বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে চায় মিসর : বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূূতের সাক্ষাৎ

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্র এমপিরা কী চান

পরের সংবাদ

পাহাড়ে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি বৃহৎ পাহাড়ি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত হয়েছে। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ২৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ। এ বিশাল অঞ্চলের জনগোষ্ঠী মানুষের জীবনযাপন প্রণালি বেশ ভিন্ন। এরা এ অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রম করেই জীবনযাপন করে। এ অঞ্চলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, ম্রো, খিয়াং, বম, খুমিসহ ১৪টি জাতিগোষ্ঠীর লোকজন অনাদিকাল থেকেই বসবাস করে আসছে। অন্যদিকে
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এমন বেশকিছু স্থাপনা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে সেগুলো হলো- খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র, যা ১৯৬৯ সালে ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (তৎকালীন পাকিস্তানের ঙরষ ধহফ এধং উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ) এটি আবিষ্কার করেছিল। তারপর পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি কাগজের কারখানা রয়েছে, যার নাম কর্ণফুলী পেপার মিল। যে মিলের উৎপাদিত কাগজ সমগ্র দেশে পাওয়া যায়। এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাইয়ে রয়েছে একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দেশের জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র’।
মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি প্রধানত হলদে বাদামি থেকে লালচে-বাদামি, দো-আঁশ মাটি। ভিন্ন ভিন্ন গভীরতায় এগুলো ভগ্ন কর্দম শিলা, বেলেপাথর এবং কর্বুরিত বালির স্তরে বিভক্ত। এই মাটি বেশিমাত্রায় অমøধর্মী। এখানে অগণিত গাছপালা আর পাহাড়ি ভূমি রয়েছে। ভূমিগুলোতে সাধারণত সমতল ভূমির মতো চাষাবাদ করা যায় না। তবে প্রাকৃতিক উদ্ভিদাদি প্রচুর জন্মে। একসময় পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকার সমতলভূমিতে তুলা, ধান, চা ও তৈলবীজের চাষ হতো। বর্তমানে পাহাড়ের চাষাবাদের ধরন পাল্টেছে। এখন পাহাড়ে জুম চাষ একটি জনপ্রিয় এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি সর্বজনীন চাষাবাদ। এখন প্রায় সারা বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সব ধরনের ফসলে ভরে থাকে। এর বাইরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মৌসুম অনুযায়ী আনারস, আম, কাঁঠাল, কলা, কমলা, মুসাম্বী, আদা, হলুদসহ সবকিছুরই আবাদ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠী পাহাড়ে সব ধরনের সবজি উৎপাদন করে। তাদের সব সবজিই সাধারণত প্রাকৃতিক। বেশি ফলনের জন্য তারা এসব সবজিতে কোনো ধরনের সার কিংবা বিষ প্রয়োগ করে না। পাহাড়ি মাটি সাধারণত ঊর্বর হওয়ায় এখানে প্রচুর ফলন হয়। পাহাড়িরা সবসময় তাদের পাহাড়ে উৎপাদিত টাটকা শাক-সবজি খেয়ে থাকে। এরা সাধারণত নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর যে কোনো ফসল তাদের নিজেদের এলাকার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি জনপ্রিয় সবজির নাম বাঁশ কোড়ল। এ বাঁশ কোড়ল বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
এটি তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সমতলেও বিক্রি হয়। এটি বিক্রি করে এরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হয়। পাহাড়িদের আরেকটি প্রিয় শাক সাবারাং পাতা। এ পাতা তারা সব ধরনের তরকারিতে ব্যবহার করে। এটি সাধারণত পার্বত্য এলাকায় ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। এটির চাষাবাদ সমতলে করা গেলে সমতলের জনগোষ্ঠীও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারত। এর বাইরে বাঁশশিল্পের বেশিরভাগ বাঁশই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যায়, কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বাঁশগাছের জন্মভূমি। এখানে অজস্র বাঁশগাছ জন্মে। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিধায় এখানে পর্যটন ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এ বিষয়ে সরকারকে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এর বাইরে বর্তমানে পাহাড়ে বাগানের পর বাগান বিভিন্ন ফলফলাদির চাষাবাদ হচ্ছে যে ফলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে সমতলের বিভিন্ন জেলায়। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার বিঘা পাহাড় অনাবাদি থাকত, বর্তমানে সে পাহাড়গুলো সবুজে সবুজে ভরে আছে বিভিন্ন ফসলে। পাহাড় আবাদের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকেরা পাহাড়ে গরু, ছাগল, মহিষ লালন-পালন করে থাকে। পাহাড়ি এসব পশু বাজারে চাহিদাও প্রচুর, কারণ এসব পশু সম্পূর্ণ পাহাড়ের লতাপাতা এবং ঘাস খেয়েই লালিত পালিত হয়। ফলে এদের মাংস সাধারণত সুস্বাদু হয়।
এখানে প্রাকৃতিকভাবে পশু খামারের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এখনো পাহাড়ে অসংখ্য পাহাড় আছে, যেগুলোতে চাষাবাদ করা হয় না। এসব পাহাড়কে কাজে লাগানো গেলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হতে পারত। এসব অনাবাদি পাহাড় চাষাবাদ করে আবাদি করার জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এদের যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে পাহাড় বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে উঠবে। এ কথা ঠিক যে, একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তি বাহিনী’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কারণে সেখানে অশান্তি বিরাজ করেছিল। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর শান্তি বাহিনী অস্ত্রসহ সারেন্ডার করার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি নেমে আসে। তবে পাহাড়ে কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা মাঝে মাঝে পাহাড়কে বেশ অস্থির করে তোলে। ফলে সেখানে অনেক পর্যটকই যেতে ভয় পান। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর উচিত তাদের অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এবং বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা। আমরা প্রত্যাশা করব সরকার পার্বত্য অঞ্চলকে একটি সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক জোন গঠনে কার্যকরি পদক্ষেপ নেবে। এতে দেশের অর্থনীতিও বেগবান হবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়