বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে চায় মিসর : বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূূতের সাক্ষাৎ

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্র এমপিরা কী চান

পরের সংবাদ

চিকিৎসায় জনআস্থা ফিরে আসুক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার। রাষ্ট্রের কর্তব্য নাগরিকের সুচিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। চিকিৎসা খাতের জন্য সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা কর্মসূচি রয়েছে। প্রতিটি অর্থবছরে চিকিৎসা খাতের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এই অর্থের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, চিকিৎসক, নানা সরঞ্জামাদি ও ওষুধের পেছনে এসব অর্থ বাজেট থাকে। সরকারের ব্যাপক চিকিৎসা খাতে আন্তরিকতা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাগরিকের প্রতি সেবা প্রদানে তাদের আচার ব্যবহারের ওপর মোটেও জনগণ সন্তুষ্ট হতে পারে না। জনআস্থা সরকারি চিকিৎসকদের মাধ্যমে যেভাবে পাওয়ার কথা ছিল মূলত সেভাবে চিকিৎসা খাতে জনগণ আস্থা রাখতে পারছে না। এসব বিষয়ে রোগী কর্তৃক নানা ভোগান্তির সংবাদ প্রতিদিন জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, অনলাইনভিত্তিক প্রচার মাধ্যমে সংবাদ হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশের জনগণ এসব ভোগান্তির সংবাদ নিত্যদিন দেখছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরের মাধ্যমে জানা যায়, চট্টগ্রামে গত ২০ জানুয়ারি লাইসেন্সবিহীন ল্যাব প্রতিষ্ঠার অপরাধে ৪টি ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কয়েক মাস পূর্বে চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেলিভারির সময় একজন শিশু মৃত্যুবরণ করে। পরে শিশুর মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ দিন পর মাও চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। এ ধরনের অপচিকিৎসা প্রতিনিয়ত সারাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্রের হাতে নিয়ন্ত্রিত। কয়েক দিন পূর্বে দালাল চক্রের সদস্যকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নানা সময়ে রোগীর জন্য বরাদ্দ ওষুধপত্র পাচার হওয়ার সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে জনগণ জানতে পারে। এ ধরনের অভিযোগ অনিয়ম সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো করে যাচ্ছে।
চিকিৎসায় আস্থা পাচ্ছে না জনগণ। যাদের অর্থবিত্ত রয়েছে তারাই মূলত প্রাইভেট ডাক্তার ও ক্লিনিকের শরণাপন্ন হয়। আর যাদের অর্থবিত্ত নেই তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য শরণাপন্ন হয়। উপায় না দেখে রোগকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে দেশের দরিদ্র মানুষগুলো চিকিৎসার জন্য যায়। কিন্তু ডাক্তার কর্মচারীদের আচার ব্যবহার দেখলে মনে হয় হাসপাতাল ও চিকিৎসার মালিক তারা। রোগীদের সঙ্গে সৌজন্য কোনো ভালো আচরণ মোটেও প্রতিষ্ঠান থেকে পায় না। একজন রোগীর পেছনে ডাক্তারের যেটুকু সময় দেয়ার কথা সেখানে মনে হয় ২ মিনিটও সময় পায় না একজন দুরারোগ্য রোগী। তাড়াহুড়া করে রোগীর সঙ্গে কথা না বলে প্রেসক্রিপশন করে থাকে। হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২৭ প্রকারের ওষুধ বরাদ্দ থাকলেও রোগীর জন্য প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, চুলকানির মলম ছাড়া আর কিছুই জুটে না। খাতায় নামটা এন্ট্রি করে রোগীকে বিদায় করে দিতে পারলেই ডাক্তার মুক্ত।
এভাবে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের অবস্থা ভেদে ল্যাব টেস্টের পরীক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের নির্দিষ্ট ল্যাবে এই পরীক্ষাগুলো করে ডাক্তারকে দেখাতে বলে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পরীক্ষার কোনো শেষ নেই। তবুও রোগীরা কোথায় যাবে? আস্থার ঠিকানা হাসপাতাল আর ডাক্তার ছাড়া যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ভালো হোক আর মন্দ হোক, সুস্থ-অসুস্থ যেই অবস্থার রোগী হোক না কেন, বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া লাগবে।
চিকিৎসায় হাজারো অনিয়ম ও দুর্নীতি। এসব বলে শেষ করা যাবে না। সরকারের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং চিকিৎসার জন্য যে বরাদ্দ সেই বরাদ্দ থেকে জনগণ যেন তাদের অধিকার ও চিকিৎসা যথাযথভাবে পায়। চট্টগ্রামের জনগণের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র হাসপাতাল আরো বৃদ্ধি করা দরকার। চট্টগ্রামে প্রায় ৮০ লাখ জনগণের বসবাস। এর বাইরেও শহরের আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য শহরে পাড়ি জমান। সেই আলোকে জনগণের চিকিৎসাকে আরো সহজ ও উন্নত করার জন্য চট্টগ্রামের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম এলাকাতে ৪টি সরকারি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এসব হাসপাতালে কমপক্ষে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরির জন্য জনগণ দাবি রাখে। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ঢাকার পর। সেই তুলনায় চট্টগ্রামের আধুনিক চিকিৎসা এখনো জনগণের হাতের নাগালের বাইরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে হয়। এতে দেশের মূল্যবান অর্থ বাইরে পাচার হয়। বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চরম পর্যায়ে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখতে হলে দেশের চিকিৎসা খাতকে জনবান্ধব ও জনগণের ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাইভেট হাসপাতাল গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওইসব প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা ফি, পরীক্ষা ফি, ল্যাব টেস্ট ফি সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় করতে না পারে সেই ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। সাংবিধানিক অধিকার জনগণের চিকিৎসাকে জনগণের কাছে পৌঁছাতে সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কতিপয় দুষ্ট ও রাষ্ট্র জনগণবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী ডাক্তারের যোগসাজশে সরকার চিকিৎসা খাতে সফলতা অর্জন করতে পারছে না। শহর থেকে গাঁ-গ্রাম পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তার কর্মচারীদের যথাসময়ে উপস্থিতি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

মাহমুদুল হক আনসারী : লেখক ও গবেষক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়