নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে মুগদা থেকে গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টেনে তোলার চেষ্টা : সুফল মিলবে কি?

পরের সংবাদ

পরিবেশ নিয়ে সব অভিযোগ জানানো যাবে : ৩৩৩-৪ হেল্পলাইন চালু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সেবাগুলোর তথ্য দেয়ার পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে যে কোনো অভিযোগ জানাতে জাতীয় তথ্য ও সেবা হেল্পলাইন ‘৩৩৩-৪’ এর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত স্মার্ট মন্ত্রণালয় বিনির্মাণ নিয়ে করা এক সভায় এই প্রযুক্তি সেবার উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্?মেদ পলক।
এ সময় পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে স্মার্ট মন্ত্রণালয়ে পরিণত করার পাশাপাশি সার্বিক ডিজিটাল রূপান্তরে সহযোগিতা ও সমন্বয়কে সহজ করতে এটুআই, আইসিটি বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং এটুআই-এর পক্ষে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, এই সমঝোতা স্মারক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে নাগরিকদের অভিযোগ জানানো সুবিধা স্থাপনের পাশাপাশি সরকারি সেবা উন্নত করা, অভ্যন্তরীণ দক্ষতা বাড়ানো এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে ডিজিটাল উদ্যোগের পরিসর বিস্তৃত করবে। এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পরিদর্শন কেন্দ্রে ই-টিকেটের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও এর অগ্রগতি পর্যালোচনায় এডিপি ট্র্যাকারের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি সংরক্ষণ এবং পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একীভূত করা হবে। পরিবেশগত মান ও প্রভাব মূল্যায়নে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ডিজিটাল সমাধান করা হবে। অনলাইন পরিবেশগত ছাড়পত্র সনদ দেয়া ও প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং ব্যবস্থা সহজ করা হবে।
এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্?মেদ পলক বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা হতে যাচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় হবে প্রথম স্মার্ট মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, এখন থেকে নাগরিকরা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে পরে ৪ চেপে পরিবেশ ছাড়পত্র, গবেষণাগার, বন সংরক্ষণ ইত্যাদি পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তরগুলোর তথ্যসেবা ও কর্মকর্তাদের তথ্য পাবেন। পাশাপাশি পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট এবং অবৈধভাবে বন/পাহাড় ধ্বংস ও গাছকাটা ইত্যাদি বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। পরে অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ড্যাশবোর্ডে পাঠানো হবে। এরপর কর্মকর্তা অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সুবিধাভোগীরা এসএমএসের মাধ্যমে আপডেট পাবেন অথবা ৩৩৩ নম্বরে কল করেও আপডেট জানতে পারবেন। সরকারি কাজে জনগণকে ডিজিটালি সম্পৃক্ত করে আগামী ৫ বছরে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাইলফলক স্থাপিত হবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রধানরা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ক্লাব গঠনের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর : শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ক্লাব গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশের অনেকাংশ নির্ভর করছে পরিবেশের বিষয়টিকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি তার ওপর। দূষণ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দূষণের অনেক মাত্রা আছে। বায়ুদূষণ আমাদের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। শব্দদূষণ ও প্লাস্টিক দূষণ আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই দূষণ রোধে সচেতনতা তৈরিতে পরিবেশ ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ক্লাব থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ক্লাব গঠন করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন। আরো বক্তব্য রাখেন গভর্নিং বডির সদস্য আনোয়ার কবির ভূঁইয়া, শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খান, আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ, চাঁদ সুলতানা প্রমুখ।
প্লাস্টিক দূষণ রোধের ওপর গুরুত্বারোপ করে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক আমরা সবাই ব্যবহার করি। প্লাস্টিকের বর্জ্য নদ-নদী বা জলাধারে গিয়ে মাছের খাদ্য হয়। এর ফলে মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক চলে যাচ্ছে। সেই মাছ আমরা যখন খাচ্ছি তখন সেই ক্ষতিকর পদার্থ আমাদের শরীরে ঢুকছে। বর্জ্য হিসেবে যেগুলো ফেলে দেই সেগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীরে পুনরায় ঢুকছে। এর ফলে ক্যান্সারসহ অনেক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ অর্থাৎ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বেইলী রোডসহ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে কয়টি শাখা রয়েছে সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যদি একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকে তাহলে বাংলাদেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করার কাজটি সহজ হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ আছে। স্মার্ট সরকার ব্যবস্থাপনা বা সুশাসন, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বক্তব্যের শুরুতে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি। মুক্তির সংগ্রাম স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন এবং যারা আমাদের মধ্যে নেই তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। মহান একুশের মাসে বিশেষভাবে ভাষা শহীদদের আমরা স্মরণ করি। আমাদের এই স্মরণটি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমিত না থাকে। সেটি যেন সত্যিকার অর্থেই সম্মান হয়। এই স্মরণ এবং তাদের প্রতি সম্মান তখনই স্বার্থক হবে, যখন তাদের স্বপ্নের কল্যাণময়, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করেন, ‘জয় বাংলা’ কোনো রাজনৈতিক দলের বিশেষ সেøাগান কি না? জয় বাংলা শুধু আওয়ামী লীগের সেøাগান নয়। জয় বাংলা ছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের সেøাগান। এই সেøাগান সমস্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। সেই ঐক্যবদ্ধের মূল চেতনা ছিল ভবিষ্যতে আমরা কী ধরনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, কী ধরনের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই সেøাগানটিকেও মুছে ফেলা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের প্রতিটি পোস্টারে জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু লেখা হয়। সুতরাং জয় বাংলা শুধু আমাদের অতীত সংগ্রামের ঐতিহ্যের সেøাগান নয়, এটি আগামীতে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই অর্থাৎ বাঙালি হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব পর্যায়ে অবস্থান গড়ার স্লোগান। আমরা বিশ্বমান স্পর্শ করব। সেটিও প্রকাশ করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো মাঠজুড়ে নির্মিত প্যান্ডেল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আয়োজনে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শাখার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে গতকাল ছিল তৃতীয় দিন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনের পর স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়