মার্কিন চার সিনেটরের বিবৃতি : সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান

আগের সংবাদ

প্রাধান্য পাবে আর্থ-কূটনীতি

পরের সংবাদ

কনকনে শীতে কাঁপছে মানুষ বিপাকে দরিদ্র শ্রমজীবীরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : সারাদেশে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা- এই চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল সকালে কিশোরগঞ্জের নিকলী এবং চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণাগারে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তৃতীয় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে কনকনে শীতে কাঁপছে মানুষ। দিনে দেখা মিলছে না সূর্যের। শীতের কারণে অপ্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। এ অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে স্বাস্থ্য সচেতন না থাকলে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে বিশেষভাবে বয়স্ক ও শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও হার্টের জটিলতা তৈরি হওয়ার প্রবল শঙ্কা রয়েছে। ফলে অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়া এবং মোটা পোশাক পরিধান, গরম খাবার খাওয়া ও পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কাগজ প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী : উত্তরের জেলা রাজশাহী কনকনে শীতে কাঁপছে। গতকাল শুক্রবার দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। শীতের প্রকোপের কারণে সন্ধ্যা গড়ালেই ঘরমুখো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মহাসড়কে কমে আসছে যান চলাচল।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টায় রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন জেলায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে রোদের দেখা মেলেনি। হু হু করে বয়ে যায় হিমালয় ছুঁয়ে আসা কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি।
কনকনে শীতে বিশেষভাবে বিপাকে পড়ছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে খেটেখাওয়া মানুষের জীবন। সন্ধ্যার পর কমে আসছে যান চলাচল। পথে-প্রান্তরে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষদের কষ্ট বেড়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) কামাল উদ্দিন বলেন, এখনো রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। শুক্রবার রোদ না থাকায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভব হয়েছে।
রংপুর : ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে রংপুরসহ উত্তরের মানুষ। সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে রংপুর অঞ্চলে। গত চারদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি এ অঞ্চলে। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়া কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে প্রকৃতি। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তুষারপাতের মতো কুয়াশার ঝাপটা এসে চোখেমুখে পড়েছে। কনকনে শীতে অনেকটাই বিপর্যস্ত জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি। গতকাল শুক্রবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষও কাবু হয়ে পড়েছে। গতকাল দিনের বেলাতেও নগরীতে লোকজনের আনাগোনা ছিল কম। নগরীর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও কেনাবেচা ছিল একেবারে কম। কুয়াশার কারণে রাস্তায় যানবাহনের চলাচল ছিল সীমিত। সড়ক-মহাসড়কের গাড়িগুলোকে হেডলাইট, ফগলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। এদিকে শীত নিবারণ করতে আগুন পোহাতে গিয়ে বাড়ছে দগ্ধ রোগী। গতকাল পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৪৭ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি থাকার খবর পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু জেলার মানুষ। দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। প্রতিদিনই নামছে তাপমাত্রা। গতকাল ১৩ ডিগ্রির তাপমাত্রা নেমে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুপুরের আগে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার তীব্রতার ফলে, দূরের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। দূর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ঘন কুয়াশা তার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। এতে কষ্টে আছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না। তার পরও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ঠাণ্ডায় দেখা দিয়েছে শীতজনিত নানান রোগ। হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।
মেহেরপুর : দুদিন ধরে শৈতপ্রবাহে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি গতকাল শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। খড়খুটো পুড়িয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন তারা। নি¤œবিত্তরা ভিড় করেছন ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে রিকশা-ভ্যান চালক ও শ্রমিকরা। হাড়কাপানো শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে রাস্তায় নেমেছেন তারা। তবে প্রচণ্ড শীতে লোকজন বাইরে বের না হওয়ায় ভাড়াও পাচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২-৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
ট্রাকচালক তুহিন আলী বলেন, ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। হেড লাইট জ¦ালিয়েও সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। সবজির ভাড়া ছিল, সেটি বাতিল করতে হয়েছে। এদিকে তীব্র ঠাণ্ডায় আবহাওয়া জনিত নানান অসুখ দেখা দিয়েছে। সদর হাসপাতালে ৭০ ভাগ রোগীই ঠণ্ডা জনিত।
বরিশাল : ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো শীত উপেক্ষা করেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বয়োবৃদ্ধরা। হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অপরদিকে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অফিস বলছে, দুই-একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে দু’দিন পরেই এ অঞ্চলে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান তারা। আবহাওয়া বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় বরিশালে তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা মৌসুমের সর্বনিম্ন। ফলে শুক্রবার সকাল থেকে অনেককেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। শুক্রবার সকালে বরিশাল বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডাজনিত রোগব্যাধী বৃদ্ধির আশঙ্কাকেও বাড়িয়ে তুলছে। এদিকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৬ শয্যার বিপরীতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিল আড়াই শতাধিক শিশু। বর্হিবিভাগেও চিকিৎসা নিয়েছে ২ শতাধিক শিশু। তাদের বেশিরভাগই গ্রামের। রোগীর চাপ থাকলেও তাদের সুষ্ঠু চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। এদিকে চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে বোরো ধান, গোল আলু ও শীতকালীন সবজির ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।
কমলনগর (ল²ীপুর) : তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশায় মেঘনা উপকূলীয় ল²ীপুরের কমলনগর উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দুইদিন ধরে কনকনে শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী এলাকার মানুষরা। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।
শীতের প্রভাবে উপজেলার চরকালকিনি, তালতলি, কাদিরপণ্ডিতের হাট, চরফলকন ও দক্ষিণ চরফলকনসহ বিভিন্ন এলাকার নদীভাঙা অসহায় মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষরা কাজে যেতে না পেরে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। শীতবস্ত্রের অভাবে বিভিন্ন বেড়িবাঁধের উপর আশ্রিত ছিন্নমূল মানুষরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এদিকে, শীতের তীব্রতার কারণে উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বর ও নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত নানান রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এসব রোগে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বোয়ালিয়া এলাকার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গত বৃহস্পতিবার শীতজনিত রোগে আক্রান্ত অন্তত ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়