সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিস

আগের সংবাদ

লাল-সবুজ পতাকা হাতে সমাবেশ করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

বই থেকে সিনেমা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গল্প এবং উপন্যাসের অদ্ভুত এক ক্ষমতা থাকে টেনে নেয়ার। এই ক্ষমতাবলে এরা আমাদের টেনে ফেলে দেয় তার ভেতর। তাদের ভেতর। আমরা চলি, খাই, ঘুমাই; কিন্তু সেই চরিত্রদের সঙ্গে! চরিত্ররা দিনের পর দিন আমাদের ভোগায়! এই ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যখন দেখি চরিত্ররা পর্দায় উঠে আসে। আপনি ‘পথের পাঁচালী’র ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন? কিংবা ‘হাজার বছর ধরে’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘দীপু নাম্বার টু’ এবং ‘লালসালু’র মতো চলচ্চিত্রের ঘোর থেকে? রবীন্দ্রসাহিত্য থেকে এদেশে তৈরি হয়েছে ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘সুভা’ ও শাস্তি’। নজরুলের উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ এবং গল্প ‘ব্যথার দান’ ও ‘পদ্মগোখরা’ অবলম্বনেও ছবি নির্মিত হয়েছে। নজরুলের অন্যতম সেরা গল্প ‘পদ্মগোখরা’ অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘সুখ-দুঃখ’। একই কাহিনী নিয়ে ‘মায়ার বাঁধন’ নামে অপর একটি ছবি তৈরি হয়। এছাড়াও নজরুলের গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘রাক্ষুসী’ অবলম্বনে।
প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ‘মৌলিক’ ও সাইপ্রাস’ নামের দুটি গল্পকে এক করে নির্মাতা নূর ইমরান মিঠু নির্মাণ করেছেন ‘কমলা রকেট’ ছবিটি। হাতেগোনা কয়েকটি হলে মুক্তি পেলেও দর্শকের পছন্দ ও আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছিল এ ছবিটি। কথা হলো কয়জন দর্শক দেখেছে? প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে অনম বিশ্বাস তৈরি করেছেন ‘দেবী’।
এর আগেও অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে। এ নিয়ে বহু কথা হয়েছে। বর্তমানে গল্প, উপন্যাস থেকে কটি সিনেমা তৈরি হচ্ছে সেটাই এখন ভাবার বিষয়। সম্প্রতি গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানাকে আবার পর্দায় নিয়ে এসেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। এই আইকনিক চরিত্রকে ১৯৭৪ সালে বড় পর্দায় তুলে ধরেন সোহেল রানা। একই সঙ্গে ছবিটির পরিচালনা, প্রযোজনা ও অভিনয় করেন তিনি। জাজ মাল্টিমিডিয়ার এই উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার।
আমাদের দেশের সিনেমায় সবচেয়ে বড় সমস্যা গল্প। তাইতো সদা ব্যস্ত ভারতের তামিল-তেলেগু সিনেমার গল্প চুরিতে। একটা সময়ে হিন্দি ছবি সমানে রিমেক করা হতো। নব্বই দশকের জনপ্রিয় প্রায় ছবিই হিন্দি ছবি অনুকরণে বানানো হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রায় বেশিরভাগ সিনেমাই এই ছবি সেই ছবির অনুকরণ।
গল্পের আকাল কেন? যেখানে আমাদের শিল্প সংস্কৃতি এত উন্নত! সারাবিশ্বে বইয়ের পাতা থেকে বিখ্যাত সিনেমা নির্মাণ হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেকাংশে পিছিয়ে। শুধু বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালের গল্প নিয়েই বেশিরভাগ সময় সিনেমা নির্মাণ হয়। এর বাইরেও আমাদের দেশে প্রথিতযশা অনেক সাহিত্যিক রয়েছেন, যাদের গল্প-উপন্যাস সিনেমায় ফুটে উঠতে পারে। সাহিত্য থেকে যেসব সিনেমা নির্মাণ হয়। বেশিরভাগ সিনেমাই প্রশংসিত হয়। আমাদের দেশে প্রশংসাতেই আটকে থাকলেও বহিঃবিশ্বে ব্যবসাসফল হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
