দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : ৬ আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি প্রত্যাখ্যান সরকারের

আগের সংবাদ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পরের সংবাদ

একটু সহানুভূতি কি শীতার্তরা পেতে পারে না?

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাড় কাঁপানো শীত বেড়ে যাচ্ছে। কষ্টের শেষ নেই ছিন্নমূল, পথশিশু, বয়স্ক ও দরিদ্র মানুষের জনজীবনে। সামর্থ্যবান মানুষের জন্য শীতকাল আরামের হলেও দরিদ্র, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য হয়ে যাচ্ছে দুর্ভোগের। প্রকৃতির রূপবদলের পরিক্রমায় এরই মধ্যে কনকনে তীব্র শীত পড়ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও অসময়ে ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এবারের শীতের প্রকোপ বাড়ছে অনেক বেশি। কিন্তু শীতের প্রস্তুতিটাও নেই সবার মধ্যে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে উত্তরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের মানুষ। এ কাতার আরো দীর্ঘ হচ্ছে গ্রামগঞ্জের মানুষগুলোকে নিয়ে। দু’মুঠো অন্ন জোগাতে যাদের হিমশিম খেতে হয়, তাদের আবার শীতবস্ত্র কীভাবে মিলবে! হাড় কাঁপানো শীতের নির্মমতা থেকে বাঁচতে গ্রামগঞ্জ ও শহর-নগরে মানুষের আর্তনাদের হাহাকার যে কোনো মানুষেরই হৃদয়কাড়ে। উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে অধির অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হচ্ছে তাদের। একটু অন্তর্দৃষ্টির অনুভূতিতে দেখলে চোখে ভাসে কনকনে তীব্র শীতে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলো রাস্তায় বস্ত্রহীনভাবে শুয়ে আছে। শহরের ব্যস্ততম রাস্তায়, অলিগলিতে, ট্রেন ও বাস স্টেশনে গেলে দেখা মেলে পথশিশুদের আর্তনাদ। জীর্ণশীর্ণ শরীরে কেউ ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, কেউ বস্ত্রের জন্য, কেউবা এক বেলা পেটভরে খাবারের জন্য। এমন জনজীবনের দৃষ্টান্তগুলো পাতায় পাতায় গাঁথা হয়ে থাকে শীতকাব্যে। তাই তো কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘হে সূর্য- তুমি তো জানো আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব! সারারাত খরকুটো জ¦ালিয়ে, এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে, কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!’ হ্যাঁ, ঠিক তাই। শীতার্ত মানুষের জনজীবন এমনই। নি¤œাঞ্চল, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের জন্য সরকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতি বছর শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করে থাকে। কিন্তু সেটাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাই তো বলেছিলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সাড়ে সাত কোটি কম্বল, আমারটা কই?’ বর্তমান পরিস্থিতি এমনটাই হয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তৃণমূল পর্যায়ে সঠিকভাবে বণ্টন হয় না। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। আবার সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষ, প্রবাসী ও সমাজসেবক বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও কিছু আছে নামে মাত্র।
শীতে কি শুধু বস্ত্রহীনতার কষ্ট? শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। নিউমোনিয়া, জ¦র, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের মতো অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক মানুষও। তাই প্রয়োজন গরম কাপড় পরিধান করা ও পরিবারের সবার প্রতি যতœশীল হওয়া। চিকিৎসা বিভাগের প্রয়োজনে গ্রামগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে শীত মৌসুমের রোগের ওষুধ অধিক সরবরাহ করা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যেই নেমেছে প্রচণ্ড শীত। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসছে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলেও বিঘœ ঘটছে। তাই সর্বমহলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই শীতের কবলে কাঁপতে থাকা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। সবাই মানবতার দেয়াল গড়ে তুলি। যেখানে রাখতে পারি আমাদের পুরনো বা নতুন শীতের কাপড়গুলো। আমাদের সামান্য একটু মানবিকতা ও সাহায্য কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারে শীতার্তদের। তাদের মুখে কিঞ্চিত হাসি ফোটাতে আমরা এগিয়ে আসি যে যার অবস্থান থেকে। এছাড়া সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক নেতারা, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা জরুরি। তাই তো ভূপেন হাজারিকার ভাষায় বলতে হয়, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?’

জি বি এম রুবেল আহম্মেদ : মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়