বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে চায় মিসর : বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূূতের সাক্ষাৎ

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্র এমপিরা কী চান

পরের সংবাদ

উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সোচ্চারতা প্রয়োজন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা ৪র্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫মবারের মতো বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে গত দেড় দশকে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে নবগঠিত সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পাশ্চাত্য দেশগুলোর ছিল ব্যাপক তৎপরতা। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের দৌড়ঝাঁপের পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টিতে এখন বাংলাদেশ। সেটা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছিল গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরব উপস্থিতিতে। এতে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করে। যেখানে দেখানো হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূমি বিশ্বের ২৫ শতাংশ ও সমুদ্র ৬৫ শতাংশ। এ অঞ্চলের জনসংখ্যা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বৈশ্বিক অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ, জিডিপির ৬০ শতাংশ ও ভোক্তা ৬০ শতাংশ। এ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন, ভারত, পাকিস্তান, জাপান ও কোরিয়াসহ এক ডজনেরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ আছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে হওয়ায় পরাশক্তিধর দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরাশক্তিধর দেশগুলো প্রত্যেকেই চায় বাংলাদেশকে তাদের নিজেদের বলয়ে রাখতে। কারণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে বঙ্গোপসাগরের ভূমিকা, ভূরাজনৈতিকভাবে বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন ভূরাজনীতির একটি ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠেছে।
বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের যেমন গুরুত্ব বেড়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশকেও ভবিষ্যতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে গত দেড় দশকে যে উন্নয়ন করেছে তা চোখে পড়ার মতো। এসব উন্নয়নের পেছনে বিদেশি সহায়তা রয়েছে। চীন, জাপান, রাশিয়া এবং ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করে থাকে। এ দেশগুলো বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে। ভবিষ্যতে যাতে আরো বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় সেজন্য বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতি কমাতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সৎ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে হবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আইনের শাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক উক্তি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’। সেই নীতি মেনেই বাংলাদেশকে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। রিজার্ভ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। আমাদের রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পোশাক খাত এবং রেমিট্যান্স। এ দুই খাতে কীভাবে আয় আরো বাড়ানো যায় সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। হুন্ডির তৎপরতা কমাতে হবে। কীভাবে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনা যায় সেজন্য চাই যথাযোগ্য ব্যবস্থাপনা এবং সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি। পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপ এবং আমেরিকা। সুতরাং সেসব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে যাতে তারা আমাদের থেকে আরো বেশি বেশি আমদানি করে এবং রপ্তানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। এতে রপ্তানি আয় বাড়বে অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন আরো বেশি সম্ভব হবে। আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য আধুনিক কৃষিব্যবস্থার ওপর নজর দিতে হবে; উৎপাদনমুখী হতে হবে, যাতে কৃষিপণ্যের আমদানি কমে। অর্থাৎ আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। মূল লক্ষ্যই হলো আমাদের উৎপাদন বাড়ানো, যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যায়।
সরকারের আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। মূল্যস্ফীতির মূলে বৈশ্বিক সমস্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমস্যাও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মধ্যে হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেট। বর্তমানে অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের দখলে পুরো বাজারব্যবস্থা। কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টির আগেই তারা নিজেরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অর্থাৎ পণ্য মজুত রেখে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে খেটেখাওয়া মানুষদের বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা এবং জীবনধারণ করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিন্ডিকেট নির্মূলে সরকারকে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে; জড়িতদের যথাযোগ্য শাস্তি প্রদান করতে হবে। আর ব্যবসায়ী মহল প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক হতে হবে; দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।

ফরহাদ হোসেন : শিক্ষার্থী, খিলগাঁও মডেল কলেজ, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়