বলিউডে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বিখ্যাত লেখকের বহুল বিক্রীত ও জনপ্রিয় উপন্যাস থেকে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা। মজার ব্যাপার, সিনেমাগুলোও বইয়ের মতোই পাচ্ছে জনপ্রিয়তা। বক্স অফিসেও ভালো ফলাফল পাচ্ছে। সব সিনেমা এ সময়ের। শুধু ভারতীয় নন, অন্যান্য দেশের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় লেখকের কাহিনিও তুলে ধরা হচ্ছে পর্দায়।
ভারতে এই মুহূর্তে অন্যতম জনপ্রিয় লেখক চেতন ভগত। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় তার লেখা বইগুলো। আর তা থেকে নির্মিত হয় সিনেমাও। প্রায় সব ছবিই ব্যবসাসফল। ‘ওয়ান নাইট অ্যাট দ্য কল সেন্টার’ তার একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এটি ভারতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হয় ‘হ্যালো’ নামের সিনেমাটি। ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’- উপন্যাস থেকে বিখ্যাত ‘থ্রি ইডিয়টস’। ‘টু স্টেট’ ও ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’ থেকে একই নামে সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। ‘দ্য থ্রি মিসটেক অব মাই লাইফ’ থেকে ‘কোই পো চে’। এছাড়া এর আগে শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’, ‘পরীনিতা’। ভারতের বিখ্যাত লেখক আর কে নারায়নের ‘গাইড’। ভারতীয়রা বিদেশি লেখকদেরও স্মরণাপন্ন হয়েছেন সে তালিকায় জেন ওউস্টেনের ‘এমা’ থেকে ‘আয়সা’। ভিশাল ভারদ্বাজতো বিখ্যাত পরিচালক হয়েছেন উইলিয়াম শেকসপিয়রের গল্প-উপন্যাস থেকে সিনেমা নির্মাণ করে। যেমন তিনি ‘ওথেলো’ থেকে ‘ওমকারা’, ‘ম্যাকবেথ’ থেকে ‘মকবুল’, ‘হ্যামলেট’ থেকে ‘হায়দার’, রাস্কিন বন্ডের ‘সুজানা’স সেভেন হাজব্যান্ড’ থেকে ‘সাতখুন মাফ’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন। রাস্কিন বন্ডের ‘দ্যা ব্লæ আমব্রেলা’র একই নামে সিনেমা নির্মাণ হয়। ও’হেনরির ‘দ্য লাস্ট লিফ’ থেকে ‘লুটেরা’, ফায়ারড ডোস্টোভস্কির হোয়াইট নাইট থেকে ‘সাওয়ারিয়া’, সাবা ইমতিয়াজের ‘করাচি ইউ আর কিলিং মি’ থেকে ‘নুর’ সিনেমাটি নির্মাণ হয়। এছাড়াও বলিউডে অসংখ্য সিনেমা গল্প উপন্যাস থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। নামের তালিকা দেখলেই বুঝতে পারছেন সাহিত্য থেকে শুধু প্রশংসাই নয়, সম্ভব ব্যবসাসফল সিনেমাও। হলিউড এ ক্ষেত্রেও সবার চেয়ে এগিয়ে। আমরা হয়তো অনেক বিখ্যাত হলিউডের সিনেমা দেখি। কিন্তু জানি না সিনেমাটি কোন গল্পের বই থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। থ্রিলার, কমিক, শিশুতোষ কোনো বই-ই বাদ যাচ্ছে না তাদের সিনেমার নির্মাণ ক্ষেত্রে। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না সেসব সিনেমার নাম লিখে। অগাধ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রেরও। গল্প উপন্যাসের এখনই সময় সঠিক ব্যবহারের। একটি পরিপূর্ণ সিনেমার জন্য গল্পকে হতে হয় সবচেয়ে বড় স্টার। নতুবা কখনোই কোনো ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে পারবে না। যেমন কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি তামিল-তেলেগু নকল করে বহু হিট সিনেমা দিয়েছে। কিন্তু আজ তাদের বেহাল অবস্থা। মৌলিক গল্পের ওপরই ভর করতে হচ্ছে। জিতের মতো স্টারদের সিনেমাও মার খাচ্ছে। সাহিত্য নিয়ে বহু সিনেমা প্রশংসা পেয়েছে। সেখানে নতুনত্ব কিছু নেই। ব্যবসাসফল হওয়াটাও জরুরি। সেখানেই সার্থকতা। হলিউড কিংবা বলিউড নিয়মিত তা দেখাচ্ছে। আধুনিক নির্মাণশৈলী থাকলে আমাদের দেশেও সম্ভব।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়