ঢাকার জিনজিরা : বিয়ের পরদিনই বরের মৃত্যু

আগের সংবাদ

তৃণমূলে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা

পরের সংবাদ

প্রাণে প্রাণ মেলাবার উৎসব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দিনভর নাটক-আড্ডায় মুখর ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী নাট্যমেলা আয়োজন করেছিল রহমান রাজু সম্পাদিত থিয়েটারবিষয়ক পত্রিকা ‘আনর্ত’। সাম্প্রতিক সময়ে নাটক নিয়ে এত গোছানো আর পরিশীলিত আয়োজন কমই দেখেছি। ঢাকায় সাধারণত কোনো আয়োজন হলে সবাই তার কর্মব্যস্ততা সঙ্গে নিয়েই ক্ষণিকের জন্য আসেন এবং বাড়ি ফেরার তাড়া মাথায় নিয়ে আড্ডা দেন। আনর্ত নাট্যমেলায় ছিল না বাড়ি ফেরার তাড়া। সারা দেশ থেকে নাট্যকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। ডরমেটরিতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু সবাই মেলা প্রাঙ্গণেই আড্ডায় কাটিয়েছেন পুরোটা সময়। আর এমন প্রাণখোলা আড্ডার পরিবেশ, খোলা ময়দানে গাছের ছায়ায় বসে একটু পর পর চা খাওয়া। সব মিলিয়ে দারুণ।
ক্যাম্পাসের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনের চত্বর এবং কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিতে মেলার বিভিন্ন আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। ‘থিয়েটার এক জ্যামিতিক জীবন বহুকোণে হয় তার স্বরূপে সমর্পণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার অনুষ্ঠিত হয় ‘২য় আনর্ত নাট্যমেলা’। সহযোগিতায় ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ ও ভারতের শতাধিক নাট্যকর্মী অংশ নেন আনর্ত নাট্যমেলার বিভিন্ন পর্বে। মঙ্গল সমাপন পর্বের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রাত ৯টায় পর্দা নামে মেলার। এর আগের দিন সোমবার বেলা ১১টায় নাট্যজন মামুনুর রশিদ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন।
ঢাকার বাইরে যে কোনো নাট্য আয়োজনের প্রতিই আমার পক্ষপাতিত্ব আছে। আমি চাই, ঢাকার বৃত্ত ভেঙে নাটকের আলো জ্বলুক দেশজুড়ে। আর ঢাকার বাইরের আয়োজন যদি গুণেমানে ঢাকাকেও ছাড়িয়ে যায়। আমি তবে ভীষণ খুশি হই। ঢাকায় থাকি, কিন্তু নিজেকে এখনো ঢাকার চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাবতে বেশি ভালো লাগে। তাই কোনো জেলা শহরে যখন অসাধারণ কোনো নাট্য আয়োজন হয়, তখন সেই আয়োজনটিকে অনেক বেশি আপন লাগে। আনর্ত সম্পাদক রহমান রাজু সমাপন বক্তব্যে বলছিলেন, ‘এই নাট্যমেলার মধ্য দিয়ে আমরা চেয়েছি, মানুষে মানুষে সৌহার্দ বাড়ুক।’ তার সেই ভাবনার বাস্তব সম্মিলনই ঘটেছিল মেলায়। প্রাণে প্রাণ মেলাবার এই মেলা আমাদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে।
দেশবরেণ্য নাট্যজনদের সঙ্গে নবীন নাট্যকর্মীদের মিশে থাকার এমন অসাধারণ মেলার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কারণ রহমান রাজু থিয়েটারবিষয়ক ছোট কাগজ নিয়ে কথা বলার জন্য একটি সেশনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই সেশনটিও ছিল ভীষণ প্রাণবন্ত। অনেক তিক্ত, আর সত্য বয়ানে চিন্তার দরজায় কড়া নেড়েছে। পুরো আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের একঝাঁক নবীন উদ্যমী তরুণকে দেখেছি। তারা এই নাট্যমেলা সফল করতে কীভাবে রহমান রাজুর সার্বিক নির্দেশনায় কাজ করেছেন। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজের মাঝে দেখেছি গ্রুপ থিয়েটারের উদ্দীপনা। একটা বিশাল দলের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই সফল একটি নাট্যমেলার আয়োজন করতে পারল আনর্ত।
মেলার আয়োজনে ছিল তিনটি বিষয়ভিত্তিক বৈঠক। যার শিরোনাম- ‘নাট্য আড্ডা : নাট্যচর্চায় নাটকীয় স্মৃতিচারণ’, ‘নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর : কী পেয়েছি, কী পাইনি’, ‘থিয়েটারের কাগজ : যতরকম দায়’। এ ছাড়া থিয়েটারের ‘প্রত্যক্ষ’ ও ‘নেপথ্য’ শাখায় তিনজনকে মেলায় দেয়া হয় ‘আনর্ত স্বীকৃতি ২০২৪’। যাত্রাশিল্পে অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন জ্যোৎস্না বিশ্বাস। থিয়েটারের নেপথ্য শাখায় পেয়েছেন বাবুল বিশ্বাস এবং দুই হাজারের বেশি নাটক ও যাত্রাপালায় লাইটের কাজ করা রাজশাহীর আবু তাহের পেয়েছেন এই স্বীকৃতি।

লেখক : পাভেল রহমান
সম্পাদক, ক্ষ্যাপা-থিয়েটার পত্রিকা

মেলায় মঞ্চস্থ হয় দেশনাটক প্রযোজিত নাটক ‘পারো’, ভারতের মধ্যমগ্রাম নৃত্যবিতানের প্রযোজনা ‘ওয়ান ফ্রাইডে মর্নিং’, আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত ‘কহে ফেসবুক’, নাট্যদল অনুস্বর প্রযোজিত ‘মূল্য-অমূল্য’।
এ ছাড়া পালানাটক ‘কালিন্দীর গীত’ মঞ্চস্থ করে গাইবান্ধার সারথি থিয়েটার। পথনাটক ‘সুনাগরিকের সন্ধানে’ মঞ্চস্থ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল অনুশীলন এবং রাবি নাট্যদল সমকাল মঞ্চস্থ করে ‘বহমান’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়