্তবতায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত হলে দুঃখের সীমা থাকবে না। তাই রাজনীতির উচিত হবে কথা কমিয়ে ব্যয় কমিয়ে দেশকে ঠিক পথে রাখা। বিরোধীদের দায়িত্ব বিরোধিতা যৌক্তিক করে তোলা। কারণ সবার আগে দেশ আর দেশের মানুষ।
আমি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে লিখতে পছন্দ করি কম। কারণ এগুলো ধার করতে হয়। আর এসব বোরিং বিষয়। কিন্তু পজিটিভ বাংলাদেশ যেখানে আমাদের সবার দেশ ও দেশের বাংলাদেশিদের কাম্য সেখানে বারবার নেগেটিভিটি এসে আক্রমণ করে আমাদের। পথ লম্বা। পথ অসীম। আজ একদল, কাল হয়তো আরেক। তার মানে এই নয় যে এদের সবকিছু অস্বীকার করতে হবে। বলতে হবে সব শেষ সব শেষ। বরং যে যতটা দিচ্ছে তাকে কেন্দ্র করেই এগোবে দেশ ও সরকার। দেশ, সরকার জনগণের সঙ্গে থাকবে চাই- এটাই আমাদের চাওয়া। আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই সামনে যেতে হবে। কিন্তু সবার আগে পজিটিভ বাংলাদেশ। এই পজিটিভিটি যেন নষ্ট না হয়। তাহলেই আমাদের জয় অনিবার্য।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়